কাজী নজরুল ইসলামের লেখা গান ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ হিন্দি ছবি ‘পিপ্পা’র জন্য রিমেক করে তীব্র সমালোচনার মুখে অস্কারজয়ী এ আর রহমান। দুই বাংলার সংগীত বোদ্ধা থেকে সাধারণ শ্রোতাদর্শকও গানটি নিয়ে রহমানকে তুলোধুনো করছেন! তারই প্রেক্ষিতে সোমবার বিকেলে আত্মপক্ষ সমর্থন করে বিবৃতি দেয় ‘পিপ্পা’র পরিচালক ও প্রযোজকরা।
যেখানে তারা দাবি করেছেন, নজরুল পরিবারের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েই গানটি নতুন আয়োজনে তৈরী করেছেন তারা। আইনি প্রক্রিয়ায় তারা স্বচ্ছ থেকেই ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ তৈরী করেছেন।
এমন বিবৃতির পর নতুন মোড় নিয়েছে সমালোচনা। বাংলাদেশ ও ভারতের নজরুল গবেষক থেকে শিল্পীরা প্রশ্ন তুলছেন,নজরুলের গানের সুর বিকৃতির অধিকার পয়সা দিয়ে কেনা সম্ভব?
নজরুলের গানটিকে ঘিরে যে সমালোচনার ঝড় উঠেছে, এ বিষয়ে পিপ্পা সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, “এই গানকে নিয়ে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সেখানে প্রযোজক, পরিচালক এবং সংগীত পরিচালক হিসেবে আমরা নজরুল পরিবারের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় স্বত্ব নেওয়ার পরেই শিল্পের খাতিরে গানটিকে তৈরি করেছি।”
বিবৃতিতে আরো লেখা হয়েছে, ‘‘নজরুল ইসলাম এবং তার সৃষ্টির প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা রয়েছে।’’ এরই সঙ্গে নজরুল-কন্যা কল্যাণী কাজী এবং তার পুত্র কাজী অনির্বাণের থেকে যাবতীয় নিয়ম মেনে যে এই গানের স্বত্ব নেওয়া হয়েছিল বলেও বিবৃতি উল্লেখ আছে। সেখানে জানানো হয়,‘‘গানটির ঐতিহাসিক তাৎপর্যকে শ্রদ্ধা জানানোই আমাদের উদ্দেশ্য ছিল। গানের কথা ব্যবহার এবং সুরের পরিবর্তন চুক্তি অনুযায়ী করা হয়েছে।’’
সব শেষে ওই বিবৃতিতে লেখা হয়, ‘‘আমরা মূল গানটিকে ঘিরে শ্রোতাদের আবেগকে সম্মান করি। শিল্প যেহেতু ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গির উপর নির্ভরশীল, সেখানে আমাদের পদক্ষেপ যদি কারও আবেগে আঘাত করে থাকে, তার জন্য আমরা ক্ষমাপ্রার্থী।’’
বিবৃতি দিয়ে সংশ্লিষ্টরা যেভাবে ক্ষমা চাইলেন, এই পদ্ধতির সমালোচনা করছেন দুই বাংলার গুণীজনেরা। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক গীতিয়ারা নাসরিন ‘পিপ্পা’র বিবৃতি শেয়ার করে লিখেছেন,“পিপ্পা টিম বলছেন যে, তারা তাদের চুক্তির শর্তাবলী মেনেই ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ গানটির নতুন রূপ দিছেন, যা তাদের ‘আন্তরিক শিল্পিত ব্যাখ্যা’। আর্ট হইলো গিয়া একটা সাবজেক্টটিভ ব্যাপার, সুতরাং এই নিয়া কেউ মাইন্ড খাইলে বা কারো অনুভূতি আঘাতপ্রাপ্ত হইলে, তারা সরি। এইটারে যারা ‘ক্ষমাপ্রার্থনা’ মনে করতেছেন/খবর বানাইতেছেন, আমি তাদের জন্য সরি।”
এমন বিবৃতির পর নতুন করে প্রশ্ন উঠছে, যিনি নজরুলের সুরকে বিকৃত করলেন, সেই এ আর রহমান কেন এখনো এ বিষয়ে মুখ খুলছেন না? তিনি কেন চুপ করে আছেন? নজরুলের মতো লেখকের কালজয়ী গানের সুর বিকৃতির দায়ে জবাবদিহিতার কাঠগড়ায় তাকেও দেখতে চাইছেন দুই বাংলার নজরুল শুভাকাঙ্খিরা। সেই সঙ্গ নতুন আয়োজনে করা ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ গানটিও সব প্লাটফর্ম থেকে সরিয়ে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।