বাংলাদেশে অবস্থান করছেন ১০ থেকে ১২ হাজার চীনা নাগরিক। তাদের অনেকে অবৈধভাবে বসবাস করছেন। বাংলাদেশে অবস্থান করা এই চাইনিজদের অনেকে পেতেছেন বিভিন্ন প্রতারণার ফাঁদ।
বাংলাদেশী যেসব শিক্ষার্থীরা চীনে পড়তে যান, তাদেরকে নিয়ে প্রতারণার এই চক্র গড়ে তুলছেন সেইসব চীনা নাগরিকদের একটি অংশ। তারা বিভিন্ন অ্যাপস্ খুলে, জুয়ার সাইট চালিয়ে এবং অনলাইনে মাল্টিলেভেল মার্কেটিংয়ের লোভে ফেলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
চীনে পড়তে গিয়ে প্রতারক চক্রের খপ্পড়ে পড়ে প্রতারণায় জড়ানো তিন বাংলাদেশী শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তারের পর এমন তথ্য জানিয়েছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
গ্রেপ্তাররা হলেন- রাকিবুল ইসলাম রাতুল (২৪), আসাদুজ্জামান রাজু (২৯) ও মামুন হাওলাদার (২৭)।
শুক্রবার (১৫ মার্চ) বিমানবন্দর থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে ডিবি সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগের ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম।
ডিবি জানায়, ইতোপূর্বে অ্যামাজন, দারাজ, ফ্লিপকার্ট, পিকাবো ডট কমের নামে ভুয়া সাইট খুলে কোটি কোটি টাকা নেওয়া চক্রের দুই চাইনিজ নাগরিকসহ ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তার তদন্ত করতে গিয়ে নতুন করে এই চক্রের সন্ধান মেলে।
গ্রেপ্তার তিনজন জানিয়েছেন, অনলাইনে মাল্টি লেভেল মার্কেটিংয়ের লোভে ফেলে অ্যাপ খুলে জুয়ার সাইট চালিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া চক্রে জড়িয়েছিলেন তারা।
শনিবার (১৬ মার্চ) রাজধানীর মিন্টু রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা জানান ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে অনেক শিক্ষার্থী পড়াশোনার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যায়। তার মধ্যে বৃহৎ অংশ চায়নাতে মেডিকেল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার জন্য যায়। তাদের একটা বড় অংশ চাইনিজ ভাষায় পারদর্শী হয়ে উঠে এবং চাইনিজ বিভিন্ন প্রতারক চক্রের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলে।
এ চক্রের মূলহোতা হচ্ছে চীনা নাগরিকরা। তারা ভাল বাংলা বা ইংরেজি বলতে পারেন না। তখন চীনে পড়তে চাওয়া বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে। তারা চাইনিজ ভাষায় পারদর্শী বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের দিয়ে বিভিন্ন প্রতারণার কাজটি করে আসছে।
তিনি বলেন, অনলাইনে মাল্টি লেভেল মার্কেটিংয়ের লোভে ফেলে, অ্যাপ ও জুয়ার সাইট খুলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চীনা নাগরিকরা। কারণ প্রত্যেকটি প্রতারণার সাইটের এডমিন চীনে।
চক্রটি চীনেও এসব প্রতারণায় বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের কাজে লাগায়। আবার কিছু শিক্ষার্থীর সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলে প্রতারণা শিখিয়ে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়। এরপর সেসব শিক্ষার্থীরা বেনামি সিম সংগ্রহ করে বিকাশ নগদসহ ব্যাংক একাউন্ট খুলে নেয়।
এ প্রতারণার মূল পরিকল্পনাকারী দুই চাইনিজ গাগা ও চিং চং। তারা প্রতারণার জন্য চীনে একটি সার্ভার স্থাপন করেছে। আর সেসব প্রতারণার টাকা ক্রিপ্টো কারেন্সির মাধ্যমে তাদের দেশে নিয়ে যাচ্ছে।
গ্রেপ্তার তিন শিক্ষার্থীর বিষয়ে ডিবি প্রধান বলেন, গ্রেপ্তার রাতুল, রাজু, মামুন বাংলাদেশ থেকে পড়ালেখার জন্য চীনে গিয়ে চাইনিজ ভাষা শিখে প্রতারক চক্রের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলে। এক পর্যায়ে চীনারা তাদেরকে বলে যে তারা কিছু অ্যাপস তৈরি করেছে। এসব অ্যাপস ব্যবহার করে অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করা সম্ভব।
তাদের সেই কার্যক্রমে কিছু বাংলাদেশী সিম, বিকাশ/নগদ একাউন্ট, ব্যাংক একাউন্টের প্রয়োজন। স্বল্প সময়ে অধিক উপার্জনের আশায় এই প্রতারণায় যুক্ত হয়ে চীনা নাগরিকদের বাংলাদেশী সিম বিকাশ/নগদ একাউন্ট, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সরবরাহ করে।
প্রতারণার প্রক্রিয়া সম্পর্কে হারুন বলেন, রাতুল, রাজু, মামুন অনলাইনে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং, অনলাইন ফিনান্সিং, বেটি সাইট, সি-ফাইন্যান্স, লোন অ্যাপস, হানিট্রাপে সরাসরি জড়িত। গ্রেপ্তাররা চাইনিজ প্রতারক চক্রের হয়ে বাংলাদেশী এজেন্ট হিসাবে কাজ করে আসছিল।
চক্রটি মানুষকে অনলাইনে টাকা উপার্জনের কিংবা পার্টটাইম চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়।