দেশে গত এক বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় গড়ে প্রতিদিন ১৭ জনের প্রাণহানি হয়েছে। গত ১০ বছরে সড়কে প্রতিদিন গড়ে মারা গেছেন ১৪ জন। এমনাবস্থায় ষষ্ঠবারের মতো সরকারি উদ্যোগে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস পালিত হলো আজ।
‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের জন্ম আজ থেকে ২৮ বছর আগে, ১৯৯৩ সালের ২২ অক্টোবর। চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন এক সড়ক দুর্ঘটনায় স্ত্রী জাহানারা কাঞ্চনকে হারিয়ে এ আন্দোলন গড়ে তোলেন।
২০১৭ সালের ৫ জুন মন্ত্রিসভার বৈঠকে ২২ অক্টোবরকে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস হিসাবে পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সেদিন থেকে দিবসটি জাতীয়ভাবে পালিত হয়ে আসছে।
জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘‘আইন মেনে সড়কে চলি-নিরাপদে ঘরে ফিরি’’।
দেশের বিভিন্ন স্থানে দিনভর নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস পালিত হয়েছে।
দিবসটি উপলক্ষে র্যালি ও আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, দুর্ঘটনা প্রতিরোধে যানবাহন মালিক, যানবাহনের চালক ও মালিক, যাত্রী ও পথচারীদের যার যার অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। কিশোর বাইকারদের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা, নিরাপদ পথচারী চলাচল নিশ্চিত করতে ফুটপাত দখলমুক্ত করা ও জেব্রা ক্রসিংয়ের ব্যবস্থা করা, শহরে ইজিবাইকের নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করা হবে।
শনিবার জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উপলক্ষে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আলোচনা সভায় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সড়কে বিশৃঙ্খলাকে বাস্তবতা বলে উল্লেখ করে বলেন: অস্বীকার করে লাভ নেই। আজ এত স্থাপনা সারা বাংলাদেশে, এত আন্ডার পাস, ওভার পাস, মেট্রোরেল, পদ্মাসেতু, টানেল সবই হচ্ছে, তারপরও শৃঙ্খলা কেন নেই?’
তিনি বলেন, ‘শৃঙ্খলা না থাকলে সাফল্য ম্লান হয়ে যাবে। উন্নয়নের অবকাঠামো, এত সাফল্য সব ম্লান হয়ে যাবে যদি আমরা সড়কের শৃঙ্খলা রক্ষা করতে না পারি।’
রাজধানীতে ‘আইন মেনে সড়কে চলি, নিরাপদে ঘরে ফিরি’ এমন প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে শনিবার (২২ অক্টোবর) দুপুরে দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরতে এক বিশেষ র্যালির আয়োজন করে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা পাথওয়ে।
র্যালির পর এক আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন: বিআরটিএর অনুমোদিত নির্দিষ্ট প্রশিক্ষকের প্রশিক্ষণ ছাড়াই নামমাত্র লার্নার লাইসেন্স ও ভুয়া সার্টিফিকেট সনদ দেখিয়ে লাখ লাখ অদক্ষ চালক, ১০ মিনিটের জিগজ্যাগ পরীক্ষা ১ মিনিটে শেষ করে পার পেয়ে যাচ্ছে পেশাদার-অপেশাদার সব পরীক্ষার্থী। ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষার এমন উদাসীনতাকে কোনভাবেই ছাড় দেওয়া ঠিক নয়।
শুধুমাত্র পেশাদার চালক নয়, ডোপ টেস্ট প্রয়োজন পেশাদার-অপেশাদার উভয়ের। কেননা সড়ক ব্যবহারে উভয়েই সমান এবং সড়ক দুর্ঘটনা উভয় পেশার চালকের মাধ্যমেই ঘটছে। তাই এখানে কোন একটিকে ছোট করে দেখলে হবে না। চালকের আসনে যেই বসেন না কেন! নিয়ম মেনে গাড়ি চালাতে হবে সবাইকে।
এর আগে দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাণীতে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, সড়ক নিরাপত্তা কার্যক্রম টেকসই করতে সংশ্লিষ্ট সকলকে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও সারাদেশে ‘জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস’ পালনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে প্রেসিডেন্ট বলেন, জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘আইন মেনে সড়কে চলি, নিরাপদে ঘরে ফিরি’ বর্তমান প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত সময়োপযোগী হয়েছে।
‘জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস’ উপলক্ষ্যে দেয়া এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ব্যাপকভাবে জনসচেতনতা সৃষ্টির ক্ষেত্রে সকলকে এগিয়ে আসার এবং ট্রাফিক আইন মেনে চলার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার সড়ক পরিবহন ব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নয়নের পাশাপাশি নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থা জোরদার করার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে। সড়ককে নিরাপদ করতে ডিভাইডার স্থাপন, বাঁক সরলীকরণ, সড়ক ৪-লেনে উন্নীতকরণ, মহাসড়কে চালকদের জন্য বিশ্রামাগার নির্মাণ ও গতি নিয়ন্ত্রক বসানোসহ নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। সড়ক পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা আনয়ন, দক্ষ চালক তৈরি এবং দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে টাস্কফোর্স গঠন করেছি। আধুনিক, প্রযুক্তি নির্ভর এবং টেকসই ও নিরাপদ মহাসড়ক নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করাই সরকারের লক্ষ্য।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা আমাদের সড়কগুলোকে নিরাপদ হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হব। তিনি জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উপলক্ষ্যে গৃহীত সকল কর্মসূচির সর্বাঙ্গীণ সফলতা প্রার্থনা করেন।