ইসলামাবাদে বাংলাদেশ হাইকমিশন যথাযথ মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সাথে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোকদিবস পালন করেছে।
মঙ্গলবার ১৫ আগস্ট এ উপলক্ষে দূতাবাসে দিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। হাইকমিশনের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারী এ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে যোগদানকারী সকলে কালো পোশাক পরিধান ও কালোব্যাজ ধারন করেন। সকালে সকলের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করেন পাকিস্তানে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. রুহুল আলম সিদ্দিকী। পরে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন হাইকমিশনার ও হাইকমিশনের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ।
এ সময় বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের শহিদ সদস্যদের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করে দূতালয় প্রাঙ্গনে স্থানীয় একটি মাদ্রাসার ১৫ জন হাফেজের অংশগ্রহণে পবিত্র কোরআন খতমের আয়োজন করা হয়।
হাইকমিশন দিবসটি উপলক্ষ্যে আলোচনা সভার আয়োজন করে। পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে আলোচনা সভার সূচনা হয়। এরপরে দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত বাণী পাঠ করা হয়। আলোচনা পর্বে বক্তাগণ বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান, জীবন ও কর্মের উল্লেখযোগ্য দিকগুলো তুলে ধরেন এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে নৃশংসভাবে হত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়ে গভীর শোক প্রকাশ করেন।
হাইকমিশনার মো. রুহুল আলম সিদ্দিকী তার বক্তব্যে শোকাবহ এই দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় তিনি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের শহীদগণের আত্মার শান্তি ও মাগফেরাত কামনা করেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাঙালি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা ও মহান স্বাধীনতার রূপকার। তার আপোষহীন বলিষ্ট নেতৃত্বে ভাষা আন্দোলন, সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলন, ৬৬ এর ৬ দফা, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান এবং ৭০ এর নির্বাচনসহ বাঙালির মুক্তি ও মৌলিক অধিকার আদায়ের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে চূড়ান্ত রূপ লাভ করে।
বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধে সম্পূর্ণভাবে বিধস্ত ও অর্থনীতিতে পশ্চাৎপদ বাংলাদেশের নেতৃত্ব গ্রহণ করে মাত্র সাড়ে তিন বছরে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুণর্বাসন ও পুণর্গঠনের কাজ সম্পন্ন করে দেশকে একটি দারিদ্র মুক্ত, শোষণ-বঞ্চনাহীন ‘সোনার বাংলা’ বিনির্মানের কাজ শুরু করেন। তিনি বৈরী বৈশ্বিক পরিবেশে, এ স্বল্প সময়ে ১১৬টি দেশের স্বীকৃতিসহ জাতিসংঘ জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন ও ইসলামী সম্মেলন সংস্থার সদস্যপদ লাভ করেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে প্রথমবার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার পর নির্বাসিত বঙ্গবন্ধুর নাম ফিরে আসে বাংলার ঘরে ঘরে। বর্বরোচিত এ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচারের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনীদের শাস্তি নিশ্চিতের মাধ্যমে একটি অন্ধকার অধ্যায় অতিক্রম করে বাংলাদেশ আইনের শাসনের আলোকিত জগতে ফিরে আসে।
সবশেষে, জাতীয় শোক দিবসে জাতির পিতাকে হারানোর শোককে শক্তিতে রূপান্তর এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্যে নিজ নিজ অবস্থানে থেকে সকলকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তার বক্তব্য শেষ করেন।
আলোচনা শেষে ১৫ আগস্টের শোকাবহ ঘটনার ওপর নির্মিত একটি প্রামাণ্য ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়। পরিশেষে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের শহীদ সদস্যদের রুহের মাগফেরাত এবং দেশ ও জাতির সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মুনাজাত ও কোরানখানী অনুষ্ঠিত হয়।