দক্ষিণ ভারতের কেরালা রাজ্যের একজন মুসলিম মহিলা তিনজন হিন্দু সন্তানকে লালন পালন করেছেন। এমন চমকপ্রদ সত্য ঘটনায় বিবিসি হিন্দি বিভাগ নির্মাণ করেছে চলচ্চিত্র।
বিবিসি জানিয়েছে, দক্ষিণ কেরালার এই মুসলিম মায়ের নাম থেন্নাদান সুবাইদা। গল্পের শুরু ১৯৭৬ সালে, আজ থেকে প্রায় ৪৭ বছর আগে। সুবাইদার বাড়িতে কাজ করতেন চাক্কি নামের একজন হিন্দু নারী, তিনি ছিলেন দুই মেয়ে এবং এক ছেলের জননী। চতুর্থ সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যান তিনি। চাক্কির মৃত্যুর পর সুবাইদা তার ছেলে শ্রীধরন এবং তার দুই বড় বোন রমণী এবং লীলাকে নিজের কাছে নিয়ে আসেন এবং নিজ সন্তানের মতই লালন পালন করেন।
সুবাইদার জাফরখান এবং শানাওয়াস নামের দুই জন পুত্র সন্তান ছিল, চার বছর পর তিনি জোশিনা নামের কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। প্রতিটি শিশুই সমান আদরে একসাথে বেড়ে ওঠে। এর মধ্যে জাফর খান এবং শ্রীধরন সমবয়সী দুই ভাই। তারা বলেন, সুবাইদা আইনত বাচ্চাদের দত্তক নেননি, কারণ তার চারপাশের আইন তখন এতটা কঠোর ছিল না। চাক্কির সন্তানদের যত্ন নেওয়ার মত তাদের কোন আত্মীয়স্বজন ছিল না। তাদের বাবা সুবাইদাকে অনুমতি দেন এই বলে যে, তিনি সন্তানদের যত্ন নিতে অক্ষম।
২০১৯ সালে মৃত্যুবরণ করেন সুবাইদা। তার মৃত্যুর পর ওমানে কর্মরত থাকা শ্রীধরন সুবাইদাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি আবেগঘন পোস্ট লেখেন এবং শেয়ার করেন। তিনি বলেন, সুবাইদা বা তার স্বামী আবদুল আজিজ হাজী কেউই তাদের দত্তক নেওয়া সন্তানদের ইসলাম গ্রহণ করতে বলেননি। পোস্টটি খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং সবার হৃদয়ে নাড়া দেয়।
৫১ বছর বয়সী লীলা জানান, তিনি যখনই চাইতেন তার মা তাকে মন্দিরে নিয়ে যেতেন। তখন পরিবহন সুবিধা ততটা উন্নত ছিল না, তাই তারা সাধারণত উৎসবের সময় কোন একটি দলের সাথে একসাথে যেতেন।
শ্রীধরন বলেন, “আমার মা সর্বদা বলতেন তুমি হিন্দু, ইসলাম বা খ্রিস্টান ধর্ম পালন কর, তাতে কিছু যায় আসে না। প্রতিটি ধর্মই আমাদের একই জিনিস শেখায়, সবাইকে ভালবাসতে এবং সম্মান করতে।”
পরিবারটির এমন সুন্দর একটি গল্প নিয়ে চলচিত্র নির্মাণের জন্য বিবিসি হিন্দির পক্ষ থেকে নির্মাতা ইমরান কোরেশী তাদের সাথে যোগাযোগ করেন এবং এই গল্পের উপর ভিত্তি করে চলচিত্র নির্মাণ করেন। এবছর ৯ জানুয়ারি কেরালার একটি প্রেক্ষাগৃহে ছবিটির একটি বিশেষ প্রদর্শনী ছিল। চলচিত্রটি এখন বাণিজ্যিক মুক্তির জন্য তহবিল সংগ্রহের চেষ্টা করছে। বিভিন্ন শহরে বসবাসকারী সুবাইদার সন্তানেরা জানান, চলচিত্রটি তাদের মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালবাসার মত।