দিনশেষে ফিল্মের গানগুলো বেঁচে থাকে: নাভেদ পারভেজ
যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সুরকার ও সংগীত পরিচালক নাভেদ পারভেজ। তিনি তার সুরের সাম্পানে ভাসিয়ে শ্রোতাদের মুগ্ধ করে যাচ্ছেন

যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সুরকার ও সংগীত পরিচালক নাভেদ পারভেজ। তিনি তার সুরের সাম্পানে ভাসিয়ে শ্রোতাদের মুগ্ধ করে যাচ্ছেন। নাভেদ মনে করেন, দর্শক শ্রোতাদের মোহময় সুরের ভুবনে নিয়ে যেতে পারাই তার কাজের আসল সার্থকতা। শুধু নাটক নয়, প্লেব্যাকের সুর-সংগীতের মূর্ছনায় নাভেদ মোহাবিষ্ট করছেন সবার। কিস্তিমাৎ, মুসাফির, অস্তিত্ব, সুপারহিরো, যদি একদিন, পরাণ এবং সর্বশেষ ‘লিডার আমিই বাংলাদেশ’- এসব ছবির গানে সংগীত পরিচালনায় করে আলোচনা তৈরি করেছেন এই তরুণ তুর্কি। নিউ ইয়র্ক থেকে নাভেদ কথা বলেছেন চ্যানেল আই অনলাইনের সাথে…
এখন পর্যন্ত কতগুলোতে নাটক-সিনেমা মিউজিক করেছেন?
সব নাম বলা মুশকিল! মনে করতে টাইম লাগবে। তবে ১৫টির মতো সিনেমায় কাজ করা হয়েছে। প্রায় প্রতিটি সিনেমার আমার মিউজিকে কোনো না কোনো গান দর্শক পছন্দ করেছেন। গত বছর ‘পরাণ’ ছবিতে জনি হকের লেখা ‘চল নিরালায়’, গত ঈদে ‘লিডার’-এ জাহিদ আকবরের লেখা ‘সুরমা সুরমা’ গান দুটি জনপ্রিয় হয়েছে। ৬০টির বেশি নাটকে কাজ হয়েছে। বেশীরভাগ কাজ মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজের। নাটকে সবচেয়ে বেশি রেসপন্স আসে ‘অ্যাপয়েন্ট লেটার’ নাটকে মাহমুদ মানজুরের লেখা ‘ফেরাতে পারিনি’ গানটিতে। আরও বহু গান আছে, যা দর্শকরা পছন্দ করেছেন।
‘পরাণ’ এবং ‘লিডার আমিই বাংলাদেশ’ ব্যাক টু ব্যাক দুটি সুপারহিট ছবির দুটি জনপ্রিয় গানই আপনার। কেমন লাগে ভাবতে?
পরাণ’র ‘চল নিরালায়’ গানটি শুরুতে রেসপন্স তুলনামূলক কম ছিল। পরে কিছু কনটেন্ট ক্রিয়েটর গান দিয়ে টিকটক করেন। ছবি রিলিজের সাথে সাথে গানটি চারদিকে বেশি ছড়িয়ে পড়ে। ‘লিডার’র ‘সুরমা সুরমা’ গান নিয়ে শুরুতে ভয়ে ছিলাম। রিলিজের পর দর্শকশ্রোতারা দেখবে কিনা! কারণ আগেই গানের ফুটেজ পাইরেসি হয়। কিন্তু যখন রিলিজ হলো তখন দেশে গিয়ে দেখেছি রেস্টুরেন্ট, রাস্তাঘাট প্রত্যেকের ফোনের প্লে লিস্ট সবখানে ‘সুরমা সুরমা’। শাকিবিয়ান যারা আছেন তারাও আমার পেইজে ভালো সাড়া দিয়েছেন। অন্য কোনো নায়কের গান করে এই আমার পেইজে এই রেসপন্স পাইনি। শাকিব খানের স্টারডমের কারণে এটা সম্ভব হয়েছে।
সিনেমায় আপনার করা মিউজিকে কোনো না কোনো গান দর্শকরা পছন্দ করছেন। এর কারণটা আসলে কী?
গান নিয়ে কাজ শুরুর আগে পরিচালকের সঙ্গে আন্ডারস্ট্যান্ডিং হতে হয়। তখন বোঝার চেষ্টা করি কোন ধাঁচের গান তিনি চান বা পছন্দ করেন। পরিচালকের সঙ্গে আলোচনা করি গল্পে কোন পরিস্থিতিতে গানটি ব্যবহার হবে। একইভাবে শিল্পীদের সঙ্গে আন্ডারস্ট্যান্ডিং হতে হয়। সেখানে আমিও আমার ক্রিয়েটিভ দিক কাজে লাগাই। এভাবে প্রাইমারি ড্রাফট বানাই। সেটা শুরুতে ভালো লাগলে থেকে যায়। যেমন ‘সুরমা সুরমা’ গানটি একবারেই পরিচালক তপু খানের ভালো লেগে যায়।

সিনেমায় গান নিয়ে উন্মাদনা সবসময়! বলা হয়, গান হিট মানেই সিনেমা হিট…
গান বলিউডকে রিপ্রেজেন্ট করে। কিন্তু আমাদের দেশে এত ভালো ভালো শিল্পী ও কম্পোজার আছেন কিন্তু গান সেভাবে হচ্ছে না। কারণ ফিল্ম কম হচ্ছে। দিনশেষে ফিল্মের গান বেঁচে থাকে। সেই সত্য সাহা, খান আতাউ, আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল, আলাউদ্দিন আলীদের সময়ের গানগুলো আজও সবাই শুনছেন। বহু নাটকে গান করেছি। কিন্তু এত কাজের মধ্যে বলতে গেলে নাটকে একটি গান (ফেরাতে পারিনি) সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। অন্যদিকে যদি ১০টি ফিল্মে কাজ করে থাকি এরমধ্যে ৭টি ফিল্মের গান জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এই গান দিয়েই ফিল্মের হাইপ তৈরি হয়েছে। অডিও ইন্ডাস্ট্রি ধ্বসের পথে, কোনো লেভেল কোম্পানি বিনিয়োগ করছে না। কিন্তু বলিউডের এত লেভেল কোম্পানি সবাই ফিল্মে বিনিয়োগ করছে।
গান ভাইরাল করতে হবে এমন কোনো চাপ বা চিন্তাভাবনা থাকে?
এই চাপ বা চিন্তাভাবনা কখনও করি না। যেটা ভাইরাল হয় সেটা কদিন পর হারিয়ে যায়। তাছাড়া কেউ আগে থেকে গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারবে না যে কোন গান রিলিজের পর হিট করবে। এমন অনেক কাজ আছে প্রচুর অ্যাফোর্ড দিয়ে করেছি কিন্তু রিলিজের পর গানটি সেভাবে ক্লিক করেনি। আবার ৯ বছর আগে করেছি এমন গান আছে যা করোনাকালে মানুষ ঘরে বসে প্রচুর শুনেছে এবং ভিডিও বানিয়েছে। আমি সবচেয়ে চিন্তা করি, আজ যে গানটি করছি ৫-১০ বছর পর মানুষ এই গানটি শুনবে কিনা বা কী কারণে এ গান শুনবে?
মিউজিশিয়ান হলেন কাদের অনুপ্রেরণায়?
২০১৫ সালের দিকে ফুয়াদ আল মুক্তাদির এবং হাবিব ওয়াহিদ ভাইদের দেখে মিউজিশিয়ান হওয়ার ইচ্ছে হয়। তাদের ‘বন্য’ এবং ‘শোনো’ অ্যালবাম শুনে অনুভব হয় এমন ভিন্নভাবে মিউজিক করবো। সেখান থেকে মিউজিক নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করি। আলাদা ফ্যাসিনেশন তৈরি হয়। আস্তে আস্তে মিউজিকে কাজ শুরু হয়। আমি অসাধারণ কিংবা ট্যালেন্টেড মিউজিক কম্পোজার নই, তবে ম্যাজিক জানি। দর্শকদের পালস বুঝি।
জীবনে কাদের নিয়ে একটি হলেও আপনার মিউজিকে গান গাওয়াতে চান?
দেশের মধ্যে রকস্টার জেমস, ফিমেল সিঙ্গার সাবিনা ইয়াসমিন, রুনা লায়লা, হাবিব ওয়াহিদ। উপমহাদেশের মধ্যে অরিজিৎ সিং, সনু নিগাম। পশ্চিমা বিশ্বে সাকিরা, জেনিফার লোপেজ, রিকি মার্টিন, ব্যাকস্ট্রিট বয়েজ।