ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে নিজেকে উপস্থাপনে জুড়ি নেই মুশফিক ফারহানের। দর্শকদের কাছে, সব চরিত্রেই যেন তিনি পারফেক্ট! গত ঈদে ছয়টি নাটক করেছিলেন। তিনটি ছিল ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে। আলোচিত হয়েছে তার অভিনীত বান্নাহর ‘মধ্যবিত্ত বলছি’, মহিদুল মহিম ‘দরদ’ এবং মাহমুদ মাহিনের ‘শাদী মোবারক’। কাজগুলো দিয়ে বাহবা কুড়িয়েছেন আরজে থেকে অভিনয়ে এসে জনপ্রিয়তা পাওয়া মুশফিক ফারহান।
সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে ফিরেছেন তিনি। ফারহান কথা বলেছেন চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে…
অস্ট্রেলিয়াতে গিয়েছিল কেন?
কয়েকটি নাটকের শুটিং করেছি। সেইসাথে সিডনিতে ঘুরেছি। সেখানকার মানুষের আতিথেয়তা আমাকে মুগ্ধ করেছে। খাওয়াদাওয়া করা হয়েছে বেশি। সবমিলিয়ে ২২ দিন ছিলাম। এ কারণে ফিটনেস ঠিক নেই। দেশে ফিরে ফিটনেস ঠিক করছি। ১৭ আগস্ট থেকে আবার শুটিং আরম্ভ।
ঈদে আপনার ‘একজন মধ্যবিত্ত বলছি’, ‘দরদ’, ‘শাদী মোবারক’, ‘ডিয়ার লাভ’ কাজগুলো আলোচনায় ছিল…
হ্যাঁ, টানা পাঁচ দিন আমার তিনটি নাটক ট্রেন্ডিং-এ ছিল। আমার জায়গা থেকে চেষ্টা করেছি ভিন্ন ভিন্ন কাজ করতে। ‘মধ্যবিত্ত বলছি’ কাজটা মানুষ বেশি রিলেট করতে পেরেছে। ‘শাদী মোবারক’ নতুন কাপলের রোমান্টিক ব্যাপারের কারণে মানুষ পছন্দ করেছে। ‘ডিয়ার লাভ’ ছিল কমার্শিয়াল এবং ‘দরদ’ নাটকের জন্য একটু বেশি কষ্ট করতে হয়েছে। শুধু আমি নই, টিমের সবাই বাড়তি খেটেছে। ছয়টি কাজ আলাদাভাবে সাড়া পেয়েছি।
আপনাকে এখন মোশাররফ করিম, অপূর্ব, নিশো, তৌসিফদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে। কাজের সময় চাপ অনুভব করেন?
একজন শিল্পী যখন অনুভব করবে তার অবস্থান এই জায়গায়, প্রতিযোগী উমুক- তখনই তার কাজ খারাপ হয়ে যাবে। সে কারণে এসব মাথায় রাখি না। শিল্পীকে ফুল অব ফ্রিডম নিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় কাজ করা উচিত। অপূর্ব ভাই, নিশো ভাইদেরয়ের নাটক দেখে মিডিয়াতে এসেছি। কখনোই তাদের প্রতিযোগী হতে চাই না। তাদের কাজ যেমনই হোক উপরে থাকুক এটা আমার চাওয়া। আমার মনে হয়, অবস্থান চিন্তা করে কাজ করলে প্রেসার কাজ করে। ক্রিয়েটিভ কাজে প্রেসার থাকলে ভালো ফিডব্যাক দেয়া সম্ভব না। অনেকেই বলে শুধু ভালো গল্প ও স্ক্রিপ্টে কাজ করতে। কিন্তু ভালো গল্পের সঙ্গে ভালো নির্মাণ, অভিনয় থেকে সম্পাদনা, মিউজিক এবং ভালো লাইট পর্যন্ত দরকার। সবসময় ভালো কাজের চেষ্টা করি। প্রতিটি কাজ পারফেক্ট করতে হবে এই চিন্তা মাথায় এলে ভাবনা চিন্তায় ভয় ঢুকে যাবে। উত্থান পতন থাকবে, দিনশেষে এটাই সত্যি সবার সবকিছু সবসময় পারফেক্ট হয় না।

গল্প নির্বাচন কিংবা শুটিং করার সময় প্রচারের পর নাটকে ভিউয়ে এগিয়ে থাকতে হবে এমন কোনো চাপ থাকে?
আমার কাজে কখনো এই চাপ দেয়া হয় না। কিন্তু একজন প্রযোজক বাঁচলে পরিচালক বাঁচবে, পরিচালক বাঁচলে শিল্পী বাঁচবে। শিল্পী বাঁচলে টেনকিশিয়ান্স ও ইন্ডাস্ট্রি বাঁচবে। একটি ভিউ মানে একজন দর্শক। ভিউ বাদ দিয়ে আমি তো সেই দর্শককে ফেলে দিতে পারি না। তাছাড়া পাঁচ কিংবা আট লাখে যখন কোনো প্রযোজক বিনিয়োগ করবে তখন ভিউয়ের উপর একটা প্রফিট আসে। আবার শুধু ভিউ চিন্তা করা যাবে না। কারণ ইউটিউবে অনেক ভালগার কনটেন্টে ভিউ বেশি থাকে। মানে কোনো কিছু একপাক্ষিক ভাবা যাবে না। কাজের মানের সঙ্গে সবকিছুর সমন্বয় দরকার।
আপনাকে নিয়ে নিশ্চয় অনেক পরিচালক কাজ করতে চান। সবার সঙ্গে তো আর সম্ভব নয়। ‘না বলাটা’ ব্যালেন্স করেন কীভাবে?
একজন পরিচালকের সঙ্গে শিল্পীর বোঝাপড়া ভালো হলে ভালো কাজ চলে আসে। এটা খুবই জরুরী। আমি তাদের সঙ্গে বেশি কাজ করি যাদের সঙ্গে আমার এই বোঝাপড়ার জায়গাটা ভালো। আর আমার জন্য কাউকে না বলাটা খুবই কঠিন। বিশেষ করে নতুন অনেক পরিচালক ও কো-আর্টিস্টদের সঙ্গে কাজ করেছি। কারণ, নতুন থাকাকালীন অবস্থা কেমন থাকে সেই সিঁড়ি বেঁয়ে আমি এখানে এসেছি। তবে হ্যাঁ, প্রতিদিনই আমাকে অনেককিছু ডিল করতে হয়। দিনশেষে কাজটা খারাপ হলে প্রথম ধাক্কাটা লাগে শিল্পীর। তবে গল্প ও টিমের সবকিছু শুনেবুঝে যখন ভিতর থেকে স্পিড পাই তখনই বলি লেটস ডু ইট। তবে আমি আসলে কাজের ক্ষেত্রে অনুরোধের ঢেঁকি গিলতে চাই না।
শুটিং না থাকলে সেই সময়টা কীভাবে কাটান?
আমি ভীষণ হোমসিক ব্যক্তি। বাসায় থাকতে পছন্দ করি। আম্মা ও বোনকে সময় দেই। হয়তো একটু চা খেয়ে বের হই কিংবা মিটিংয়ে যাই। মাঝেমাঝে নতুন চরিত্র পেলে সেই চরিত্রের মানুষটা কেমন হয় দেখতে বের হই। একটা উদাহরণ দেই, ‘পাগল তোর জন্য’ নাটকে লেগুনা ড্রাইভারের চরিত্র করি। ওটা আমার জন্য একেবারে নতুন ছিল। লেগুনা ড্রাইভার কেমন হয় দেখার জন্য দুদিন লেগুনা স্ট্যান্ডে গিয়েছিলাম। এই তো এভাবেই চলে যায়…!