খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় জড়িত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রকাশ্য দিবালোকে যে হত্যাকাণ্ড হয়েছে তার রায় দ্রুত কার্যকর করা উচিত। মুচলেকা দিয়ে যারা দেশের বাইরে চলে গেছে, দেশে ফিরলে জনগণ তাদের ছাড়বে না।
আজ (সোমবার) সকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের নিহতদের স্মরণে আয়োজিত আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আর্জেস গ্রেনেড যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। সেটা ব্যবহার হলো আওয়ামী লীগের ওপর। সেটা ব্যবহার হলো যখন আমরা মানুষের নিরাপত্তার জন্য সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছি। একটা-দুইটা না, ১৩টা গ্রেনেড। আর কত যে তাদের হাতে ছিল কে জানে? সেদিন বেঁচে গেলাম সেটাই অবাক বিস্ময়।
পঁচাত্তর পরবর্তীতে বাংলাদেশের ইতিহাসে নৃশংস ও কলঙ্কিত এক হত্যাকাণ্ড ২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলা। ২০০৪ সালের এই দিনে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় আইভি রহমানসহ ২২ জন নেতাকর্মী প্রাণ হারায়। বিভীষিকাময় ওই হামলার দুঃসহ স্মৃতি আর স্প্রিন্টার বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছেন হাজার হাজার নেতাকর্মী। শারিরীক ও মানসিক যন্ত্রণা যাদের নিত্যসঙ্গী।
ওই ঘটনায় আহতদের খোঁজখবর নিয়ে তাদের প্রতি সমবেদনা জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমান থেকে শুরু করে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান সবাই পরিকল্পিতভাবে দেশে হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে।
সেই দিনের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমি কেবল বক্তব্য শেষ করেছি, নিচে নামবো, তখন ফটোগ্রাফার গোর্কি আমাকে বলল- আপা একটু দাঁড়ান আমি ছবি নিতে পারিনি। সাথে সাথে অন্য ফটোগ্রাফাররা বললো আপা একটু দাঁড়ান, কয়েক সেকেন্ডের ব্যাপার। সাথে সাথে শুরু হয়ে গেল গ্রেনেড হামলা। হানিফ ভাই আমার পাশে ছিল, সাথে সাথে তিনি টেনে বসিয়ে দিলেন। আমাকে চারদিক থেকে ঘিরে ধরল।
তিনি বলেন, যেসব গ্রেনেড ছোড়া হলো, সেগুলো ট্রাকের ওপরে না পড়ে ট্রাকের ডালার সাথে বাড়ি খেয়ে নিচে পড়ে যায়। সমস্ত স্প্লিন্টার হানিফ ভাইয়ের মাথায়। তার সমস্ত শরীর বেয়ে রক্ত আমার কাপড়ে এসে পড়েছে। প্রথমে তিনটা, তারপর একটু বিরতি দিয়ে আবার একটার পর একটা গ্রেনেড মারতে শুরু করল। আমাদের হাজার হাজার নেতা-কর্মী সেখানে উপস্থিত, আইভি রহমান মহিলাদের নিয়ে নিচেই ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের আরেক কর্মী সেন্টুসহ ২২ জন মৃত্যুবরণ করেন। হাজারের কাছাকাছি নেতাকর্মী আহত হয়। ৫০০ জনের ওপরে অত্যন্ত খারাপ ভাবে আহত ছিল। সেখানে কেউ উদ্ধার করতে আসতে পারেনি। যারা উদ্ধার করতে এসেছিল, তাদের ওপর টিয়ারগ্যাস এবং লাঠিচার্জ করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রাখেন, অনেকেই এখন মানবাধিকারের কথা বললেও, ১৫ আগস্ট, ৩রা নভেম্বর কিংবা ২১ আগস্টের মতো হত্যাকাণ্ডের সময় মানবাধিকার কোথায় ছিলো?
একুশ আগস্টের গ্রেনেড হামলা এবং বিএনপি-জামায়াতের দ্বারা নির্যাতিত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের, মানুষের কাছে গিয়ে তাদের ওপর ঘটে যাওয়া অত্যাচার-নির্যাতনের কথা তুলে ধরার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।