হৃদয়ে দাগ কাটার মতো সিনেমা বাংলা চলচ্চিত্রে অসংখ্য রয়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে তুমুল বাণিজ্য সফল সিনেমার সংখ্যা হাতেগোনা। এরমধ্যে নব্বই দশকের অন্যতম আলোচিত সিনেমা ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ একটি। হৃদয়ে দাগ ফেলা ছাড়াও তৎকালীন সময়ে সিনেমাটি আয় করেছিলো প্রায় সোয়া ৮ কোটি টাকা!
সিনেমাটি পরিচালনা করেন সদ্য প্রয়াত সোহানুর রহমান সোহান। হিন্দি সিনেমা ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’ এর অফিশিয়াল রিমেক হলেও এই সিনেমাটিই সোহানের ক্যারিয়ারে সৌভাগ্য বয়ে আনে! একই সিনেমাটি কালজয়ী সিনেমার মর্যাদা পায়। শুধু নির্মাতা নয়, এই সিনেমার জন্য একইসঙ্গে বাংলার দর্শকের কাছে নায়ক-নায়িকা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পান সালমান শাহ ও মৌসুমী!
সিনেমাটি তিন দশক অতিক্রম করেছে গত মার্চে। অনেক ইতিহাসের সাক্ষী ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’। কালজয়ী সিনেমাটিতে কীভাবে যুক্ত হয়েছিলেন সোহান? সেসময় সিনেমাটি নিয়ে করেছিলেন স্মৃতিচারণও!
প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান আনন্দ মেলা হিন্দি ‘সনম বেওয়াফা’, ‘দিল’ ও ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’ এর কপিরাইট নিয়ে সোহানুর রহমান সোহানের কাছে আসে এর যে কোন একটির রিমেক করার জন্য। উপযুক্ত নায়ক-নায়িকা খুঁজে না পেয়ে সম্পূর্ণ নতুন মুখ দিয়ে ছবি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন তারা। নায়িকা হিসেবে মৌসুমীকে নির্বাচিত করেন। নায়ক হিসেবে প্রথমে তৌকীর আহমেদ ও পরে আদিল হোসেন নোবেলকে প্রস্তাব দিলে তারা ফিরিয়ে দেন। তখন নায়ক আলমগীরের সাবেক স্ত্রী খোশনুর আলমগীর ‘ইমন’ নামে একটি ছেলের সন্ধান দেন।
প্রথম দেখাতেই তাকে পছন্দ করে ফেলেন পরিচালক এবং ‘সনম বেওয়াফা’ রিমেকের জন্য প্রস্তাব দেন। কিন্তু ইমন ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’-এর জন্য পীড়াপীড়ি করেন। এ ছবি তিনি ২৬বার দেখেছেন। শেষ পর্যন্ত পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান তাকে নিয়ে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন ও ইমন নাম পরিবর্তন করে সালমান শাহ রাখা হয়।
সিনেমাটির হিন্দি কাহিনি লিখেছেন নাসির হোসেন খান, যার বাংলা চিত্রনাট্য লিখেছেন সোহানুর রহমান সোহান ও সংলাপ লিখেছেন আশীষ কুমার লোহ। প্রযোজক সুকুমার রঞ্জন ঘোষের আনন্দমেলা সিনেমা লিমিটেডের ব্যানারে নির্মিত হয় ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’। ছবিতে সালমান-মৌসুমী ছাড়াও আরো অভিনয় করেন রাজিব, আহমেদ শরীফ, আবুল হায়াত, খালেদা আক্তার কল্পনা, মিঠু, ডন, জাহানারা আহমেদ, অমল বোসসহ অনেক। সিনেমাটি ঈদুল ফিতরে মুক্তি পায়। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে ব্যবসাসফল হিসেবে সেরা ৫টি ছবির একটি হিসেবে ৮ কোটি ২০ লাখ টাকা আয় করে।
সালমান মৌসুমীই নয়, সোহানের হাত ধরে পরবর্তীতে অনেকেই ইন্ডাস্ট্রিতে আসেন এবং সফল হন। এমনকি তার পরিচালিত সিনেমা ‘অনন্ত ভালোবাসা’ দিয়ে প্রথমবার দর্শকের সামনে আসেন ঢাকাই সিনেমার বর্তমান সুপারস্টার শাকিব খান।
ইমন নামের একজন সাধারণ ছেলে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ এর পর সবার কাছে হয়ে উঠেছিলেন সালমান শাহ, তেমনি ‘অনন্ত ভালোবাসা’র পর মাসুদ রানা হয়ে উঠেন শাকিব খান। এর পেছনে একজনই ছিলেন, তিনি সোহানুর রহমান সোহান! বুধবার সন্ধ্যায় তিনি পাড়ি জমালেন অনন্ত লোকে। তার চলে যাওয়ায় স্বজন হারানোর শোক অনুভব করছেন শোবিজ অঙ্গনের মানুষ।