ব্যাটারদের ব্যর্থতায় আফগানিস্তানের বিপক্ষে স্কোরবোর্ডে বড় রান পায়নি বাংলাদেশ। শুরু থেকেই নিয়মিত উইকেটের পতন, দ্রুত রান তুলতে না পারা ও বোলিংয়ে ভালো করার পরও শেষ দিকে এসে খেই হারিয়ে ফেলায় হতাশার হার নিয়েই মাঠ ছাড়ে সাকিব আল হাসানের দল।
খেলোয়াড়দের ব্যর্থতার মাঝে উজ্জ্বল ছিলেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। ব্যাট হাতে ৩১ বলে ৪টি চার ও এক ছক্কায় ৪৮ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছেন। বল হাতে নিয়েছিলেন বিধ্বংসী বাঁহাতি ওপেনার হযরতউল্লাহ জাজাইয়ের উইকেট। তবু পরাজয় হয়েছে তার সঙ্গী।
ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনটা মোসাদ্দেককেই সামলাতে হয়েছে। বেশ কয়েকবার তার কণ্ঠ থেকে ঝরেছে ১০-১৫ রান কম হওয়ার আক্ষেপ। হার নিয়ে সাংবাদিকদের করা প্রশ্নের জবাবে ব্যর্থতা স্বীকারের পাশাপাশি টসে জিতে ব্যাটিং নেয়া ও তিন পেসারের একাদশ গঠন মোটেও ভুল ছিল না বলেই জানালেন।
‘হেরে যাওয়ার পর অনেক কিছু মনে হয়, এটা হলে ভালো হতো, ওইটা হলে ভালো হতো। আমার জায়গা থেকে মনে করছি, সবকিছুই ঠিক ছিল। আমরা ব্যাটিংয়ে যদি আরেকটু ভালো করতে পারতাম, তাহলে ম্যাচটা আমাদের অনুকূলে থাকতো। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা তা করতে পারিনি।
‘আমি মনে করি ১০-১৫ রান কম ছিল। ১৪০ রান হলে দৃশ্যপট ভিন্ন হতে পারতো। টি-টুয়েন্টিতে আপনি যদি দ্রুত উইকেট হারিয়ে ফেলেন, পাওয়ার প্লেতে ২-৩ উইকেট চলে যায়, তখন ফিরে আসাটা সবসময়য়ই কঠিন হয়।’
‘আমরা যদি উইকেট ধরে রাখতে পারতাম এবং ১৫ ওভার পর্যন্ত ৩ উইকেটের বেশি না হারাতাম, তাহলে পুরোপুরি অন্যরকম ব্যাপার হতে পারতো। যা ওদের বেলায় হয়েছে।’
একের পর এক ম্যাচে ধারাবাহিকভাবে ২০ ওভারের ক্রিকেটে টাইগারদের ব্যাটিং ব্যর্থতা এখন নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। শারজাহতে তার ব্যতিক্রম হয়নি। এবার কেন এমনটা ঘটল, তার ব্যাখাও দিয়েছেন মোসাদ্দেক।
‘প্রথম ১০ ওভার উইকেটে বল খুব নিচু হয়ে আসছিল। বিশেষ করে স্পিন বল খেলাটা বেশ কঠিন ছিল। পেস বলগুলো ব্যাটে ঠিকঠাক আসছিল।’
দৃশ্যত মনে হয়েছে শারজাহর উইকেট ছিল অনেকটা মিরপুরের মতো। আনইভেন বাউন্স ছিল। হোম অব ক্রিকেটে এ ধরনের উইকেটে বাংলাদেশি ক্রিকেটাররা খেলে অভ্যস্ত হওয়ার পরও ব্যাটাররা ভালো করতে না পারা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। শেষদিকে বোলারদের ব্রেক থ্রু দিতে না পারাও হয়েছে পরাজয়ের আরেক কারণ।
তবে মোসাদ্দেকের দাবি একেবারেই ভিন্ন। তার ভাষ্য, ‘মিরপুর আর এখানকার কন্ডিশন আমি একেবারেই ভিন্ন বলে মনে করি। কারণ মিরপুরে অনেক সময় উইকেট টার্ন করে। যখন মিরপুরে ভালো উইকেট থাকে, ওইসময় রানও কিন্তু হয়। এখানে প্রথম থেকেই খেয়াল করেছি, আমাদের ব্যাটসম্যানরা যখন ব্যাটিং করেছে একটু কঠিন ছিল এখানে ব্যাটিং করা। বল নিচু হচ্ছিল। ওরা ভালো বোলিং করেছে। তাদের কৃতিত্ব দিতে হবে। আমরা আরও ১০-১৫ রান যোগ করতে পারলে ম্যাচটা অন্যরকম হতে পারতো।’
সাকিব, মাহেদী ও মোসাদ্দেক বল হাতে কার্যকরী প্রমাণিত হয়েছেন। প্রতিপক্ষের ব্যাটারদের অস্বস্তিতে ফেলেছিলেন। পেসাররা হেঁটেছে উল্টো পথে। মোস্তাফিজ, তাসকিন ও সাইফউদ্দিন প্রয়োজনের সময় জ্বলে উঠতে ব্যর্থ। তাই তিন পেসার নিয়ে খেলানোর যৌক্তিকতা নিয়ে মোসাদ্দেককে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়া হয়। টাইগার ক্রিকেটার উত্তর দিতে গিয়ে তুলে ধরলেন বাস্তবতা।
‘বিশ্ব ক্রিকেট জানে আফগানিস্তানের স্পিন আক্রমণ কতটা শক্তিশালী। বড় টার্ন করতে পারে আমাদের ওইরকম বোলার নেই। রিস্ট স্পিনার কেউ নাই। আমরা যারা আছি, সবাই এখানে অর্থোডক্স স্পিনার। আপনি যদি বিশ্লেশন করে দেখেন যে, আমরা এর জন্য ম্যাচ হেরেছি বিষয়টা এরকম না। এখানে হার্ড লেন্থে খেলা অবশ্যই কঠিন। ৩ পেস বোলার নিয়ে খেলায় কোনো ভুল ছিল না। ১২৭ রান করেও আমরা যে পর্যন্ত গিয়েছি, সেটা যথেষ্ট ছিল।’
আফগানিস্তানের লেগস্পিনার পর্যাপ্ত থাকলেও বাংলাদেশের মতো বাঁহাতি স্পিনার তাদের দলে চোখে পড়ে না। সেজন্য বাঁহাতি স্পিনারদের খেলতে যে তারা অস্বস্তিতে পড়ে, তা সাকিবের বোলিংয়ের সময় স্পষ্ট বোঝা গেছে। ফলে নাসুম আহমেদকে একাদশে না রাখার বিষয়টি ম্যাচ শেষে আক্ষেপের কারণ হতেই পারে।
টসে জিতে ব্যাটিংয়ের পক্ষে সাফাই গেয়ে মোসাদ্দেক বলেন, ‘আপনি যদি রশিদ খানের বিপক্ষে ব্যাটিং করেন, আপনি কিন্তু অবশ্যই রান তাড়া করার সময় ওভারে ৭-৮ রান করে নেয়ার মতো অবস্থায় তার বিপক্ষে ব্যাটিং করতে চাইবেন না। আমরা আগে ব্যাটিং করে যতটা সম্ভব রান এগিয়ে রাখতে চেয়েছিলাম। আমরা সেটা করতে পারিনি। তবে আমরা পুরোপুরি পরিকল্পনার মধ্যে ছিলাম।’