টানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কক্সবাজারের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। সোমবার রাতের পর থেকে আরও নতুন নতুন এলাকায় পাহাড়ি ঢলের পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে। নদী ও খালের বাঁধ ভেঙ্গে ঢলের পানি ঢুকে পড়ছে গ্রামে।
মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) সকাল থেকে পানি বেড়ে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়কের একাধিক স্থান দিয়ে পাহাড়ি ঢলের পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে এই সড়কে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। কক্সবাজার জেলার সাড়ে চার লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
আবহাওয়া অফিসের কক্সবাজার আঞ্চলিক কার্যালয়ের জৈষ্ঠ্য পর্যাবেক্ষণ কর্মকর্তা দুলাল চন্দ্র দাশ জানিয়েছেন, সোমবার সকাল ৬ টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬ টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় ১৬৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ৬ টা থেকে বেলা ১২ টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ১৭ মিলিমিটার। আগামি আরও ৩ দিনে বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে। এতে পাহাড় ধসের আশংকাও রয়েছে বলে জানান তিনি।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের তথ্য বলতে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কক্সবাজারের প্লাবিত ইউনিয়নের সংখ্যা ছিল ৩১ টি। যা মঙ্গলবার এসে ৪৫ ইউনিয়নে প্লাবিত হওয়ার তথ্য মিলছে। যেখানে ৬ হাজারের বেশি পরিবারের সাড়ে ৪ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী রয়েছে।
জেলায় সবেচেয়ে বেশি প্লাবিত এলাকা চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলায়। যে ২ উপজেলার একটি পৌরসভা সহ ২৫ টি ইউনিয়ন প্লাবিত হওয়া তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। যেখানে অন্তত আড়াই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
সোমবার রাত থেকে পাহাড়ি ঢলের পানি আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। পাহাড়ি ঢলের পানিতে চকরিয়া উপজেলার কাকারা, সুরাজপুর,মানিকপুর, বরইতলী, হারবাং, পুর্ববড় ভেওলা, বিএমচর, পশ্চিম বড়ো ভেওলা, চিরিঙ্গা, লক্ষ্যারচর, কৈয়ারবিল, ফাসিয়াখালী চকরিয়া পৌরসভা, পেকুয়া সদর ইউনিয়ন রামু উপজেলার গর্জনিয়া কচ্ছপিয়া কাউয়ার রাজারকুল ইউনিয়নের বেশির ভাগ গ্রামে বন্যার পানি ঢুকেছে। এসব গ্রামের সড়কগুলোও পানিতে তলিয়ে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের চকরিয়া উপজেলা কর্মকর্তা জামাল মোর্শেদ জানিয়েছেন, ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মাতামুহুরি নদীর ঢলের পানির তোড়ে কইন্যারকুম, বিএমচর, মেহেরনামা বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। এ ছাড়া আরও একাধিক এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেপি দেওয়ান জানিয়েছেন, পাহাড়ি ঢলের পানি হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ায় এই বন্যা দেখা দেয়। পাহাড়ি ঢলে নদী ভাঙনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থান করা লোকজনকে সমতলের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পূর্বিতা চাকমা জানিয়েছেন, পাহাড়ি ঢলে এই উপজেলার রাজাখালী, উজানটিয়া মগনামা, টৈটং, বারবাকিয়া, শিলখালীর নিম্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।