ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের অন্যতম গুণী শিল্পী উস্তাদ রশিদ খান আর নেই। তার মৃত্যুর খবরে শুধু ভারত নয়, বাংলাদেশি সংগীতপ্রিয় মানুষেরাও চোখের জল ফেলছেন। মাত্র ৫৬ বছরে সংগীতের এই প্রিয় মুখটিকে হারিয়ে শোকার্ত সবাই।
এদিন বিকেল ভারতীয় সময় পৌনে ৪টায় হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন রশিদ খান। তার মৃত্যুর খবর শোনেই কাজ ফেলে হাসপাতালে পৌঁছান পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী। পরে সংবাদকর্মীদের মুখোমুখি হয়ে আবেগ সামলে কথাও বলেন মমতা। জানান, শিল্পী রশিদ তাঁকে মা বলে ডাকতেন।
তিনি বলেন, “উস্তাদ রশিদ খান আর নেই, কথাটা ভেবেই গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। ভাবতেই পারছি না, ও নেই। ওঁর মিষ্টি গলাটা আর শুনতে পাব না। কথাটা বলতে গিয়ে এখনও আমার গায়ে কাঁটা দিচ্ছে।’’
প্রয়াত রশিদকে দেখে রশিদের চিকিৎসক এবং শিল্পীর স্ত্রী-পুত্র-কন্যাকে পাশে নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন মমতা। বলেন,‘‘আমাকে কথাগুলো বলতে হচ্ছে বলতে হবে বলে। কিন্তু বলতে কষ্ট হচ্ছে। কী করব বলুন সবটাই সামলাতে হয়। মমতা বলেন, ‘‘রশিদ ছিল আমার ভাইয়ের মতো। খুব ভাল সম্পর্ক ছিল আমাদের। বাংলা উর্দু মিশিয়ে মিষ্টি করে কথা বলত। ও আমাকে বলত, ‘তুমি আমার মা আছো’।’’
পশ্চিমবাংলার বহু সরকারি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন রশিদ। সরকার তাকে ‘বঙ্গবিভূষণ’ সম্মানও দিয়েছিল। মমতা নিজে গান শুনতে ভালবাসেন। বহু অনুষ্ঠানে ঘনিষ্ঠ মহলে রশিদের গানের প্রশংসাও করতে শোনা গিয়েছে তাকে। সেই রশিদের মৃত্যু সংবাদ জানাতে এসে স্বাভাবিক ভাবেই উঠে আসে পুরনো কথা।
মমতা বলেন, ‘‘ওঁকে উস্তাদ বলা হয়। রবীন্দ্র সংগীতও দারুণ গাইত। সমস্ত ভাষায় দখল ছিল। সবার সঙ্গে ভাল সম্পর্ক ছিল। মাত্র ৫৫ বছর বয়স। আমি মনে প্রাণে চেয়েছিলাম ও ফিরে আসুক। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওঁকে ফেরাতে পারলাম না। রশিদের গান আর আমরা শুনতে পাব না। ভেবেই আমার দুঃখ লাগছে। একজন অসাধারণ মানুষ ছিল। ওর মৃত্যু আমাদের বড় ক্ষতি। দেশের ক্ষতি।’’
হাসপাতালের সামনে মমতার পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন শিল্পীর স্ত্রী-পুত্র-কন্যা। তাদের কাঁধে হাত রেখে মমতা বলেন, ‘‘রশিদ চলে গিয়েছে ওরা ভাবছে ওরা অভিভাবকহীন হয়ে গিয়েছে। অভিভাবকহীন হয়নি। আমি ওঁদের অভিভাবক হয়ে থাকব। ছেলেকে খুব ভাল শিল্পী হিসাবে তৈরি করে দিয়ে গিয়েছে রশিদ। ওকে এগিয়ে দিতে হবে। আমি আর কী বলব আমার একজন সুহৃদ হারিয়ে গেল।’’
শিল্পীকে সম্মান জানাতে রাজ্য সরকার কী কী পরিকল্পনা করেছে, সে কথাও জানান মমতা। বলেন, ‘‘আমি রশিদের স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। ওঁরা বলেছেন, ‘দিদি আপনি যা করবেন তা-ই হবে’। ওঁকে উস্তাদ বলে সম্মান করা হয়। আমরা সমস্ত সম্মাননীয় ব্যক্তিদের প্রয়াণের পর রবীন্দ্র সদনে নিয়ে আসি। উস্তাদ রশিদকেও সম্মান জানাতে বুধবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত তার মরদেহ রবীন্দ্র সদনে শায়িত রাখা হবে। যাতে শিল্পীর অনুরাগীরা তাকে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানাতে পারেন। এর পর ঠিক ১টার সময় প্রয়াত শিল্পীকে ‘রাজ্যের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্মান’ গান স্যালুট দেবে কলকাতা পুলিশ। সেই অনুষ্ঠানও হবে সদনেই।’’
মমতা জানিয়েছেন, এর পর সদন থেকে শিল্পীর দেহ নিয়ে যাওয়া হবে নাকতলার বাড়িতে। সেখান থেকে তার দেহ শেষকৃত্যের জন্য নিয়ে যাওয়া হবে টালিগঞ্জের কবরস্থানে।