আজও স্মৃতির বনে তুফান তোলে তারা! হলুদমাখা দিনের স্মৃতি! বড় ইতিহাস, গানজীবনের! দীর্ঘ রোগযন্ত্রণা ভোগের পর, প্রয়াত হলেন ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’-র বাপিদা ওরফে শিল্পী তাপস দাস। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি ক্যানসারের মতো মারণব্যাধির সঙ্গে লড়াই করছিলেন।
তাঁর চিকিৎসার কথা সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে জানিয়ে, পদ্মাপারের বাংলার পাশাপাশি গঙ্গাপারের বাংলাতেও তহবিল সংগ্রহের কাজ শুরু করেছিলেন গুণমুগ্ধরা। হাতও বাড়িয়ে ছিলেন বহুমানুষ। রবিবার সকলকে হঠাৎই গুণমুগ্ধদের কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’র শেষ ঘোড়া। সজাগ যোদ্ধা তাপস দাস!
‘মহীনের ঘোড়াগুলি’ র যোদ্ধা তাপস দাস ওরফে সবার প্রিয় বাপিদার দেহে থাবা বসিয়েছিল মারণ কর্কট রোগ। ফুসফুসের ক্যানসারে ভুগছিলেন তিনি দীর্ঘদিন ধরেই। শিল্পীর এই ব্যাধির আকাশছোঁয়া চিকিৎসার খরচ জোগাতে পারছিলেন না তাঁর পরিবার। সেই সময় তাঁর পাশে দাঁড়ায় রাজ্য সরকার ও বহু ভক্তগোষ্ঠী। তিনি দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক কৌশিক চট্টোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে ছিলেন। চিকিৎসার প্রয়োজনে তাঁকে দেওয়া হচ্ছিল কেমো থেরাপিও। এই কিংবদন্তি প্রিয়
তারকার চিকিৎসার জন্য টাকা জোগাতে এগিয়ে এসেছিল দুই বাংলার ভক্তরাও। তাঁরা অর্থ জোগাড় করতে শুরু করেছিল, নানান ভাবে। জানা যায়, এতে একদমই সায় ছিল না তাপসের। এবং সরকারিভাবে রাজ্য সরকার সাহায্য করলে তিনি মানা করবেন না বলে জানিয়েছিলেন।
গত ১ জানুয়ারি তাঁর শারীরিক অবস্থার কথা জানিয়ে একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট করেছিলেন এইসময়ের তারকা গায়ক রূপম ইসলাম। এরপরেই তৎপর হয় গঙ্গাপারের বাংলার নবান্নের সরকার। পাশে এসে দাঁড়ায় শিল্পীর।
চিকিৎসার জন্যও দীর্ঘ লড়াই বাপিদার। বেশকিছু দিন ধরেই নাকে লাগানো হয়েছিল রাইস টিউব। সেই অবস্থাতেই হুইলচেয়ারে বসে ‘ভালোবাসি জ্যোৎস্নায়…’ গেয়ে উঠতেন মাঝে মাঝে! বাপিদা নেই। চোখে জল অগণিত ভক্তদের। ভিড় থেমে যাবে একদিন!
তবে, গত কয়েকদিন ধরেই শিল্পীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছিল। ভেঙ্গে পরছিলেন তিনি! রবিবার সকালে সকলকে রেখে, চলে গেলেন তিনি। না ফেরার দেশে! সেই দুঃসংবাদ সোশ্যাল মিডিয়ায় জানিয়েছেন গায়ক রূপম ইসলামই। ভারাক্রান্ত হৃদয়ে তিনি পোস্ট এ লেখেন, “সচল হয়েই থেকে গেল গানজীবনের অনন্ত পথ চলা… থেমে গেল বললে ভুল হবে, মারাত্মক ভুল…বাপিদা সশরীরে তুমি আর নেই। কিন্তু সর্বত্র এভাবেই তুমি থাকবে আমাদের মধ্যে। লাল সেলাম।..’
সালটা ১৯৭৫! তখনও সেভাবে ‘পাঙ্করক’ বাংলার মাটির সঙ্গে মাখামাখি হয়নি তেমন। সেই সময় হাতে গিটার নিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছিল ‘মহীনের ঘোড়ারা’, বেশ জমে উঠেছিল বাংলার বৈঠকখানার মাটি, মজলিশ, মাচা। তৈরি হয় বাংলার প্রথম রক ব্যান্ড ‘মহীনের ঘোড়গুলি’। ইতিহাস তৈরি হল যেন। এরপর একের পর এক মাইলস্টোন তৈরি হয় গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে। নকশাল আন্দোলনের সময় অন্তবাসে থাকা অবস্থায় মিনতি চট্টোপাধ্যায় (বিয়ে হয় ১৯৭০) নামের এক উজ্জ্বল নারীকে গানপাগল গৌতম বিয়ে করেন। এ-ও যেন এক বিপ্লব!
এখনও একই রকমভাবে জনপ্রিয় ‘পৃথিবী’, ‘টেলিফোন’, ‘তোমায় দিলাম’। সেই ইতিহাসের মহীনের ঘোড়াগুলির অন্যতম মুখ ছিলেন বাপিদা ওরফে তাপস দাস। এ যাওয়া সেই যাওয়া নয়! তবুও চলে যেতেই হয়, গান পাগল তাপসকে!