বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তারেক রহমান এবং জোবায়দা রহমানের যে রায় দেয়া হয়েছে তা বিচার বিভাগকে দলীয়করণ করার একটি নিকৃষ্ট উদাহরণ।
তিনি বলেন, রাষ্টক্ষমতাকে আঁকড়ে রাখতে সরকার কোন বিরোধী পক্ষ রাখতে চায় না। এই ফরমায়েশি রায় দেশের মানুষ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে।
বুধবার (২ আগস্ট) গুলশানে বিএনপির কর্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
এর আগে বুধবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামানের আদালত জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পলাতক আসামি তারেক রহমানের ৯ বছর ও তার স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানের তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন।
সরকার প্রতিপক্ষবিহীন রাজনীতি করতে চাচ্ছে মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, এ রায় সরকার প্রধানের নির্দেশে হয়েছে। আলোর গতিতে এ মামলা চালিয়ে রায় দেয়া হয়েছে। এ রায় ফরমায়েশি। বিএনপিকে নেতৃত্বশূন্য করতে আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে এ রায় দেয়া হয়েছে, যা বেগম জিয়ার বেলাতেও হয়েছে।
বিএনপি এ রায় প্রত্যাখ্যান করছে জানিয়ে ফখরুল বলেন, এক মাসের মধ্যে মামলার কার্যক্রম চালিয়ে রায় দেয়াই প্রমাণ করে জিয়া পরিবারকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেয়ার প্রধানমন্ত্রীর প্রতিহিংসার প্রতিফলন ঘটেছে। তারেক ও জোবায়দার বিরুদ্ধে সাজার মাধ্যমে বিচার বিভাগকে দলীয়করণের আরও একটি নজির স্থাপন করা হলো।
এর কিছুক্ষণ আগে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ৯ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং তার স্ত্রী জোবায়দা রহমানকে ৩ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এছাড়া তারেককে ৩ কোটি টাকা ও জোবায়দাকে ৩৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড করা হয়েছে।
গত ২৪ জুলাই এ মামলায় আদালতে সবশেষ সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন দুদকের উপপরিচালক তৌফিকুল ইসলাম। তার সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। এরপর গত ২৭ জুলাই আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন হয়। যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত রায়ের জন্য বুধবার দিন ধার্য করেন।
গত ২১ মে মামলার বাদী দুদকের উপপরিচালক জহিরুল হুদার সাক্ষ্যের মাধ্যমে এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। মামলাটিতে চার্জশিটভুক্ত ৫৬ সাক্ষীর মধ্যে ৪৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন আদালত।
গত ১৩ এপ্রিল একই আদালত তারেক ও জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ দেন। এ মামলায় তাদের পলাতক দেখানো হয়।
এর আগে দুদকের করা মামলাটি রায়ের জন্য ২ আগস্ট দিন ধার্য করেন আদালত। গত বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামানের আদালত যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে এ রায়ের দিন ধার্য করেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, আয়ের বাইরে ৪ কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬১ টাকার মালিক হওয়া এবং সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কাফরুল থানায় এ মামলা করে দুদক। মামলায় তারেক রহমান, জোবায়দা রহমান ও তার মা, তারেক রহমানের শাশুড়ি ইকবাল মান্দ বানুকে আসামি করা হয়। ২০০৮ সালে তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এরপরই মামলা বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন জোবায়দা। ওই বছরই এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। এর বিরুদ্ধে আপিল করলে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন।
এ সংক্রান্ত চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল হাইকোর্ট জোবায়দার করা মামলা বাতিলের আবেদন খারিজ (রুল ডিসচার্জ) করে রায় দেন। একইসঙ্গে ওই মামলায় আট সপ্তাহের মধ্যে জোবায়দাকে বিচারিক আদালতে উপস্থিত হতে নির্দেশ দেওয়া হয়। উচ্চ আদালতের এ খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে ওই বছরই লিভ-টু-আপিল করেন জোবায়দা। এরপর প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ লিভ-টু-আপিল খারিজ করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল রাখেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।