বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির পক্ষে আদালতে কোনো আইনজীবী দাঁড়াননি। আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটার পরে প্রথাগত বিচার শুরুর আগেই নানা ঘটনায় বিষয়টি নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
বাংলাদেশের সংবিধান অনুসারে অপরাধ প্রমাণিত না হওয়া পযন্ত একজন ব্যক্তি নির্দোষ এবং যে কেউ আইনের আশ্রয় পাওযার অধিকার রাখে। এমনকি আসামীর পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ দেয়া না থাকলে তার পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ দেয়া সরকারের দায়িত্ব বলে আইনজ্ঞরা জানালেও, এই ঘটনায় কেন কেউ মিন্নির পক্ষে দাঁড়াননি তা নিয়ে নানা আলোচনা চলছে।
রিফাত হত্যা মামলায় তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। বুধবার দুপুরে পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন। রিফাত হত্যায় মিন্নির প্রাথমিক সম্পৃক্ততা পাওয়ায় কথা দাবি করে মঙ্গলবার রাতে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। মিন্নি রিফাত হত্যা মামলার এক নম্বর সাক্ষী থাকলেও বর্তমানে তাকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে। রিমান্ড চলার সময়েই রিমান্ডে মিন্নি কী বলেছে, সে দোষী নাকি নির্দোষ এসব বিষয়ের আলোচনা গণমাধ্যমে চলে এসেছে। এসবের অনেকগুলোর সূত্র আইনশৃঙ্খলা কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, আবার কোনটি সাধারণ জনগণের অনুমান। বিচারিক ও আইনের দৃষ্টিতে নৈতিক বা অনৈতিক যাই হোক বিষয়টি এখন টক অব দ্য টাউনে পরিণত হয়েছে।
গত ২৬ জুন বরগুনায় রিফাত শরীফকে প্রকাশ্য সড়কে কুপিয়ে হত্যার সময় মিন্নি স্বামীকে বাঁচানো চেষ্টার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর বিষয়টি সারাদেশে আলোচনার ঝড় তোলে। এরপর শরীফের বাবা দুলাল শরীফ ১২ জনকে আসামি করে যে মামলাটি করেন, তাতে প্রধান সাক্ষী করা হয়েছিল মিন্নিকে। কিন্তু পরে পুত্রবধূ মিন্নির বিরুদ্ধেও ছেলে হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগ তোলেন রিফাতের বাবা।
ইতিমধ্যে এই ঘটনায় জড়িত প্রধান আসামী পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। কয়েকজন পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে, কয়েকজন পলাতক আছে। এছাড়া ঘটনার পেছনে কলকাঠি নাড়া কয়েকজন সন্দেহভাজন প্রভাবশালীর নাম এসেছে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে। আইনজীবী না পাওয়ার পেছনে ওইসব প্রভাবশালীদের কোনো চাপ আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা জরুরি।
একজন আইনজীবী আজ বৃহস্পতিবার বিষয়গুলো হাইকোর্টের নজরে এনেছেন। বিজ্ঞ আদালত বলেছেন, যেহেতু বিষয়টি এখনও তদন্ত কার্যক্রমের মধ্যে আছে সেজন্য এখনই কোনো হস্তক্ষেপ করবো না। আদালতের এই মন্তব্য থেকে বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের অনেককিছু বোঝার আছে বলে আমরা মনে করি। চলমান কোনো তদন্ত ও বিচারিক কার্যক্রম বিষয়ে পুলিশসহ বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের আরো সাবধানী আচরণ কামনা করছি।
সার্বিক বিষয় বিশ্লেষণ করে আমাদের মনে হয়েছে, এই বিষয়টি নিয়ে আরো কার্যকর তদন্ত হওয়া দরকার, সেইসঙ্গে মিন্নির আইনি সহায়তা পাওয়ার অধিকারও নিশ্চিত হওয়া দরকার। এই ঘটনা যেনো কোনোভাবে মিডিয়া ট্রায়াল বা ফেসবুক ট্রায়ালে পরিণত না হয়, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা সতর্ক হবেন বলে আমাদের আশাবাদ।