প্রতীক্ষা কেবলই দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছিল, লাগামটা টেনেছিলেন ২০১৪-তে। স্বপ্নের সোনার ট্রফিটা ধরতে গিয়ে হেরে যান লিওনেল মেসি। বিশ্বকাপের ট্রফির সামনে মেসির মলিন মুখটা মনে হলে এখনও ফুটবলপ্রেমীদের চোখটা পোড়ায়!
এবারের বিশ্বকাপে আসার আগেই কোপা আমেরিকা ও লা ফিনালিস্সিমা জিতে জানান দিয়েছিল মেসির আর্জেন্টিনা। কিন্তু বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই সৌদি আরবের কাছে অপ্রত্যাশিতভাবে হেরে মিশন শুরু করে আলবিসেলেস্তেরা।
যেই দলটি টানা ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত ছিল, ব্রাজিল-উরুগুয়ে-জার্মানি-ইটালির সাথে ৯ ম্যাচে হারেনি, তাদেরকে এতো তাড়াতাড়ি হিসাবের খাতা থেকে মুছে ফেলাটা কি ঠিক? সমর্থকদের পাশে থাকতে বলেছিলেন কাপ্তান মেসি। জাদুকরী ফুটবলের জাদু দেখিয়ে কাতার বিশ্বকাপ বিমোহিত করেছেন ‘এলএম টেন’। ঠিকই কথা রাখলেন মেসি, দলকে টেনে নিয়ে গেলেন বিশ্বকাপের ফাইনালে।
ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে তৃতীয় গোলটি ছিল নিখাদ মেসি-জাদু। গোলের চাইতে অ্যাসিস্ট যে দুর্দান্ত হয়ে ওঠে তার জ্বলন্ত প্রতিচ্ছবি দেখেছে বিশ্ব। ক্রোয়েশিয়ার ইওস্কো গাভারদিওলকে যে খাবি খাওয়ালেন সেটি ছিল অবিশ্বাস্য। ওই গোলটির পরে ইতোমধ্যে মেসিকে ‘স্পেস ক্রিয়েটর’ আখ্যাও দিয়েছেন ফুটবল বিশেষজ্ঞরা।
এছাড়াও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে প্রথম গোলের যে ডিফেন্স চেরা পাস দিলেন একটি নাটমেগ করে, সেটি একমাত্র মেসির পক্ষেই সম্ভব। যখন ক্যামেরার চোখও মলিনার দৌড়টি খেয়াল করেনি, মেসির চোখ তখন তাকে খুঁজে পেয়েছে চারজন ডিফেন্ডারকে নাস্তানাবুদ করে। মেসিকে আসলে আমাদের উপভোগ করতেই হবে। না করা ছাড়া উপায় নেই।
১৯৮৬ বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা ইংলিশ কিংবদন্তি গ্যারি লিনেকার লিওনেল মেসির ম্যাজিক্যাল বিষয়টি ইঙ্গিত করে টুইট করেছেন, ‘এখনো কি বিতর্কটা আছে? আমি সর্বকালের সেরার কথা জিজ্ঞেস করছি।’
মেসির হাতে বিশ্বকাপ ট্রফি দেখার অপেক্ষায় তার বন্ধু ও সাবেক সতীর্থ লুইস সুয়ারেজও। সাবেক বার্সেলোনা ফরোয়ার্ড ইনস্টাগ্রাম পোস্টে লিখেছেন, ‘তুমি যে বিশ্বসেরা, তা নিয়ে কোনো সংশয় নেই। সেটি দেখাতে কখনো ক্লান্তি বোধ কোরো না। এই ছেলে ফুটবলকে যা দিয়েছে, গোটা বিশ্ব তাকে উঠে দাঁড়িয়ে হাততালি দিক।’
ইব্রাহিমোভিচ বলেছেন, লেখাই হয়ে গেছে মেসি এবারের বিশ্বকাপ জয় করতে চলেছেন। ব্রাজিলের সর্বকালের সেরা ফরোয়ার্ড রোনাল্ডো নাজারিও বলেছেন, মেসি কাপ জিতলে তিনি দারুণ খুশি হবেন। কাকাও রোনালদোর সুরে সুর মিলিয়েছেন। ফাইনালে একটি অ্যাসিস্ট বা গোল করলে মেসি কিংবদন্তি পেলের রেকর্ড ছোঁবেন। বিশ্বকাপে ১২ গোল আর ৮ অ্যাসিস্টে পেলের সংখ্যা ২০। ১১ গোল আর ৮ অ্যাসিস্টে মেসির সংখ্যা ১৯।
কালজয়ী সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ভাষায়, ‘অস্তগামী সূর্যের তির্যক রশ্মিচ্ছটা ধীরে ধীরে নামিয়া আসিয়া দীঘির কালো জলে সোনা মাখাইয়া দিল…।’ আর্জেন্টাইন অধিনায়ক লিওনেল মেসির সূর্যটাও অস্তগামী। ইতোমধ্যে জানিয়েও দিয়েছেন বিশ্বকাপের ফাইনালই হতে চলেছে তার শেষ বিশ্বকাপের ম্যাচ।
বিশ্বকাপের ফাইনালে নিজের সেরার সেরাটা নিশ্চয়ই লিওনেল মেসি দেবেন, সঙ্গে থাকবে তার জন্য শিরোপা এনে দেবার লক্ষ্যে ইস্পাত সমান প্রতিজ্ঞ জুলিয়ান আলভারেজ-ডি পল-মলিনা-রোমেরো-ম্যাক অ্যালিস্টারসহ আর্জেন্টিনা দলের সবাই।
মেসির হাতে সোনামোড়ানো বিশ্বকাপ দেখতে আরও একজন তো আছেনই! তিনি হয়তো সশরীরে নেই- আছেন মেসিদের হৃদয়ে।
ফুটবল ঈশ্বর ডিয়াগোর দৈববাণী লুসাইলে ছড়িয়ে যাবে… আর মেসি হবে মিসাইল… ফুটবলের কাছে এটি কি খুব বেশি কিছু প্রত্যাশা করা?