বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য, সাবেক সভাপতি, শিল্পী-সংগ্রামী গোলাম মোহাম্মদ ইদু-এর প্রতি অশ্রুসজল শ্রদ্ধা জানিয়েছে উদীচীর শিল্পী-কর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ।
শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) দুপুর দেড়টায় প্রথমে উদীচী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নেয়া হয় গোলাম মোহাম্মদ ইদু-এর মরদেহ। সেখানে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানান উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদ, ঢাকা মহানগর সংসদ, ফেনী জেলা সংসদ, মানিকগঞ্জ জেলা সংসদ, কুমিল্লা জেলা সংসদ এবং ঢাকায় অবস্থিত মিরপুর, বাড্ডা, মোহাম্মদপুর, গেন্ডারিয়া, কাফরুল, শান্তিনগর, লালবাগসহ বিভিন্ন শাখা সংসদের শিল্পী-কর্মীরা। এসময় গোলাম মোহাম্মদ ইদু’র স্মৃতিচারণ করেন উদীচীর প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ের সংগঠকরা।
পরে দুপুর আড়াইটায় গোলাম মোহাম্মদ ইদুর মরদেহ নেয়া হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে সেখানে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানান বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
শ্রদ্ধা নিবেদন পর্বে উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান বলেন, শারীরিকভাবে না থাকলেও মানসিক শক্তি হয়ে উদীচীর সব লড়াই-সংগ্রামে থাকবেন গোলাম মোহাম্মদ ইদু। তার আদর্শ ও চেতনাকে ধারণ করেই উদীচী পথ চলবে।
উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে বলেন, নিভৃতচারী সাংস্কৃতিক সংগঠক গোলাম মোহাম্মদ ইদু ছিলেন উদীচীর সকল স্তরের শিল্পী-কর্মীদের প্রকৃত অভিভাবক। অসাম্প্রদায়িক, সাম্যবাদী সমাজ বিনির্মাণের যে আদর্শকে ধারণ করে তিনি আজীবন লড়াই করে গেছেন, সেই আদর্শ প্রতিষ্ঠায় উদীচী অবিচল থাকবে।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস বলেন, গোলাম মোহাম্মদ ইদু-এর মতো আজীবন বিপ্লবী মানুষকে হারানো দেশের সংস্কৃতি জগতের জন্য বড় ক্ষতি।
আনুষ্ঠানিকভাবে উদীচী প্রতিষ্ঠিত হওয়ারও প্রায় এক দশক আগে থেকে শিল্পী-সংগ্রামী-কৃষক নেতা সত্যেন সেন একটি গানের দল গঠন করেন। সেই গানের দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন গোলাম মোহাম্মদ ইদু। পরবর্তীতে ১৯৬৮ সালের ২৯ অক্টোবর উদীচী আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হলে প্রথম আহ্বায়ক কমিটির অন্যতম সদস্য নির্বাচিত হন গোলাম মোহাম্মদ ইদু। পরবর্তীতে উদীচী ২০০৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
শেষ বয়সে শারীরিক নানা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও উদীচীর ছোট-বড় যেকোন কর্মসূচিতে ছুটে আসতেন গোলাম মোহাম্মদ ইদু। উদীচীর সব বয়সী শিল্পী-কর্মীর জন্যই তিনি প্রকৃত অভিভাবকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ১৯৩৭ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি জন্ম নেয়া গোলাম মোহাম্মদ ইদু, দীর্ঘদিন ধরে নানা ধরনের জটিল রোগের সাথে লড়াই করছিলেন। গত ১৭ ডিসেম্বর রাতে তাকে রাজধানীর হেলথ এন্ড হোপ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দু-তিনদিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর অবস্থার উন্নতি হওয়ায় ২১ ডিসেম্বর বিকেলে তাকে আইসিইউ থেকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। তবে শুক্রবার (২২ ডিসেম্বর) বিকেলে চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন গোলাম মোহাম্মদ ইদু।
লালবাগে পারিবারিক আনুষ্ঠানিকতা শেষে শনিবার বিকেলে আজিমপুরে সমাহিত করা হয় গোলাম মোহাম্মদ ইদুকে।