‘বৃষ্টি এখন আর ভালো লাগে না, কান্নার শব্দ মনে হয়, মেঘলা আকাশ কেমন যেন, বেদনার চাদরে ঢেকে রয়, আমার বুকে কেন বৃষ্টি অঝোরে ঝরে পড়ছে, তবু সারাক্ষণ আমার হৃদয় মন নিবিড় অপেক্ষা করছে…’।
-উপরের এই লাইনগুলোর গানের কথা হলেও প্রতিটি শব্দই যেন কুমার বিশ্বজিতের এখনকার জীবনের প্রতিধ্বনি! কারণ, প্রায় একবছর ধরে কানাডায় জনপ্রিয় এই কণ্ঠশিল্পীর একমাত্র ছেলে নিবিড় কুমার সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন। এখনও তার চিকিৎসা চলছে। সব ফেলে ছেলের সুস্থতার জন্য পিতা কুমার বিশ্বজিৎ শুরু থেকেই পুত্রের সুস্থতার প্রহর গুনছেন কানাডার হাসপাতালে।
কানাডার একটি কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন নিবিড়। লেখাপড়ার সুবাদে সেখানে থাকতেন। গেল বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি টরন্টোর স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ১১টায় ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় নিবিড় গুরুতর আহত হন। সেই ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা আজও বয়ে বেড়াচ্ছে নিবিড় ও তার পরিবার।
ছেলে সড়ক দুর্ঘটনার কবলের পড়ার পর থেকে কুমার বিশ্বজিতের দীর্ঘ, উজ্জ্বল আর গতিময় সংগীত ক্যারিয়ার সবকিছু ওলটপালট হয়ে গেছে। মূলত সেই অপেক্ষাময় কঠিন নীরবতাই কুমার বিশ্বজিতের হয়ে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন গীতিকবি হাসানুজ্জামান মাসুম ও সংগীত পরিচালক কিশোর দাশ।
তাতে কণ্ঠ দিয়েছেন খোদ কুমার বিশ্বজিৎ। গানটির নাম দিলেন ‘নিবিড় অপেক্ষা’। প্ল্যাটফর্ম এন্টারটেইনমেন্টের পরিবেশনায় ‘নিবিড় অপেক্ষা’ নামের বিশেষ গানটি একযোগে দেশের ১৮টি ব্যানার থেকে উন্মুক্ত হতে যাচ্ছে শিগগিরই। গানটির ভিডিও নির্মাণ করেছে প্রেক্ষাগৃহ।
জানা যায়, এখনও কুমার বিশ্বজিৎ নিবিড়ের অপেক্ষায় আছেন কানাডার হাসপাতালে। সেখান থেকে এই গানটি প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করতেই আবেগাক্রান্ত হলেন জনপ্রিয় এই গায়ক।
কুমার বিশ্বজিৎ বললেন, নিবিড়কে ঘিরে তার বেদনাময় অপেক্ষার কথা, ‘প্রথমেই বলি, এটাকে আমি গান বলতে চাই না। এটা একজন পিতার আর্তি। আমি ভাবিনি নিবিড় ও তার সহপাঠীদের এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর আবারও গাইবো। কারণ সেই মানসিক শক্তি বা আগ্রহটাই মরে গেছে। মাসের পর মাস এই দূর পরবাসে ছেলেটার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি, ওর কণ্ঠ শোনার অপেক্ষায়।
‘নিবিড় অপেক্ষা’ সৃষ্টি প্রসঙ্গে কুমার বিশ্বজিৎ বলেন, ‘মাঝে কয়েকদিনের জন্য ঢাকায় গিয়েছিলাম। তখন কিশোর ও মাসুম একটা গান করার জন্য বার বার অনুরোধ করছিলো। আমিও বার বার ওদের ইগনোর করেছি। কারণ গানটা তো আমরা প্রাণ দিয়ে করেছি আজীবন। এখন তো আর আমার ভেতরে সেই প্রাণটা নেই। ওরা এরপরও একটা ডামি বানিয়ে আমাকে শোনালো। শুনে মনে হলো, কথাগুলো তো আমারই। সুরটাও আমার ভেতরের হাহাকারের মতো। যেগুলো আসলে প্রকাশ করতে পারছি না। পাথর হয়ে আছি। সত্যি বলতে এই গানটা গাইবার পর পাথরটা খানিক গললো বোধয়।’