চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

কবিতার আলোয় আমার দেখা নয়াচীন

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৪ সালে রাজবন্দী থাকাবস্থায় নয়াচীন ভ্রমণকে সহজ-সরল, রসাত্মক এবং সাংগঠনিকভাবে বিশ্লেষণ করেছেন  ‘আমার দেখা নয়াচীন ’ গ্রন্থে। ১৯৫২ সালের অক্টোবর মাসে নয়াচীনের পিকিং-এ প্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক শান্তি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। পূর্ব বাংলা থেকে তদানীন্তন পাকিস্তান প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসাবে বঙ্গবন্ধু নয়াচীন ভ্রমণ করেন।

‘আমার দেখা নয়াচীন’ গ্রন্থে বঙ্গবন্ধু শুধুমাত্র ভ্রমণকাহিনীই তুলে ধরেননি; বরং সদ্য জন্ম নেওয়া একটি দেশ কিভাবে বৈষম্যহীনভাবে বিনির্মিত হচ্ছে সেটিই সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্মভাবে বর্ণনা করেছেন। যেটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ‘আমার দেখা নয়াচীন’ গ্রন্থ অবলম্বনে আফরোজা নাইচ রিমা লিখিত ‘কবিতার আলোয় আমার দেখা নয়াচীন’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন এভাবে –

‘শান্ত চীনে ১৯৫২ এর সেপ্টেম্বরের পিকিং শান্তি সম্মেলনে,
স্পর্শ করে সহজ্র কন্ঠে শান্তির সৈকতে,
সন্ধি করো চীনের আওয়াজের সাথে,
আমরা শান্তি চাই ’
মানুষের মঙ্গল আর পাকিস্তানের স্বার্থে।’

নয়াচীন ভ্রমণ করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু মিয়ানমার, ব্যাংকক, রেঙ্গুন শহর ভ্রমণ করেন। সেই ভ্রমণের সার-কথন এই আমার দেখা নয়াচীন গ্রন্থ। যেটি আফরোজা নাইচ রিমা তার কাব্যগ্রন্থের ‘ রেঙ্গুন শহরে ঘোরা ’ কবিতায় তুলে ধরেন এভাবে –

‘রেঙ্গুন শহরে ঘোরাঘুরি,
ক্লাব, বৌদ্ধদের প্যাগোডাসহ সকল সুন্দর জায়গায়।
…কেটে গেল রেঙ্গুন শহরে,
বিকেল থেকে রাতে।’

শেখ মুজিবুর রহমান যখন ব্যাংকক হয়ে হংকং পৌঁছালেন তখনকার প্লেন ভ্রমণের বর্ণনা দিয়েছেন এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলার মতো। যেটি আফরোজা নাইচ রিমা কবিতার আলোয় আমার দেখা নয়াচীন কাব্যগ্রন্থের ‘মেঘের মধ্যে থাকে না হাওয়া’ কবিতায় তুলে ধরেছেন এভাবে–

‘প্লেন মেঘের মধ্য দিয়ে যায় যখন,
অনেকের শ্বাস নিতে কষ্ট হয় তখন,
মেঘের মধ্যে থাকে না হাওয়া,
এভাবেই ব্যাংকক থেকে হংকং-এ আসা-যাওয়া ।’

চীনের অপরুপ রুপের বর্ণনা করতে গিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান সুন্দর শব্দ চয়নের অক্ষমতার কথা বারংবার তুলে ধরেছেন ।

আমার দেখা নয়াচীন গ্রন্থের ৬৬নং পৃষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু লেখেন , ‘আমি লেখক নই, অনুভব করতে পারি মাত্র, লেখার ভেতর দিয়া প্রকাশ করার ক্ষমতা খোদা আমাকে দেন নাই ।’ কবিতার আলোয় আমার দেখা নয়াচীন কাব্যগ্রন্থের ‘ আমি লেখক নই’ কবিতায় ফুটে উঠেছে এভাবে-

‘আমি লেখক নই, ভাষা নাই সৌন্দর্য বর্ণনা করতে,
মহানুভবের শিক্ষা নিতে হবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মকে।
কী অমায়িক আর সাবলীল কথা কলমের কালিতে!
তবুও কেন বলতে গুছিয়ে পারো না লিখতে!’

আমার দেখা নয়াচীন গ্রন্থের ২৫নং পৃষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু হংকংয়ের কোলন হোটেলে উঠে তার সুখানুভূতি বর্ণনা করেছেন এভাবে ‘…হংকংয়ে বহু দোকান দেখলাম সিন্ধু প্রদেশের হিন্দুদের। আমাদের পেয়ে তারা খুব খুশি হলো। …আমরাও তাদের সান্ত্বনা দিলাম, বললাম, দেশ সকলের, আপনারা ফিরে গেলে নিশ্চয়ই আপনাদের ঘরবাড়ি ফিরে পাবেন।’

আফরোজা নাইচ রিমা তার কবিতার আলোয় আমার দেখা নয়াচীন কাব্যগ্রন্থে বঙ্গবন্ধুর আমার দেখা নয়াচীন গ্রন্থ অবলম্বনে  ‘কোলন হোটেল’ কবিতায় লিখেছেন-

‘… সিন্ধু প্রদেশের হিন্দুদের হংকংয়ে দোকানি করতে,
খুশি হলো তারা তোমাদের দেখতে পেয়ে।
…আশায় বুক  বাঁধে তারা,
পাকিস্তানে ফিরে যেতে চায় যারা।
…রাত নয়টায় ফিরে এসে হোটেলে
খেয়ে-দেয়ে আর ঘুমে ক্লান্তি দূর করলে।’

বাংলা ভ্রমণাঙ্গনে বঙ্গবন্ধুর আমার দেখা নয়াচীন গ্রন্থটি বর্তমান প্রজন্মের কাছে ধরা দিয়েছে প্রভাবক গ্রন্থ হিসেবে। যেন যে কোন বয়সের কাছে দেখা দিয়েছে একদিকে ভ্রমণ; অন্যদিকে সাহিত্যরসে ভরপুর প্রেমময় এক গল্পগাঁথা। বঙ্গবন্ধু তার বইয়ের ২৮নং পৃষ্ঠায় লিখেছেন– ‘হংকংয়ে ফুল দেওয়াটা হলো ‘প্রেম ‍নিবেদন’। ফুলটা গ্রহণ করলেই ওরা মনে করবে আপনি তার সাথে যেতে রাজি হয়েছেন। এমনি এক ঘটনা ঘটলো আতাউর রহমান সাহেবের সাথে।আফরোজা নাইচ রিমা তার বইয়ের প্রেম নিবেদন কবিতায় ঘটনাটিকে তুলে ধরেছেন এভাবে-

‘হঠাৎ ১৬ কী ১৭ বছরের এক মেয়ে,
আতাউর রহমান সাহেবের কোটে ফুল দিল লাগিয়ে।
…হংকংয়ে এভাবেই ফুল দিয়ে করা হয় রাজি,
ফুলটা গ্রহণ করলেই মনে করা হতো আতাউর রহমান সাহেব প্রেম নিবেদন- এর ডালা করেছেন সাজি।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার সমাজ সম্পর্কে বাস্তবসম্মত সচেতনতার এবং সাহিত্যালোকের উদ্ভাসিত দলিল ‘আমার দেখা নয়াচীন’ গ্রন্থটি ১৯৫২ সালে ৩২ বছর বয়সে ভ্রমণ কাহিনীতে চীনের সমাজ, সরকার, ধনী-গরিব, শ্রমিক, কৃষক, ব্যবসায়ী, সরকারি কর্মচারি, হাসপাতাল, কলকারখানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রেলব্যবস্থা সবকিছু দেখেছেন উদীয়মান কিরণ আলোর মতো সকল স্তরের মানুষকে আলোকিত করার এবং নতুন পথের সন্ধানের সমাজ উন্নয়নের এক অনুপম দৃষ্টান্ত।

আমার দেখা নয়াচীন গ্রন্থের ৩০ পৃষ্ঠায় শেখ মুজিবুর রহমান লিখেছেন— ‘পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে খুবই খেয়াল । গাড়িতে খাবার ঘরও আছে।…টিকিট চেকার সাহেব মাঝে মাঝে ঘুরে যান। তবে যতদূর জানলাম বিনা টিকিটে কেহ ভ্রমণ করে না।’

আফরোজা নাইচ রিমা তার কবিতার আলোয় আমার দেখা নয়াচীন কাব্যগ্রন্থে ‘নয়াচীনের রেল’ কবিতায় ছন্দের তালে তুরে ধরেছেন এভাবে-

‘ নরম ক্লাস আর শক্ত ক্লাসে নয়াচীনের রেল বিভক্ত,
ভাড়ায়ও ব্যবধান আছে দ্বিগুণ ততো।
…টিকেট চেকার মাঝে মাঝে যায় ঘুরে
বিনা টিকিটে কেউ যাতে না যায় দূরে।’

…ভীষণ সৎ আর যোগ্য লোক তারা ,
নয়াচীনের লোকেরা রেলের ব্যবস্হায় হয় না দিশেহারা।’

সাম্য, সমতা, সততা, অসাম্প্রদায়িকতা ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনই ছিল বঙ্গবন্ধুর একমাত্র স্বপ্ন-যা লেখকের আমার দেখা নয়াচীন গ্রন্থের পরাধীন পূর্ব বাংলার মানুষদেরকে উন্নত জীবন ব্যবস্থা এবং স্বাধীন করার এক বলিষ্ঠ আহ্বানের ভ্রমণ কাহিনীসমেত অদম্য সাহস যোগানো এক গ্রন্থ।

আফরোজা নাইচ রিমা তার কবিতার আলোয় আমার দেখা নয়াচীন কাব্যগ্রন্থে ‘ নয়াচীনের রেল’ কবিতায় সমতার কথা তুলে ধরেছেন এভাবে-

‘নরম ক্লাস আর শক্ত ক্লাসে নয়াচীনের রেল বিভক্ত,
ভাড়ায়ও ব্যবধান আছে দ্বিগুণ ততো।
…নরম ও শক্ত ছাড়া
ট্রেনগুলোতে প্রায় সমান সুবিধা।’

‘আমার দেখা নয়াচীন’ গ্রন্থে বঙ্গবন্ধু নিজেকে চিনিয়েছেন নানানভাবে। কোনো পাঠক যেনো বিরক্তি নিয়ে না পড়ে তার এই ভ্রমণকাহিনী, সেজন্য মনে হয় সচেতনভাবে লেখার মধ্যে এনেছেন রসবোধের সমাহার। গ্রন্থের ৩৮ পৃষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু লেখেন- ‘ মানিক ভাইয়ের কথা কিছু না বললে অন্যায়  হবে। মানিক ভাই যে এত খেতে পারেন, সে ধারণা আগে আমার কোনোদিন ছিল না। হয়তো কোনোদিন একটা মুরগীই খেয়ে ফেলে, সাথে সাথে ডিম, মাছ, ফলফলাদি, বসে বসে শুধু খায় আর খায়। মানিক ভাই বলেন, ‘বেশি কথার কাম নাই। খাবার সময় গোলমাল করো না। চুপচাপ খাও, সময় পাওয়া গেছে। দেশে লীগ আমলে কী খেতে পাই মনে নাই।’

আফরোজা নাইচ রিমা তার কাব্যগ্রন্থে মানিক ভাই সমাচার কবিতায় রসবোধকে চিত্রিত করেছেন এভাবে –

‘ …মানিক ভাই লিখতে পারেন ভালো,
এতো খেতে পারেন জানা ছিল না কারো।
ট্রেনে বসে খেতে শুরু করলেন সমানে,
মনে হয় ২/৩ ঘণ্টা খেয়েই চললেন।
মানিক ভাই হলো কী পেটে!
দুর্ভিক্ষ হয়েছে, বললেন উত্তরে।’

চিয়াং কাইশেকের পতনের পর বিপ্লবের মধ্য দিয়ে মাও সেতুং এর নেতৃত্বে নয়াচীনের আপামর জনগণের মনোজগতে আসে বিশাল পরিবর্তন। ধনী-গরিব, মহাজন-কৃষক, মালিক-শ্রমিকের মধ্যে ব্যবধান যেমন কমে আসে, তেমনি কৃষিজমি, কলকারখানা; মালিক-শ্রমিক,মহাজন-কৃষকের অধিকারে আসে। মাত্র তিন বছরে নয়াচীন প্রতিটি ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরশীল হতে থাকে। আমার দেখা নয়াচীন গ্রন্থের ৫১ পৃষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু গদ্যে এঁকেছেন এভাবে-

‘আমার একটা অভ্যাস আছে, নিজের দাড়ি নিজেই শেভ করি, কোনোদিন সেলুন বা কোথাও শেভ করি না।আমার যে ব্লেড ছিল তাহা হঠাৎ ফুরিয়ে গেল। আমি বাজারে গেলাম ব্লেড কিনতে। সমস্ত দোকান খুঁজলাম, ব্লেড পেলাম না।’ এ প্রেক্ষিতে দোকানদার বলে, ‘আমাদের নিজেদের ঘরে যে ক্ষুর তৈরি হয় তা দিয়েই শেভ করি।…’ বঙ্গবন্ধুর লেখা ‘ আমার দেখা নয়াচীন ’ থেকে আফরোজা নাইচ রিমা বঙ্গবন্ধুর অনুষঙ্গগুলোকে উপজীব্য করে তুলে ধরেছেন তাঁর ‘দাড়ি নয় চাড়িও কাটবে না ’ কবিতায়-

‘ …একদিন ফুরিয়ে গেল শেভিং ব্লেড তোমার,
এক দোকানে তিন চার বৎসরের একটা পুরোনো জংধরা ব্লেডের অপেক্ষা শেষ হলো পাওয়ার।
হাতে নিয়ে দেখলে বেহাল অবস্থা ব্লেডটার,
দাড়ি তো দূরের কথা চাড়িও (নখ) কাটা যাবে না আর। ’

শেখ মুজিবুর রহমানের ‘ আমার দেখা নয়াচীন ’ গ্রন্থটি সফল মানুষের জীবনকথা। যেখানে প্রতিটি ব্যক্তি মানুষের চেতনাকে রাষ্ট্রের স্বার্থে বৃহৎ পরিমার্জনায় তুলে ধরা হয়েছে ৮৯-৯০ পৃষ্ঠায় এভাবে- ‘নয়াচীনে একখন্ড জমি দেখলাম না, যা অনাবাদি অবস্থায় পড়ে আছে। রেললাইনের পাশে যে গর্তগুলি পড়ে থাকে সেগুলিতেও ফসল করা হয়েছে।…নয়াচীনে একটা সামঞ্জস্য বিধান করেছে। কৃষক যা বিক্রি করে তার দাম দিয়ে ভালোভাবে অল্প দামে তেল, নুন, কাপড় কিনতে পারে।’

আফরোজা নাইচ রিমা লাঙল যার জমি তার কবিতায় অংকন করেছেন এভাবে–

‘নয়াচীনের এখন্ড জমিও যদি থাকতো পড়ে,
স্বামী ও স্ত্রীকে দেয়া হয়েছে ভাগ করে।
…লাঙল যার জমি তার এই প্রথা প্রবর্তনে,
নয়াচীন সরকার কৃষিব্যবস্থায় কাজ করলো সযতনে।’

শুধুমাত্র আইন করে নয়, জনমত গঠন করে মানবিক ব্যবহার, রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা পরিবর্তন, কর্মসংস্থান, বাসস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে নয়াচীনের ভিক্ষাবৃত্তি, ডাকাতি, বেকার সমস্যা আফিম হতে মুক্তি, বেশ্যাবৃত্তিকে নির্মূল করতে সক্ষম হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু তার গ্রন্থের ৯৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন-‘ আইন করে কোনো অন্যায় কাজই বন্ধ করা যায় না, অন্যায় বন্ধ করতে হলে চাই সুষ্ঠু সামাজিক কর্মপন্থা, অর্থনৈতিক সংস্কার ও নৈতিক পরিবর্তন।’

আফরোজা নাইচ রিমার ‘আফিম হতে মুক্তি’ তেও রয়েছে একই ঝংকার-

‘আফিমখোর বলে চীন ছিল জগৎ বিখ্যাত,
খোঁজ নিয়ে জানা গেল এখন তারা ক্ষান্ত।
…আফিম হতে চীন পেয়েছে মুক্তি,
চির উন্নত চীনের গণজোয়ারের যুক্তি।’

বঙ্গবন্ধু তার আমার দেখা নয়াচীন গ্রন্থের ৬০ পৃষ্ঠায় নয়াচীনের বৈষম্যহীন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা তুলে ধরেছেন এভাবে-‘এক এক দেশে এক এক প্রকারের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট শ্রেণি (প্রিভিলেজড ক্লাস) আছে-যেমন আমাদের দেশে অর্থশালী জমিদাররা ‘প্রিভিলেজড ক্লাস’; কিন্তু নতুন চীনে দেখলাম শিশুরাই  ‘প্রিভিলেজড ক্লাস’ ।এই  ‘প্রিভিলেজড ক্লাস’ টা সরকারের নানা সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকে।

আফরোজা নাইচ রিমা তার ‘প্রিভিলেজড ক্লাস’ কবিতায় তুলে ধরেছেন এভাবে-

‘নয়াচীনের শিশুরাই প্রিভিলেজড ক্লাসে পড়ে
সরকারের হুকুমে প্রত্যেক ছেলে-মেয়েকে স্কুলে দিতে হবে।
পোশাক, খাবার সবই সরকার দেয়,
নতুন মানুষের শিক্ষিত একটা জাতি হয়ে গড়বে নয়াচীনের চেহারায়।’

চীনের শান্তি সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিবৃন্দ শান্তির স্বপক্ষে বক্তৃতা দেন। বঙ্গবন্ধু নিজেও বক্তব্য রাখেন তার মাতৃভাষা বাংলায় । বঙ্গবন্ধু তার গ্রন্থের ৪৩ পৃষ্ঠায় লেখেন এভাবে- ‘ বাংলা আমার মাতৃভাষা। মাতৃভাষায় বক্তৃতা করাই উচিত। কারণ পূর্ব বাংলার ভাষা আন্দোলনের কথা দুনিয়ার সকল দেশের লোকই কিছু কিছু জানে।’

আফরোজা নাইচ রিমা তার কাব্যগ্রন্থে  ‘বাংলা আমার মাতৃভাষা’ কবিতায় তুলে ধরেছেন কাব্যধর্মে কিছু নতুনত্ব দিয়ে-

‘…তুমিও দিলে বক্তৃতা বাংলায়,
ভারত থেকে মনোজ বসুও বাংলা ভাষায়।
…জাতীয়তাবোধ এভাবেই ফুটে ওঠে,
বাংলা আমার মাতৃভাষা জানুক লোকমুখে।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘আমার দেখা নয়াচীন’ গ্রন্থে বঙ্গবন্ধুর ভ্রমণবিষয়ক কাহিনীর আঁকা ছবি যেমন দেখতে পাওয়া যায়, তেমনি তার অভিজ্ঞতা পরবর্তীতে রাজনৈতিক চেতনায় শোষণহীন সমাজ গ্রহণ করতে সাহায্য করেছিল। বঙ্গবন্ধুর ‘আমার দেখা নয়াচীন’ গ্রন্থ একদিকে যেমন লাঞ্ছিত-বঞ্চিত মানুষের মুক্তির দলিল, অন্যদিকে আদর্শ রাজনৈতিক চিন্তার দর্পণও বলা চলে। এককথায় সমাজ-রাষ্ট্র এবং একটি দেশের উ্ন্নয়নের জন্য চিন্তা উদ্রেককারী একটি অবিনাশী গ্রন্থ। আফরোজা নাইচ রিমা  লিখিত কবিতার আলোয় আমার দেখা নয়াচীন মোটামুটি চার ফর্মার বই। ছোট পাতলা গ্লসি পেপার সম্বলিত কালারফুল একটি কাব্যগ্রন্থ- যা পাঠক চাহিদাসম্পন্ন করতে সক্ষম হবে বলে আমার বিশ্বাস। যেখানে আফরোজা নাইচ রিমা বঙ্গবন্ধুর  ‘আমার দেখা নয়াচীন’ গ্রন্থ অবলম্বনে লিখিত কবিতার আলোয় আমার দেখা নয়াচীন গ্রন্থে কাব্যচিত্রে এঁকেছেন নতুনত্ব- যা আগে ঠিক এমনভাবে দেখা যায়নি। ভীষণ মেধা এবং চ্যালেঞ্জ-আবিষ্ট কর্মফল কবিতার আলোয় আমার দেখা নয়াচীন কাব্যগ্রন্থটি। এককথায়  কবিতার আলোয় আমার দেখা নয়াচীন  গ্রন্থটিকে কবিতার বই না বলে,  একটি সিনোপসিস ( synopsis) বললেও ভুল হবে না। কলমের এমন ছোট ছোট ছন্দের আঁচড়ে ‘আমার দেখা নয়াচীন’ গ্রন্থকে স্বল্প পরিসরে হলেও সামগ্রীকভাবে বঙ্গবন্ধুর ‘আমার দেখা নয়াচীন’ গ্রন্থকে একসাথে ছন্দময় করে তোলার নতুন প্রয়াস-যেখানে লেখিকার ব্যতিক্রমি দক্ষতা চোখে পড়ে এবং একইসাথে ‘শান্তির পৃথিবী চাই’-বঙ্গবন্ধুর দেখা চীনে অনুষ্ঠিত সেই শান্তি সম্মেলনের অন্তসুর বেজে উঠেছে  ‘কবিতার আলোয় আমার দেখা নয়াচীন’ গ্রন্থে । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের  ‘আমার দেখা নয়াচীন’ গ্রন্থ অবলম্বনে রচিত আফরোজা নাইচ রিমা তার সৃষ্টি, শিল্প, কাব্যময়তায় বাংলা সাহিত্যের নতুন ধারারই উন্মোচক।