বাবা-মার মাধ্যমেই পৃথিবীতে সন্তানের আগমন। আগমনের পরও সন্তানের লালন-পালন, পরিচর্যা এবং চলাফেরা থেকে শুরু করে যাবতীয় শিষ্টাচার শিক্ষা দেয়ার কাজটাও করে বাবা-মা। একজন মানুষের জীবনে সবচেয়ে বেশি অবদান এ দু’জনের। তাদের অবদানের কোনো তুলনা হয় না। সন্তানের ভালবাসার ক্ষেত্রে কোনো ঘাটতি তারা রাখেন না। সেকারণেই আল্লাহ তায়ালা পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণের কর্তব্যের কথা তাওহীদের পরেই উল্লেখ করেছেন।
সূরা নিসার ৩৬ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে: তোমরা আল্লাহ তায়ালার ইবাদত কর, তার সাথে কাউকে শরীক করিও না এবং পিতামাতার সাথে সদাচরণ কর।
পিতামাতার প্রতি সন্তানের অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্য। পৃথিবীতে জীবনে যার যত বেশি অবদান, তার জীবনে সেই মানুষের অধিকারও তত বেশি। স্বাভাবিকভাবেই পিতামাতার হক বা অধিকার অন্য যেকোন মানুষের চাইতে বেশি। অনেকে এ ব্যাপারটা বুঝতে চায় না। তারা মনে করেন, জীবন ধারণের ক্ষেত্রে তারা যেহেতু স্বাধীন, সেই অজুহাতে পিতা-মাতার প্রতি কর্তব্য পালন করতে গেলে তাতে তারা আত্মস্বাধীনতা খর্ব হয় বলে মনে করেন।
তারা একবারও এটা ভেবে দেখেন না, পৃথিবীতে তাদের জনম দিলেন কারা? পৃথিবীতে তারা যখন দুর্বল থেকে দুর্বলতর ছিলেন, এক নিস্তেজ শিশু ছিলেন, সেই অবস্থা থেকে তাদের লালন পালন করে চলাফেরার স্বাধীনতা শিখিয়ে দিলেন কারা? বড়ই দুর্ভাগ্যের বিষয়- যাদের উসীলায় সকল স্বাধীনতা পেলেন, সেই বাবা-মায়ের প্রতি কর্তব্যপালনে সংকোচবোধ করেন!
পিতামাতার প্রতি সন্তানের কর্তব্যসমূহের সর্বপ্রথমটি হলো তাদের প্রতি সদ্ব্যবহার করা। সদ্ব্যবহার বা সদাচরণের অনেক দিক রয়েছে। যত দিকেই সম্ভব সবদিক থেকেই সদাচরণ করা জরুরি। কেননা পিতামাতার প্রতি সদাচরণ আল্লাহ তায়ালার কাছে সবচাইতে পছন্দের আমলগুলোর একটি।
হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে: একবার রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হলো, আল্লাহ তা’আলার কাছে সবচেয়ে প্রিয় আমল কোনটি? প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জবাব দিলেন, ওয়াক্তমত নামায আদায় করা আল্লাহর কাছে সবচাইতে বেশি পছন্দের। তারপর জিজ্ঞেস করা হলো, এই আমলটির পর সবচাইতে প্রিয় আমল কোনটি? তখন প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জবাব দিলেন, পিতামাতার প্রতি সদাচরণ করাই আল্লাহর কাছে এরপর সবচাইতে প্রিয় আমল। সহীহ মুসলিম
পিতামাতার প্রতি সন্তানের সদাচরণের প্রথম দিক হচ্ছে কথার মাধ্যমে সদাচরণ। সন্তান তার মুখ থেকে এমন কথা বলবে না, যেকথায় তাদের মনোকষ্ট হয়। যেকথা শুনবার জন্যে তারা প্রস্তুত নন, সেকথা না বলাই দায়িত্ব। তাদের সাথে কোনো বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করার প্রয়োজন হলে তাতে সুন্দরভাবে ভালো কথার মাধ্যমে দ্বিমত পোষণ করা যায়। কিন্তু কোনোভাবেই তাদের সাথে ঝগড়াঝাটি করা অথবা তর্ক করতে যেয়ে গালিগালাজ করা কিংবা অশ্রাব্য ভাষার ব্যবহার কাম্য নয়।
বিশেষ করে তাদের উপস্থিতিতে অযাচিত কথাবার্তা কিংবা মূর্খতাপূর্ণ কথা না বলা।
শুধুমাত্র কথার মাধ্যমেই নয়। আচার-ব্যবহার ও কাজের মধ্য দিয়েও পিতামাতার প্রতি সদাচরণ করা সন্তানের কর্তব্য। এক্ষেত্রে সন্তানের উল্লেখযোগ্য দায়িত্ব হচ্ছে বাবা-মায়ের সঙ্গ দেয়া, তাদের জীবনধারণের জন্যে প্রয়োজনীয় আর্থিক খরচ বহন করা, তাদের কষ্ট হয় এমন বিষয় লাঘবের প্রয়াস করা এবং যাবতীয় বিষয়ে তাদের পাশে থাকা ইত্যাদি।
এই পর্যায়ে সন্তানের জন্যে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হচ্ছে ইন্তেকালের পর পিতামাতার জন্য দোয়া করা। হাদিস শরীফে আছে: মৃত্যুর পর প্রত্যেক মানুষের আমলনামায় আমল যোগ হবার রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি রাস্তা ছাড়া। এক. সদকায়ে জারিয়ার রাস্তা। দুই. উপকারী আমলের রাস্তা। তিন. বাবামায়ের জন্যে নেকসন্তানের দোয়া করার রাস্তা। সহীহ মুসলিম
এই তিন পদ্ধতিতে মানুষের নেক আমল মৃত্যুর পরও বন্ধ হয় না। যারাই মৃতব্যক্তির জন্যে এই তিন পদ্ধতিতে যা কিছু করবে, তার সওয়াব মৃতব্যক্তি অবশ্যই পাবেন। তাই প্রত্যেক সন্তানের উচিত, পিতামাতার জন্যে সার্বক্ষণিক দোয়া করা।