খায়রুল বাসার। মূকাভিনেতা থেকে ছোটপর্দার প্রিয় মুখে পরিণত হয়েছেন অল্প সময়ে। ২০১৭ সাল থেকে টুকটাক অভিনয় করলেও সম্প্রতি বেশকিছু নাটক ও ওয়েব কন্টেন্ট তাকে আলোচনায় এনে দিয়েছে। বিশেষ করে খায়রুল বাসারের অন্যতম কাজ ভিকি জাহেদের ‘চরের মাস্টার’ ও আশফাক নিপুণের জনপ্রিয় ওয়েব সিরিজ ‘মহানগর’। এছাড়া ঈদে প্রচারিত তার কাজগুলো নিয়ে বেশ আলোচনা লক্ষ করা যাচ্ছে। খায়রুল বাসার তার ক্যারিয়ার গ্রাফ ও আগামীর পথচলা নিয়ে কথা বললেন চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে…
ঈদের কাজগুলো নিয়ে বলুন, কেমন ফিডব্যাক পাচ্ছেন? কাজের অভিজ্ঞতাও জানতে চাই…
দ্রুত সময়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা কম। আগে একটা কাজের পর কয়েকমাস গ্যাপ থাকতো। কিন্তু এখন ঈদে ১০-১২দিন টানা কাজ করেছি। এক চরিত্র থেকে আরেক চরিত্রে যাওয়া অনেক টাফ। অভিনয়ে এখন আমি হামাগুড়ি দিচ্ছি। প্রাইমারি শিক্ষা পার করতে পেরেছি বলে মনে হয় না। অনেক কিছু শেখার বাকি। তবে প্রচুর কাজের চাপ ছিল। চেষ্টা করলাম। চয়নিকা আপার (চয়নিকা চৌধুরী) অন্ধজাল ছবি, আরিয়ান (মিজানুর রহমান আরিয়ান) ভাইয়ের নট আউট এগুলো প্রচার হয়েছে, সবাই খুব ভালো রিভিউ দিচ্ছে। দর্শক কাজগুলো দেখে উদযাপন করছেন সেই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা মুশকিল। কারণ, তাদের জন্যই কাজ করছি।
অনেক কাজের মধ্যে ‘স্মরণীয়’ কাজ কোনটিকে বলবেন? যেটির জন্য আপনি নিজেও অপেক্ষা করছেন?
মিজানুর রহমান আরিয়ান ভাইয়ের পরিচালনায় ‘যত্ন’। চ্যানেল আইতে প্রচার হবে ঈদের সপ্তম দিন রাত ৯টা ৩৫ মিনিটে। লকডাউনে ঘরবন্দি এক নব-দম্পতির গল্প। তাদের নানা খুনসুটি ছোট ছোট বিভিন্ন বিষয়। খুব চমৎকার একটা কাজ। এছাড়া মাহমুদ দিদার ভাইয়ের ‘প্রিয় ডাকবাক্স, নাজমুল হাসান বাপ্পী ভাইয়ের পরিচালনায় ‘আমি কোনো অভিনয় করিনি’, মাহিদুল মহিন ভাইয়ের ‘চুমকি চলেছে…’ ছাড়া আরও কয়েকটি কাজ আছে। এবার টিভির জন্য অনেকগুলো কাজ করেছি। আমার জন্য নতুন অভিজ্ঞতা।
ভিন্ন ভিন্ন কাজের ইচ্ছে সব অভিনয় শিল্পীরই থাকে। দর্শকদের প্রত্যাশা পূরণে আপনি বৈচিত্রময় চরিত্র উপহার দিতে পারছেন?
অনেকেই বলে থাকেন, আমার গল্প-চিত্রনাট্য নির্বাচন ভালো। বেছে কাজ করি, ভিন্নতা থাকে। কিন্তু এই নির্বাচনের কাজটি আমি করি না। দীর্ঘ সময় যাবৎ অপেক্ষা করি ঠিকঠাক কাজ আসুক। অনেক কাজের প্রস্তাব পেলেও আন্তরিকতা রেখে করি না। অভিনয় করতে এসেছি, করছি দায়িত্বের জায়গা থেকে। আমি সবসময় ভালো গল্পের সঙ্গে থাকতে চাই। যেগুলো চারপাশের বিভিন্ন সংকট বা মনস্তাত্ত্বিক গল্প হতে পারে। এই ধরনের কাজ দীর্ঘ সময় পর পর আসে। সামনে যে কাজগুলো আসবে মনে হচ্ছে আরও ভিন্ন কিছু দিতে পারবো। লকডাউন শেষ হলে ব্যতিক্রমী কাজ বলতে যা বোঝায়, এসব কিছু করবো।
অল্প কাজ আপনাকে তুলনামূলক বেশি পরিচিতি এনে দিয়েছে। এখন অনেকটা একাদশে বৃহস্পতি! কিন্তু টার্নিং সময় কোনটি বলে মনে করেন, যেটি দিয়ে সবচেয়ে বেশি মানুষের কাছে পৌঁছেছেন!
আমার প্রথম ফিকশন ২০১৭ সালের। এ কাজের জন্য অপেক্ষা করে আসছি সেই ২০১২ থেকে। এরমধ্যে অনেক চরিত্র পেতাম কিন্তু করতাম না। যে চরিত্র আমি মূল্যায়ন করতে পারতাম না, সেটি করতাম না। কেন্দ্রীয় চরিত্র ছাড়া আমাদের গল্পে অন্যান্য চরিত্রগুলো গল্পের তেমন প্রভাবক না। তাই পছন্দ হতো না বলে করতাম না। কিন্তু নাটকে প্রত্যেক পারফর্মারের অভিনয় গুরুত্বপূর্ণ। প্রভাবক টার্নিং কাজ হচ্ছে ‘পুনরাবৃত্তি’, পরিচালনায় ছিলেন সালেহ সোবহান অনীম ভাই। কাজটির জন্য শাওকী ভাই আমাকে ডেকেছিলেন। তারা দুজন একই হাউজের ছিলেন। এরপর ‘কথা হবে তো’ (অস্থির সময়ে স্বস্তির গল্প) করেছিলাম। এছাড়া ঊনপঞ্চাশ বাতাস, ইতি তোমারই ঢাকা তে কাজ করি। ক্লোজ আপ কাছে আসার গল্প করি দুটি। এই কাজগুলো সাধারণ দর্শকদের কাছে নিয়ে আসে। রাহিতুল ভাইয়ের উপন্যাসে ‘চরের মাস্টার’-ও খুব ভালো সাড়া পাই। এছাড়া মাকড়সা, ডার্ক সাইড অব ঢাকা, বিলাপ ওটিটির এসব কনটেন্ট দেখেও মানুষ প্রশংসা করেছেন। সর্বশেষ আশফাক নিপুণ ভাইয়ের ‘মহানগর’। এখনও মানুষ দেখছে, মানুষের মন্তব্য পাচ্ছি প্রতিনিয়ত।
মহানগরে কাজের অভিজ্ঞতা বলুন…
এত সাড়া পাবো কল্পনাও করিনি। এই কাজটির মাধ্যমে প্রচুর মানুষের কাছে পৌঁছাতে পেরেছি। কলকাতা থেকেও অনেক মানুষ আমাকে মেসেজ করেছে। সব অভিজ্ঞতা আসলে ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।
নতুনদের কাজ করতে অনেক সীমাবদ্ধতা মোকাবেলা করতে হয়। আপনি কী কী ফেইস করছেন?
সব কাজেই সীমাবদ্ধ থাকে। এটা নিয়ে কিছু বলার নেই। সীমাবদ্ধতা ই আমাকে নতুন করে পথ দেখাচ্ছে সামনে কীভাবে এগিয়ে যেতে হবে। যতটুকু এসেছি সীমাবদ্ধতার মধ্যে দিয়ে এসেছি। এসব ছিল বলেই হয়তো আমি আসতে পেরেছি। জানি সামনে আরো সীমাবদ্ধতা ফেইস করতে হবে। এগুলোকে আমি অভিজ্ঞতা হিসেবেই নিচ্ছি। এর বেশি কিছু বলা অন্যায় হয়ে যাবে।
নাট্যাঙ্গনে প্রায়শই ‘সিন্ডিকেট’ শব্দটি শোনা যায়। কাজ করতে এসে এমনটা অনুভব করেছেন কখনও?
খুব বেশি কাজ আমার করা হয়নি। সেজন্য হয়তো এসব বিষয় এখনো ঠিকভাবে বুঝে উঠতে পারিনি। যদি এমন কিছু দেখি অবশ্যই এড়িয়ে যাবো। আমি আসলে আমার কাজটা ঠিক ভাবে করে যেতে চাই।
নতুন শিল্পীদের সাথে সিনিয়র বা জনপ্রিয় সহশিল্পীরা কাজ করতে চান না, এমনটা অনেকসময় শোনা যায়। আপনার ক্ষেত্রে এমনটা হয়েছে?
আমাকে সবাই দারুণভাবে গ্রহণ করছেন, আর এটা খুব ভালো লাগার। লুৎফর রহমান জর্জ ভাই, মোশাররফ করিম ভাই, ইন্তেখাব দিনার ভাই, সাদিয়া ইসলাম মৌ আপু, ঈশিতা আপু, তানভীন সুইটি আপু, মেহজাবীন আপু প্রত্যেকের সাথে কাজের সৌভাগ্য হয়েছে। সবাই আমার প্রতি খুব আন্তরিক ছিলেন। আমি যেন সমস্যা অনুভব না করি এটাও তারা আমাকে বারবার বলে দিচ্ছিলেন।
২০১২ থেকে অভিনয় করতে চাচ্ছিলেন। শুরু থেকে নায়ক, নাকি অভিনেতা হতে চেয়েছিলেন?
নায়ক হওয়ার চিন্তা কখনোই ছিল না, এখনো নেই। পরিপূর্ণ অভিনেতা হতে চেয়েছি সবসময়। গল্পনির্ভর কাজে বেশি থাকতে চাই। এই স্বপ্ন পূরণে অল্প সময়ে যেতুটুকু পাচ্ছি ততটুকু আমার জন্য অনেক। অল্প কাজ দিয়ে মানুষের যে ভালোবাসা পেয়েছি, মনে হয় এতো ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য আমি না। আমি বুঝতে পারছি দর্শকদের ভালোবাসা পাওয়াটা সৌভাগ্যের এবং সেটা আমি পাচ্ছি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কিছু ভালো গল্পে অভিনয় করে যেতে চাই। এটা করতে পারলে নিজেকে অভিনেতা হিসেবে সার্থক মনে করব।