‘বাংলাদেশ ভালো দল। এই গোলে ওরা (বার্তা) কেন নেবে? আমার দলের গোল আমি বুঝব। বাংলাদেশ বুঝবে আমার খেলা। নিশ্চয়ই ওরা ম্যাচ দেখেছে। গোল সংখ্যাটা আমার মনে হয় না বাংলাদেশের কাছে ফ্যাক্টর হবে।’
মেয়েদের সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপের উদ্বোধনী ম্যাচে ভুটানের বিপক্ষে ১০-০ গোলে জয়ে এমন প্রতিক্রিয়াই দিয়েছেন ভারতের কোচ শুক্লা দত্ত। পরবর্তী ম্যাচের প্রতিপক্ষ বাংলাদেশকে নিয়ে তিনি আবারও সমীহ করলেন।
১০ গোলের জয় কতটা প্রত্যাশিত ছিল- এ প্রশ্নের জবাবে টিম ইন্ডিয়ার বাঙালি কোচের সাফ উত্তর, ‘প্রত্যাশিতও নয়, অপ্রত্যাশিতও নয়। আমরা নিজেদের খেলাটা ভালো খেলেছি। তাছাড়া আর কিছু না। শুধু বাংলাদেশ নয়, নেপালের বিপক্ষেও বড় জয় অনুপ্রেরণা জোগাবে।’
স্বাগতিকদের বিপক্ষেই নয়, ফাইনালের আগে সব ম্যাচ জয়ের লক্ষ্যের কথাই স্পষ্টভাবে বললেন ভারতের কোচ। তার ভাষ্য, ‘তিন ম্যাচের পরে কি হবে, জানি না। আমি জয়ের লক্ষ্য নিয়েই এসেছি। ’
শুক্লা দত্তের পূর্বপুরুষের শিকড় ফরিদপুর জেলায়। এর আগেও তিনি অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সঙ্গে এএফসির বাছাইপর্বের ম্যাচের জন্য এসেছিলেন। সেবার বাংলাদেশের সঙ্গে জিতেছিল ভারত। লাল-সবুজের দলকে নিয়ে অবশ্য তিনি বেশ সতর্ক অবস্থানেই থাকলেন।
‘কোনো সন্দেহ নেই, বাংলাদেশ ভালো দল। খুব ভালো উন্নতি করেছে। সাফে কয়েকবার ট্রফি পেয়েছে। নিশ্চয়ই ভালো দল, তা না হলে এত ট্রফি কেন পাবে। সেদিক থেকে আমার প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেড়ে গেল। আমার আকাঙ্ক্ষা ও লক্ষ্য বাড়ল।’
‘বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-১৭ দলের খেলা আমি যা দেখেছি, ওরা খুব ভালো খেলছে। ওদের দিক-নির্দেশনা খুব ভালো, আমি দেখেছি। তাদের সম্পর্কে জেনেছি। ’
২০২১ সালের ডিসেম্বরে ঢাকায় হওয়া মেয়েদের সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম আসর বসেছিল। ভারতকে হারিয়ে সেবার বাংলাদেশ হয় চ্যাম্পিয়ন। আগের সেই টুর্নামেন্টের ৪-৫ জন ফুটবলার বর্তমান দলে আছেন বলেও জানান শুক্লা।
কমলাপুরের মানহীন টার্ফ নিয়ে যেকোনো আসর শুরুর আগে আলোচনা নিয়মিত এক ঘটনা। টার্ফ নিয়ে জানতে চাইলে ভারতের কোচ বৃহস্পতিবার বলেছিলেন, ‘অনুশীলনের সময় আমার কাছে মনে হয়েছে এখানে রাবারের পরিমাণ বেশি। বল বেশি বাউন্স করবে। গোয়াতে টার্ফেই অনুশীলন করে এসেছি।’
ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনেও আসে টার্ফের প্রসঙ্গ। এদিন, ভারতীয় কোচের ব্যাখ্যা, ‘আমরা বলটা পজিশনের উপর রেখেছিলাম। অনুশীলনটাও আমরা কাল করেছি। বল ঠিকঠাক আদায় করাটা যাচ্ছে না। যখনই বল কেউ আদায় করছে, পা থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। পা যখন টার্ফে পড়ছে তখন সেটাও বাউন্স করছে। তখন বল বেরিয়ে চলে যাচ্ছে। এজন্য কয়েকটা বল আদায়ের সুযোগ হাতছাড়া হয়। এটা আমি উতরে নেয়ার চেষ্টা করছি।’
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ভবনে গত বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে শুক্লা জানিয়েছিলেন, গোয়ায় একমাসের ক্যাম্প করেছে ভারত। ইন্ডিয়ান উইমেন্স লিগে খেলা ফুটবলাররা দেরিতে ক্যাম্পে যোগ দেয়ায় পুরো দল নিয়ে অনুশীলন সম্ভব হয়নি। তাদের অনুপস্থিতি মোটেও অনুশীলনকে বাধাগ্রস্ত করেনি, বরং সুবিধাই হয়েছে।
কমলাপুরে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে শুক্রবার ম্যাচ শেষে তিনি জানালেন আরেকটি তথ্য। তার দলের মেয়েরা গোয়ার ক্যাম্পে টেম্পু একাডেমির ছেলেদের অনূর্ধ্ব-১৫ দলের বিপক্ষে একটি প্রীতি ম্যাচ খেলেছিল।
এদিকে, ভারতের কাছে বিশাল ব্যবধানে হারের পর মলিন মুখে হাজির হন ভুটানের কোচ তানকা মায়া ঘালি। হতাশা ঝরা কন্ঠে জানান, বাংলাদেশে আসার আগে তার দল ৩ সপ্তাহ অনুশীলনের সুযোগ পেলেও নিজেদের ভেতর একটা ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতাই নাকি ছিল মেয়েদের একমাত্র সম্বল।
সাফে মেয়েদের জাতীয় ও বয়সভিত্তিক আসরে ভুটানের অধিক সংখ্যক গোল হজম নিয়মিত এক ঘটনা। তবে কি দেশটিতে মেয়েদের ফুটবলের উন্নতি হচ্ছে না? বিষয়টি অবশ্য তানাকা মানতে নারাজ। বললেন, ‘ব্যাপারটা আসলে তেমন নয়। আমরা দেরিতে শিখছি। প্রতি ম্যাচ থেকেই আমরা ইতিবাচক দিক বের করি।’