মোসাম্মৎ সাগরিকার জোড়া গোলের সুবাদে মেয়েদের সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপের নিজেদের প্রথম ম্যাচে জিতেছে বাংলাদেশ। টুর্নামেন্টে শিরোপা ধরে রাখার অভিযানে নেপালকে ৩-১ গোলে হারানোর পর সংবাদ সম্মেলনে কথা বলার সময় এ ফরোয়ার্ড কথা বলতে গিয়ে লাজুক হাসি দিয়েছেন। কথা বলতে গিয়ে মাথা নিচু করে জড়তা কাটানোর চেষ্টাও করেন। একটা সময় নিজের ফুটবল খেলার শুরুর স্মৃতিচারণও করেন।
অনেক ক্ষেত্রেই মেয়েরা ফুটবল খেললে পরিবার ও সমাজ থেকে আসে বাধা। সমালোচনার যেন তীর হয়ে ছুটে যায়। সাগরিকার গল্পটাও এর ব্যতিক্রম নয়। নিজের মুখেই শোনালেন সেই অতীত। বললেন, ‘আমার বাবা-মা ফুটবল খেলতে দিতে চাইতেন না। খালা বলতেন মেয়েটিকে আমাকে দাও, সে ফুটবল খেলুক। বাংলাদেশের জার্সিতে খেলার পর মা–বাবার ভুল ভেঙেছে। আমি এতেই খুশি।’
একের পর এক আক্রমণ গড়লেও কাঙ্ক্ষিত গোলের দেখা পাচ্ছিল না লাল-সবুজের দল। ৪০ মিনিটে স্বপ্না রানির হেড পাসে ডি বক্সে থাকা সাগরিকা কোনো ভুল করেননি। ডান পায়ের ভলিতে বল জালে জড়িয়ে স্বাগতিকদের এগিয়ে দেন। উল্লাসে মাতে কমলাপুরের গ্যালারিতে থাকা দর্শকরা। তিন মিনিট পর মুনকি আক্তার আগুয়ান গোলরক্ষককে পরাস্ত করে বাঁ-পায়ের উঁচু শটে নিশানাভেদ করলে প্রথমার্ধে বাংলাদেশ ২-০ গোলে এগিয়ে থাকে।
বিরতির পর নেপাল গোল করে স্কোরলাইন ২-১ করলে বাঘিনীরা চাপে পড়ে। তবে সেই চাপ থেকে দলকে টেনে তোলেন সাগরিকা। সতীর্থ ইতি খাতুনের বাড়ানো বল নিয়ে গোলরক্ষককে ফাঁকি দিয়ে ফাঁকা পোস্টে বল জালে পাঠিয়ে জয়সূচক গোলটি করেন। গোটা ম্যাচে বেশ কয়েকটি সুযোগ নষ্ট না করলে অবশ্য তার হ্যাটট্রিকটা অনায়াসেই হয়ে যেতো।
ম্যাচ শেষে নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে সাগরিকার ভাষ্য, ‘দলকে জেতাতে পেরে ভালো লাগছে। হ্যাটট্রিক করতে পারলে আরও ভালো লাগতো। কিছু সুযোগ মিস করেছি, কিছু ভুলও করেছি। ভবিষ্যতে এই ভুলগুলো শুধরে নিতে চাই ।’
এদিকে, জয় দিয়ে এবারের সাফ শুরু করলেও দলের সার্বিক পারফরম্যান্সে পুরোপুরি নন বাংলাদেশের কোচ সাইফুল বারী টিটু। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘প্রত্যাশা অনুযায়ী স্কোরলাইন হয়নি, এরপরও প্রথম ম্যাচে জয় পাওয়ায় খুশি। নেপাল ৪০ মিনিট পর্যন্ত ম্যাচে ছিল। এরপর তারা খেই হারিয়ে ফেলে ।’
নেপাল কোচ বাল গোপাল সাহু হারের পর বলেছেন, ‘বাংলাদেশের মেয়েরা শারীরিকভাবে আমাদের চেয়ে এগিয়ে আছে। সেটাই ম্যাচ প্রভাব ফেলেছে।’
যদিও স্বাগতিক দলের কোচ বিষয়টি মানতে নারাজ ছিলেন। তার ভাষ্য, ‘নেপালই শারীরিকভাবে এগিয়ে, তারা পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষ। কেন এমনটা বলেছে জানি না। ’