চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

ঈদে জয়পুরহাটে ঐতিহ্যবাহী পাতা খেলা অনুষ্ঠিত

ঈদকে ঘিরে জয়পুরহাটে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী ‘পাতা খেলা’। এ খেলাকে ঘিরে এলাকা জুড়ে ছিল উৎসবের আমেজ। বিভিন্ন ধরনের দোকানিরা তাদের পসরা সাজিয়ে বসেছে।

খেলার সময় মাঠের চারপাশে নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোরের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। দীর্ঘদিন পর এমন খেলা দেখতে পেরে আনন্দিত হাজারো দর্শক।

সদর উপজেলার কোমরগ্রাম চারমাথা এলাকায় স্থানীয় দোকান সমিতি আয়োজিত এ খেলার উদ্বোধন করেন বম্বু ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোল্লা শামসুল আলম।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, খেলার জন্য মাঠের মাঝখানে লাগানো হয়েছে কলা গাছ।আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে এসেছেন ৫ দল তান্ত্রিক। তারা নিজ নিজ মন্ত্র দিয়ে মাঠের মধ্যে পাতারূপী তুলা রাশির ১০/১২ জন মানুষকে মাঠের মাঝখান থেকে নিজের দিকে টানার প্রতিযোগিতা করেন। যে তান্ত্রিক দল মন্ত্রের মাধ্যমে পাতাকে নিজেদের দাগের মধ্যে টানতে পারবে ও বশ করতে পারবে সেই তান্ত্রিকই পয়েন্ট পাবে। পরে পয়েন্ট হিসাব করে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।

এ জন্য তান্ত্রিকরা সঙ্গে লাঠি, জবা ফুল, মন্ত্র পড়া লোটা ভর্তি পানি, ধুলা, আগরবাতি, মোমবাতিসহ বিভিন্ন প্রকার গাছের শিকড় বাকড় ব্যবহার করেন। তার সঙ্গে পড়তে থাকেন নানা ধরনের মন্ত্র।

এ খেলায় বিজয়ী হয় আরিফুলের তান্ত্রিক দল ও পাতারূপী ফারুকের দল। তবে সব দলকেই পুরস্কার দেয়া হয়।

খেলা দেখতে আসা নাসির হোসেন বলেন, পাতা খেলার নাম আগে শুনেছিলাম। কিন্তু আজকে স্বচক্ষে দেখতে পেলাম, খেলাটি খুব মজার।

রানা হোসেন বলেন, আমাদের এই গ্রামে আগে কখনও পাতা খেলা হয়নি। তাই আগ্রহ নিয়ে দেখতে এসেছি প্রথমবার।

৭০ বছর বসয়ী দর্শক মাহফুজুর বলেন, যখন ছোট ছিলাম সেসময় ঐতিহ্যবাহী ও জনপ্রিয় ছিল পাতা খেলা। আগে এই খেলা বিভিন্ন গ্রামে নিয়মিত হতো। কিন্তু কালের বিবর্তনে আজ কোথাও দেখা যায় না। তাই অনেক দিন পর এমন খেলার কথা শুনে ছুটে এসেছি দেখতে।

আয়োজক কমিটির সদস্য এমদাদুল হক জানান, এতো মানুষ খেলা দেখতে আসবে কল্পনাও করতে পারিনি। অনেক আগে থেকে এই খেলার প্রচলন চলে আসছে। কিন্তু যুগ পাল্টানোর সাথে সাথে এই খেলা হারিয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে আয়োজন না করায় ঐতিহ্যবাহী খেলাটি আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। তাই খেলাটি টিকিয়ে রাখতে ও মানুষকে আনন্দ দিতে এই আয়োজন করা হয়েছে। আগামীতে আরও বড় পরিসরে এ খেলার আয়োজন করা হবে।