দিনের বেলায় মাঠে ব্যাটিং অনুশীলন, রাতে মাঠের বাইরেই পানিপুরি বিক্রি। যার নেশা ও পেশা দুটোই একবিন্দুতে মিলে গিয়েছিল মুম্বাইয়ের বিখ্যাত আজাদ ময়দানে। ১১ বছর বয়স থেকে জীবিকার পেছনে ছুটে চলা সেই কিশোরের স্বপ্ন ছিল একদিন ভারতের জার্সিতে মাঠ মাতাবেন। সেটি অবশ্য করে দেখিয়েছেন কিশোরটি। যার নাম যশস্বী জয়সওয়াল।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অভিষেক টেস্টে চমক দেখিয়েছেন জয়সওয়াল। খেলেছেন ১৭১ রানের রেকর্ডময় ইনিংস। ম্যাচে ইনিংস ব্যবধানে জয় পেয়েছে সফরকারী ভারত। টেস্টে ডাক পেয়ে ইতিহাস গড়ার আগেই আলোচনায় এসেছিলেন এই তরুণ। দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন আগেও।
২০১৯ সালে বিজয় হাজারে ট্রফিতে মুম্বাইয়ের হয়ে খেলেছিলেন স্বপ্নময় এক ইনিংস। সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে ৫০ ওভারের ক্রিকেটে ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েছিলেন। এরপর থেকেই শুরু হয় তাকে নিয়ে আলোচনা।
ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেট মাতানোর আগে জয়সওয়াল রাঙিয়ে গেছেন বাংলাদেশও। ২০১৮ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপে সর্বোচ্চ রান করে টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার জিতেছিলেন বাঁহাতি ব্যাটার।
উত্তর প্রদেশের ছোট্ট একটি শহর ভাদোহিতে জন্ম এবং বেড়ে ওঠা জয়সওয়ালের। ক্রিকেটের প্রতি প্রবল আগ্রহ থেকেই জীবনের পাথেয় করে নেয়ার আকাঙ্ক্ষা জাগে তার। ক্রিকেটে ক্যারিয়ার গড়তে ১১ বছর বয়সে বাবার হাত ধরে গ্রাম থেকে চলে আসেন মুম্বাইয়ে। শুরুতে থাকার জায়গা পাওয়াটাই ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
এরপর খোঁজ পান আজাদ ময়দানের। জানতে পারেন সেখানে মাঠকর্মীদের থাকার জন্য তাঁবুর ব্যবস্থা আছে। সেই তাঁবুই এরপর হয়ে ওঠে জয়সওয়ালের ঠিকানা। সেখানে কাটিয়েছেন তিন বছর!
আজাদ ময়দানের পাশে একটি স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন। স্কুলের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর মতো তারও ক্লাসরুমের চেয়ে বেশি সময় কাটতো খেলার মাঠে। নিজের মতো করতেন অনুশীলন। অন্যদের মতো শুধুই মনের আনন্দে খেলার ফুরসত ছিল না কিশোর জয়সওয়ালের। পেট চালানোর জন্য রাতে নিজেই বিক্রি করতেন পানিপুরি, আর দিনে করতেন ব্যাটিং অনুশীলন।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচসেরার পুরস্কার হাতে ২১ বর্ষী জয়সওয়াল বলেছেন, ‘আমি যখন ছোট ছিলাম, তখন দেশের হয়ে খেলার কথা ভাবতাম। আমার জন্য এটি আবেগঘন মুহূর্ত। তবে যাত্রা কেবল শুরু।’
‘এ পর্যন্ত আসতে আমাকে অনেকেই সাহায্য করেছেন। প্রত্যেককে ধন্যবাদ জানাতে চাই। নির্বাচক ও অধিনায়ককেও ধন্যবাদ জানাই আমার প্রতি বিশ্বাস রাখার জন্য। নিজেকে মেলে ধরার সুযোগ দেয়ার জন্য।’