চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Nagod

ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ রাজা শুভমন গিল?

KSRM

‘তোমার হল শুরু, আমার হল সারা’- দশ বছর আগে মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে রবীন্দ্রনাথের কালজয়ী গানটি যেন অনেকের হৃদয়ে বেজে উঠেছিল। ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট ইনিংসে শচীন টেন্ডুলকার যখন আউট হলেন, এরপর ক্রিজে ব্যাট করতে নেমে প্রথম বলেই চার মারেন বিরাট কোহলি। স্টেডিয়ামে তখন ফিসফিস আওয়াজ, শচীনের যোগ্য উত্তরসূরি প্রস্তুত এবং সক্ষম। ভারতীয় ক্রিকেটে তখন সবে শুরু হয়েছে কোহলি-যুগ।

চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে প্রায় দশ বছর পর দর্শকরা দেখলেন একইরকম দৃশ্য। গত রোববার আইপিএল ইতিহাসের সর্বাধিক সাত সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েছেন কোহলি। ৬১ বলে ১৩ চার ও এক ছক্কায় ১০১ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলায় পুরো গ্যালারি ও ডাগআউট দাঁড়িয়ে তাকে জানিয়েছে সম্মান। তবে শুভমন গিলের ৫২ বলে ৫ চার ও ৮ ছক্কায় ১০৪ রানের ইনিংসে ৫ বল ও ৬ উইকেটে জয় নিশ্চিত করে ফেলে কোহলির প্রতিপক্ষ গুজরাট। ঘরের মাঠে বেঙ্গালোরের হারের পর দর্শকরা হতাশ হলেও দেখেশুনেই বলছিলেন, ব্যাটন হাতবদল হচ্ছে। ভবিষ্যৎ প্রস্তুত, রাজা দীর্ঘজীবী হোক।

দীর্ঘ ১৫ বছরের ক্যারিয়ারে অনেক অর্জনের ফলে কোহলির নামের আগে বসে গেছে কিং খেতাব। তার যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে রাজার আসনে শুভমন গিল বসতে চলেছেন, সেটা নিয়ে এখন ব্যাপক আলোচনা চলছে।

আইপিএলের চলতি আসরে গিলের ব্যাট রীতিমতো হাসছে। ১৫ ম্যাচে ৫৫.৫৩ গড়ে ১৪৯.১৭ স্ট্রাইক রেটে করেছেন দ্বিতীয় সর্বাধিক ৭২২ রান।

চার ফিফটি ও দুই সেঞ্চুরিতে মাতিয়েছেন গ্যালারি। তার উপরে রয়েছেন ৭৩০ রান করা ফ্যাফ ডু প্লেসিস। গিলের পেছনে রান সংগ্রাহকদের তালিকার তৃতীয় অবস্থানে ৬৩৯ রান তোলা কোহলি। যেন স্পষ্ট হচ্ছে, ভারতীয় ক্রিকেটে শুরু হওয়ার অপেক্ষায় শুভমন গিলের যুগ।

খুব অল্প বয়সে প্রতিভার ঝলক দেখাতে শুরু করেছিলেন গিল। অনূর্ধ্ব-১৬ দলের হয়ে এক ম্যাচে খেলেন ৩৫১ রানের ইনিংস। বয়স তখন সবে ১৫। পাঞ্জাব প্রদেশের হয়ে বিজয় মার্চেন্ট (অনূর্ধ্ব-১৬) টুর্নামেন্টে অভিষেকেই হাঁকিয়েছিলেন ডাবল সেঞ্চুরি।

২০১৮ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে গিলের সহ-অধিনায়কত্ব পাওয়াটা বিস্ময়কর ছিল না। তার আগেই তিনি পাঞ্জাবের হয়ে খেলে ফেলেছেন ভারতের প্রথম শ্রেণির ঘরোয়া টুর্নামেন্ট রঞ্জি ট্রফিতে। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১০২ রানে অপরাজিত ছিলেন। চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত। টুর্নামেন্টসেরার পুরস্কার গিলের হাতে ওঠে। তার ভবিষ্যৎ তারকা হয়ে ওঠার পূর্বাভাসও মিলেছিল।

চলতি বছরটা গিলের অসাধারণ কাটছে। জানুয়ারিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে ওয়ানডে ইতিহাসের কনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে করেছেন ডাবল সেঞ্চুরি। কীর্তিটি গড়ার সময় তার বয়স ছিল ২৩ বছর ১৩২ দিন। আইপিএলে চেন্নাই সুপার কিংসের বিপক্ষে প্রথম কোয়ালিফায়ারের আগে টানা দুই ম্যাচে তুলেছেন সেঞ্চুরি।

সাদা পোশাকের ক্রিকেটেও রঙিন গিলের ব্যাট। দুবছর আগে বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিতে ব্রিসবেনে ৪ ম্যাচ সিরিজের শেষ টেস্টে খেলেছিলেন ৯১ রানের মহামূল্যবান ইনিংস। মিচেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্স, জশ হ্যাজেলউড এবং নাথান লায়নের মতো বোলারদের বিপক্ষে তার ব্যাটিং ছিল প্রশংসিত। রানতাড়া করতে নামা ভারত ব্রিসবেন টেস্ট জিতে ট্রফি নিয়ে দেশে ফেরে।

গিলের ব্যাটিংয়ের ধরনে তরুণ বয়সের দিলীপ ভেঙ্গসরকারের কিছুটা মিল খুঁজে পাওয়া যায়। যদিও অন্যসব সাধারণ ভারতীয় ব্যাটারদের মতো তিনি নন। ব্যাটিংয়ের সময় কব্জির কাজ অতীতের সেরা ব্যাটারদের কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে। ব্যাকফুটে গিয়ে পায়ে দেন টান, অভাবনীয়ভাবে অফসাইডে খেলেন স্ট্রোক শট। পাওয়ার ক্রিকেট খেললেও সঙ্গে মিশে থাকে নান্দনিকতা।

ব্যাট হাতে নিচু শট খেলে অভ্যস্ত ২৩ বর্ষী ক্রিকেটার পুল শট পছন্দ করেন খুব। উইকেটের দুপাশেই সেরা ব্যাটারদের মতো করতে পারেন ড্রাইভ। পুল শট এতটাই লম্বা খেলেন যে বল স্কয়ার লেগের ডান থেকে মিড-অনের বাম পাশের যেকোনো জায়গা পর্যন্ত যেতে পারে। আগ্রাসী ভঙ্গি থাকলেও গিলের ব্যাটিংয়ে থাকে শান্ত মেজাজ, শট খেলায় রয়েছে নিয়ন্ত্রণ।

ইংল্যান্ডে আগামী মাসে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতের জন্য তুরুপের তাস হতে পারেন গিল। ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ রাজা হওয়ার প্ল্যাটফর্ম হয়তো ইংল্যান্ডের ওভালেই পাকাপোক্ত করবেন টগবগে তরুণ গিল।

বিজ্ঞাপন

Nil Joler Kabbo
Bellow Post-Green View