আর্থিক বাধায় বন্ধ হচ্ছিল লেখাপড়া, তবে প্রবল ইচ্ছাশক্তির কাছে হেরে গেছে সকল বাধা। অবশেষে মিলেছে সফলতা। দুপুর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ফুটপাতে চটপটি বিক্রি করে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে দিনাজপুরের তাহিবুল ইসলাম। পিতা বাদল হোসেন এক সময় চটপটি বিক্রি করতেন। বয়স্ক বাবার কষ্টে সেই ব্যবসার হাল ধরে তাহিবুল।
প্রতিদিন দুপুর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ফুটপাতে চটপটি বিক্রি করে তাহিবুল। ক্রেতারা চলে গেলে দোকান বন্ধ করে শুরু হতো তার লেখাপড়া। ভোর রাত পর্যন্ত চলতো এইভাবে। তারই প্রতিফলন পেয়েছেন এবারের এইচএসসি পরীক্ষায়। জিপিএ-৫ পেয়েছেন তিনি।
দিনাজপুর-বিরামপুর মহাসড়ক সংলগ্ন বিরামপুর পৌর শহরের হানিফ কোচ কাউন্টারের সামনে গেলেই চোখে পড়বে ভ্যানগাড়িতে চটপটি বিক্রি করছেন তাহিবুল। বাবা বাদলের পক্ষে ছেলের লেখাপড়ার খরচ চালানো সম্ভব ছিল না। কিন্তু অদম্য ইচ্ছা আর মনোবলের কারণে দারিদ্রতাকে জয় করেছে তাহিবুল। চাটপটি বিক্রির টাকায় লেখাপড়া চালান তিনি। বিরামপুরের চাঁদপুর ফাজিল মাদরাসা থেকে এবার এইচএসসিতে পেয়েছেন জিপিএ-৫।
তাহিবুল জানান, ‘শিক্ষকদের আন্তরিকতায় সবকিছু সম্ভব হয়েছে। দুপুর থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত চটপটি বিক্রি করেছি। রাতে কাজের শেষে যতটুকু সময় পেয়েছি পড়েছি। আমার স্বপ্ন উচ্চশিক্ষা নিয়ে ভালো চাকরি করা। পড়ালেখা চালাতে শুধু চটপটি বিক্রি নয় যেকোনও কাজ করতে আমি আগ্রহী।’
তাহিবুলের বাবা বাদল হোসেন বলেন, ‘ছেলে জিপিএ-৫ পাওয়ায় আমি খুবই খুশি। সে অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করেছে। আল্লাহ মুখ ফিরিয়ে তাকিয়েছে বলেই তার ভালো ফল এসেছে। ছেলে অনেক বড় হোক এটাই আমার চাওয়া-পাওয়া।’
তাহিবুলের বড় ভাইও পাস করেছেন স্নাতক। বড় বোন বিরামপুর সরকারি কলেজে ও ছোট বোন নর্থ বেঙ্গল কেজি স্কুলে পড়াশোনা করছেন। বাদল হোসেনের প্রবল ইচ্ছে সন্তানদের মানুষ গড়বেন।
বিরামপুরের চাঁদপুর ফাযিল মাদরাসার অধ্যক্ষ আফম হুমায়ুন কবির জানান, ‘এই প্রতিষ্ঠান থেকে ছয়জন জিপিএ-৫ পেয়েছেন। তাদের মধ্যে তাহিবুল একজন। সে খুব মেধাবী এবং ভালো ছেলে। আমরা তার সাফল্য কামনা করছি। সে যেন আগামীতে আরো ভালো কিছু করতে পারে।’
তহিবুল সম্পর্কে বিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পরিমল কুমার সরকার বলেন, ‘যেনে খুশি হলাম। চটপটি বিক্রেতা তাহিবুল এইচএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়েছে। দোয়া করি সে আরো বড় ডিগ্রি অর্জন করতে পারে। তার বাবা-মার মুখ যেন উজ্জ্বল করে সে।’