বৈশ্বিক স্বাস্থ্য খাতে মাইলফলক তৈরি করে শেষ হলো ‘ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট’ (ইউএসএআইডি) এর অর্থায়নে চলমান আরডিএম প্রকল্প যার স্থায়ী প্রভাব ফেলেছে দেশে ও দেশের বাইরে।
আজ ৩ অক্টোবর ‘আইসিডিডিআর,বি’ বাংলাদেশে প্রমাণ-ভিত্তিক স্বাস্থ্য পরিকল্পনা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ ‘রিসার্চ ফর ডিসিশন মেকার্স (আরডিএম) অ্যাকটিভিটি’র সফল সমাপ্তি উদযাপন উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে। প্রকল্পটিতে অর্থায়ন করেছে ইউএসএআইডি।
২০১৭ সালের মে মাসে শুরু হওয়া আইসিডিডিআর,বি এর আরডিএম উদ্যোগ, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। গত ছয় বছরে আরডিএম প্রকল্পটির মাধ্যমে মাতৃ, নবজাতক এবং শিশু স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা এবং প্রজনন স্বাস্থ্য, পুষ্টি এবং যক্ষা রোগের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য পরিকল্পনা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক ভূমিকা পালন করার জন্য পলিসি ব্রিফ, কৌশলপত্র এবং জাতীয় পর্যায়ের সমীক্ষাসহ বিভিন্ন প্রমাণ-ভিত্তিক নলেজ প্রোডাক্ট তৈরি করা হয়েছে।
এই প্রকল্পের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদানের মধ্যে প্রথম বাংলাদেশ কিশোর স্বাস্থ্য ও সুস্থতা জরিপ ২০১৯-২০, বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ, বাংলাদেশ স্বাস্থ্য ফ্যাসিলিটি জরিপ উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও আরডিএম ১৮টি পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণা প্রকল্পও পরিচালনা করেছে যা কৈশোরকালীন স্বাস্থ্য, পুষ্টি এবং পরিবার পরিকল্পনার মতো বিষয়ে কার্যকর পরিকল্পনা তৈরিতে সহায়তা করেছে।
ইউএসএআইডি-এর সহায়তা আরডিএম এর সাফল্যের পেছনে মূখ্য ভূমিকা পালন করেছে। আরডিএম অন্যান্য নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলির জন্য তাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে অগ্রগামী করার জন্য একটি উদাহরণ হিসেবে কাজ করবে। এই প্রকল্পটি স্বাস্থ্য পরিকল্পনা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ কাঠামো এবং স্বাস্থ্য পরিষেবা বিষয়ক সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় গবেষণালব্ধ তথ্য-প্রমাণ সরবরাহ করে সফলতা অর্জনে সহায়তা করেছে। আরডিএম স্বাস্থ্যক্ষেত্রে সরকারের বিভিন্ন নীতিমালা ও পরিকল্পনা বিশ্লেষণ এবং সুশাসন অর্জনে প্রভাব রেখেছে। এর মধ্যে রয়েছে জাতীয় নবজাতক মনিটরিং চেকলিস্ট এবং শিশুদের যক্ষা ব্যবস্থাপনার জন্য জাতীয় নির্দেশিকা।
এছাড়াও, আরডিএম স্বাস্থ্যক্ষেত্রে দেশীয় জনগোষ্ঠীর সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য একটি অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে। প্রকল্পটি ২,৩৭৮ জন অংশগ্রহণকারীকে দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করেছে, ৮ জন তরুণ গবেষককে পিএইচডি প্রোগ্রামে অংশগ্রহণে সহায়তা করেছে এবং ২৩ জন প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটরকে গবেষণায় সহায়তা করেছে। এসব কার্যক্রম স্থানীয় পর্যায়ে পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণা প্রস্তাব, পরিচালনা এবং এর ফলাফল ব্যবহার করার সক্ষমতাকে শক্তিশালী করেছে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন আইসিডিডিআর,বি-র নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ। তিনি বাংলাদেশ সরকার এবং ইউএসএআইডি-কে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, আমাদের ট্রান্সলেশনাল গবেষণার ইতিহাস অনেক পুরনো। আমাদের অনেক গবেষণা বাংলাদেশ সরকার এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গ্রহণ করেছে যা লক্ষ লক্ষ মানুষের মাঝে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এর মধ্যে রয়েছে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, টিটেনাস টক্সয়েড ভ্যাকসিন এবং খাবার স্যালাইনের মতো গবেষণাগুলো। আমরা ভবিষ্যতেও এধরণের কাজ চালিয়ে যেতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
অনুষ্ঠানে আরডিএম এর অগ্রযাত্রা থেকে অর্জিত অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন আইসিডিডিআর,বি-র জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী, মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান এবং প্রকল্পটির চিফ অফ পার্টি ড. শাম্স এল আরেফিন। অনুষ্ঠানে কী-নোট সেশনের পর ড. কামরুন নাহার এবং ড. আহমেদ এহসানুর রহমান এর সঞ্চালনায় আলোচনা পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ডা. শেখ দাউদ আদনান, ডেপুটি ডিরেক্টর (হাসপাতাল); ড. সৈয়দা নওশিন, ডিরেক্টর ,রিসার্চ, হেলথ ইকোনোমিক্স ইউনিট; ডা. এম ইসলাম বুলবুল, প্রোগ্রাম ম্যানেজার, এনএনএসসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারগণ। আলোচনা পর্বটি কীভাবে আরডিএম’র উৎপাদনমূলক কার্যক্রমসমূহ জাতীয় স্বাস্থ্য পরিকল্পনা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণকে সহায়তা দিয়েছে সেসব বিষয়াবলী তুলে ধরে।