এ এস এম মাইনুদ্দিন মোনেম। এ সময়ের অন্যতম ডায়নামিক অর্থনৈতিক ব্যাক্তিত্ব। নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ, প্রাচীন এবং সুখ্যাত ব্যবসায়ীক সাম্রাজ্য আব্দুল মোনেম লিমিটেড এর। স্বল্প সময়ে তার যোগ্য ও দক্ষ নেতৃত্বে দেশের সর্ববৃহৎ এবং স্বনামধন্য এই বানিজ্যিক সাম্রাজ্য দেশের অন্যতম গৌরবোজ্জ্বল বানিজ্যিক গোষ্ঠি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। কেবল দেশেই নয়, দেশের অন্যতম সেরা ব্যবসায়ী নেতা এ এস এম মাইনিুদ্দিন মোনেমের ব্যক্তিত্ব, নেতৃত্ব এবং ভিশনারী কর্মপ্রয়াস প্রশংসা কুড়িয়েছে বিশ্বজুড়ে।
দেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতিকে সামনের দিকে ট্রিলিয়ন ডলারে উপনীত করতে যে ক’জন উচ্চ শিক্ষিত, সুযোগ্য ব্যবসায়ীক নেতা বর্তমানে পথ দেখাচ্ছেন, তিনি তাদের মধ্যে অন্যতম।
দীর্ঘ প্রায় অর্ধশতাব্দী প্রাচীন আব্দুল মোনেম লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং আব্দুল মোনেম ইকোনমিক জোনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বাংলাদেশের কিংবদন্তী ব্যবসায়ী আব্দুল মোনেমের সুযোগ্য সন্তান তিনি।
ছোটবেলা থেকে পারিবারিক সংস্কৃতি, সুশিক্ষা, মেধা এবং দৃঢ় ব্যক্তিত্ব তাকে একজন দক্ষ এবং আগামীদিনের যোগ্য ব্যবসায়ীক নেতৃত্বে পরিনত করেছে।
বাংলাদেশ এবং দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থান তৈরীর পেছনে যে কজন দক্ষ এবং বিশিষ্ট ব্যবসায়ীর অবদান, তার পেছনে একজন অক্লান্ত শিল্পোদ্যোক্তা শিল্পপতি আব্দুল মোনেম। তার ইচ্ছা ছিলো দেশে অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থান। একই সাথে দেশে একটি আন্তর্জাতিক ইকোনমিক জোন গড়ে তোলা। যেখানে থাকবে শিল্পাঞ্চলের আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা। থাকবে দেশ এবং বিশ্বের নামীদামি শিল্পকারখানা। থাকবে লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ। বাবার সেই স্বপ্ন স্বার্থক করে গড়ে তুলেছেন তারই সুযোগ্য পুত্র এ এস এম মাইনুদ্দিন মোনেম। দেশের অন্যতম বৃহৎ ইকোনমিক জোন, অথবা শিল্প সম্রাজ্য পরিচালনাই নয়। তিনি শক্ত হাতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকেও।
বাবার স্বপ্ন ছিলো বাংলাদেশকে এবং বাংলাদেশের মানুষকে অর্থনৈতিক, রাষ্ট্রিয় এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গণে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া। সেই লক্ষ্য এবং কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্য হাতে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন সময়ের অন্যতম গতিশীল এই উদ্যোক্তা। শিল্প এবং ব্যবসা অঙ্গনে বাবার পথ ধরেই এ এস এম মাইনুদ্দিন মোনেম একের পর এক সাফল্যের ধাপ অতিক্রম করেছেন। আব্দুল মোনেম লিমিটেড এর অন্যতম অর্জনের খাতায় অনন্য এক নাম পদ্মা সেতু। পদ্মার পাড়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে নির্মাণে আব্দুল মোনেম লি. দেশের জন্য অনন্য এক নজির সৃষ্টি করে। পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তের সংযোগ সড়ক, ব্রিজ ফেসিলিটিজ ও সার্ভিস এরিয়া নির্মাণের দায়িত্ব পায় আবদুল মোনেম গ্রুপ। এসব কাজে করা হয়েছে নিজস্ব যন্ত্রপাতির ব্যবহার। নির্মাণ এলাকা অত্যন্ত নরম মাটি হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে জার্মানি থেকে হেভি স্যান্ড পাইলিং মেশিন আমদানি করে আব্দুল মোনেম লিমিটেড। নিজস্ব কনস্ট্রাকশন যন্ত্রপাতির বহর ব্যবহার করে স্বল্প সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করে সকল মহলের প্রশংসা অর্জন করে।
দেশের একমাত্র কন্সট্রাকশন গ্রুপ হিসেবে আব্দুল মোনেম লিমিটেড এই বিশাল কর্মযজ্ঞ সুনামের সাথে সম্পন্ন করে। স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে অবদান রাখা বাংলাদেশী বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আজীবন ইতিহাসের অন্তর্গত হয়ে থাকবে।
আব্দুল মোনেম গ্রুপের অবকাঠামোগত উন্নয়নে দক্ষতা, যোগ্যতা, একনিষ্ঠতা এবং পেশাদারিত্বের কারণে বাংলাদেশ সরকার পদ্মা সেতু থেকে কর্ণফুলী টানেল, যমুনা সংযোগ সড়ক এবং দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা দৃষ্টিনন্দন অবকাঠামোর বড় একটা অংশকে বাস্তবায়নের যে দায়িত্ব তুলে দেয় আবদুল মোনেম লিমিটেড এর হাতে। যার পরিকল্পনা, নির্দেশনা এবং নেতৃত্ব দেন এ এস এম মাইনুদ্দিন মোনেম।
সম্প্রতি তিনি গণমাধ্যমে তার ব্যবসায়ীক দর্শন, প্রত্যাশা এবং পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেন বিভিন্ন গণমাধ্যমে।
দেশে অবকাঠামো নির্মাণ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অনন্য অবদান রাখা উদ্যোক্তা এ এস এম মাইনুদ্দিন দেশকে উন্নয়ণশীল দেশ থেকে উন্নত দেশে পরিনত হবার বিষয়ে বলেন, আমরা ধীরে ধীরে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এ পর্যন্ত এসেছি। সামনে আমরা এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন করব। আর আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে ২০৩১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করা। যদি আমাদের অর্থনীতি আগামী ১০ বছরে ৭ শতাংশ করে বৃদ্ধি পায়, তাহলে আমি আশাবাদী যে, আগামী ১০ বছরে ট্রিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রা আমরা অর্জন করতে পারব।
এ ক্ষেত্রে তার পরিকল্পনার অন্যতম অংশ দেশে শিল্পাঞ্চল গঠন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি। দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখা আব্দুল মোনেম লিমিটেড এবং আব্দুল মোনেম ইকোনমিক্যালে জোন এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠন করা হয়েছে। এর প্রতিটিতে যদি ১ লাখ করে লোকের কর্মসংস্থান হয়, সাথে যদি থাকে বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ, তাহলে যে বিষয়টি দাঁড়াচ্ছে-সেটাই বাংলাদেশের লক্ষ্য। কিন্তু এই লক্ষ্য পূরণ করতে হলে আমাদের প্রশাসনের সাহায্য লাগবে। আমি খুব আনন্দের সাথে বলতে চাই প্রধানমন্ত্রী কিছু দিন আগে বলেছেন, লাল ফিতার দৌরাত্ম্য কমাতে হবে। এটা আমাদের একদম মনের কথা। এ বিষয়টি খুব জরুরি।
এ ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের সাথে সাখে প্রয়োজন যোগাযোগ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ এবং সঠিক পরিকল্পনা। এ বিষয়েও রয়েছে তার সুনির্দিষ্ট ভাবনা এবং পরিকল্পনা।
মাইনুদ্দিন মোনেম বলেন, আর এজন্য গভীর সমুদ্র বন্দর, মেট্রোরেলসহ যতোগুলো অবকাঠামোগত উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ প্রধানমন্ত্রী বাস্তবায়নের কথা বলছেন, সেগুলো সঠিক পরিকল্পনা ও গাইডলাইনের মাধ্যমে এগুলো সম্পূর্ণ করতে পারলে আমাদের ট্রিলিয়ন ডলারের লক্ষ্য সহজেই পূরণ করা যাবে।
তিনি বলেন, চিটাগং গভীর সমুদ্র বন্দর এবং মোংলা বন্দর একসঙ্গে কানেক্ট থাকতে হবে। অবকাঠামো খাতে খরচ অনেক বেড়ে গেছে। আমি নীতিনির্ধারকদের অনুরোধ করব যেসব অবকাঠামোগত প্রকল্পের ড্রেজিং, আমদানিতে সহযোগিতা করতে হবে, এগুলো যদি করা যায় তাহলে দেশের যেকোনো প্রান্তে গার্মেন্টস পণ্য নিয়ে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছে দেয়া যাবে, যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশন। এটা তিনিও চান, এটা আমরাও চাই। বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্তে ৪৮ ঘণ্টা নয়, ৬ থেকে ৮ ঘণ্টার মধ্যে চলে যাওয়া যায়— এমন বাংলাদেশ চাই।
দেশের অন্যতম বেসরকারী শিল্পাঞ্চল আব্দুল মোনেম ইপিজেড এর পরিচালনার কঠিন চ্যালেঞ্জটি অত্যন্ত দক্ষ হাতে পালন করেছেন এ এস এম মাইনুদ্দিন মোনেম। আব্দুল মোনেম ইকোনমিক জোন ও আব্দুল মোনেম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এস এম মাইনুদ্দিন মোনেম এ প্রসঙ্গে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমার বাবা যখন জীবিত ছিলেন, উনি ইকোনমিক জোনে এক কোটি লোকের কর্মসংস্থানের কথা বলতেন। এটা স্বপ্ন, যে স্বপ্নের সঙ্গে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন জড়িত। এ জোনে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয়ার জন্য কোয়ালিটি জব ক্রিয়েশন, মানবসম্পদের উন্নয়ন করা আমাদের পরিকল্পনা। সেই সঙ্গে ভালো ভালো কারখানা তৈরি করা। আমাদের স্বপ্ন হচ্ছে এ জোনের মাধ্যমে আমরা বিশ্বমানের কারখানা তৈরি করব। এর ফলে আমাদের ছেলেমেয়েরা যারা সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ায় যে মানের কারখানায় কাজ করে, একই মানের কাজ এখানে করতে পারবে। তখন মুন্সিগঞ্জে কাজ করা আর ব্যাংকক, ভিয়েতনাম বা থাইল্যান্ডে কাজ করার মাঝে কোনো তফাত থাকবে না। আব্দুল মোনেম ইকোনমিক জোন ওই স্বপ্নটা বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর এবং তাই করব ইনশা আল্লাহ।’
তিনি আরও বলেন, ইকোনমিক জোন বা এ ধরনের বড় অবকাঠামো রাতারাতিই গড়ে ওঠে না। অবকাঠামো গড়তে সময় লাগে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৩০ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হবার লক্ষ্য ঠিক করেছেন। এটি আমাদের অর্জন করতে হলে অবকাঠামোগত উন্নয়নের দিকে বেশি মনোযোগী হতে হবে। অর্থনৈতিক অঞ্চলের সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে সুবিধাজনক স্থান নির্বাচন করতে পারা। আমাদের ইকোনমিক জোনটা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে এবং মেঘনা-গোমতী নদীর মোহনার সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত। বিনিয়োগকারীরা নদীপথ ব্যবহার করতে পারবে আবার মহাসড়কের মাধ্যমে সরাসরি বিমানবন্দর বা সমুদ্রবন্দরেও যেতে পারবে। তাই আমি মনে করি আমাদের জোনের কানেক্টিভিটি ভালো হওয়ায় স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে যোগাযোগ স্থাপন সহজ। আমাদের জোনটি ঢাকা থেকে ৪০ কিলোমিটার এবং চট্টগ্রাম থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। আমি মনে করি আব্দুল মোনেম ইকোনমিক জোনের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে যোগাযোগের ক্ষেত্রে স্থানগত ভৌগোলিক সুবিধা।
তবে কেবল ইকোনমিক জোন নির্মাণই শেষ কথা নয়, এ ক্ষেত্রে থাকা প্রতিবন্ধকতা এবং চ্যালেঞ্জ গুলো কাটানোর বিষয়েও কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, ‘ইকোনমিক জোন করার ক্ষেত্রে এই যে অবকাঠামো নিয়ে কথা বলছি তার সবচেয়ে বড় দিক হচ্ছে পণ্য ডেলিভারির ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতি ঠিক রাখা, আস্থা অর্জন এবং সাপ্লাই চেইন নিয়ে আমাদের কালক্ষেপণ না করে ভালো পরিকল্পনার মাধ্যমে তা দ্রুত বাস্তবায়ন করা। এখন আমি এক্সপ্রেস হাইওয়ে করলাম। গাড়ি আটকে আছে আমিনবাজারে, হানিফ ফ্লাইওভারে। তাহলে হবে না, সিমলেস কানেক্টিভিটি নিশ্চত করতে হবে। আমার এখান থেকে গাড়ি চলা শুরু করবে আর আমি বলতে পারব এত মিনিটে এটি বন্দরে গিয়ে পৌঁছবে। এটাই হচ্ছে বাংলাদেশের ভিশন। এটাই স্বপ্ন আমাদের, আমরা আমাদের দেশকে বিশ্বমানের করে গড়ে তুলব। এটাই স্বপ্ন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর। এগুলো নিশ্চিত হলেই ইকোনমিক জোন এবং জোনের বাইরের ছোট ও মাঝারি শিল্প, হালকা প্রকৌশল শিল্পগুলো তাদের প্রয়োজনীয় সুবিধা এমনিতেই পেয়ে যাবে। এখন তো বিদ্যুৎ পাচ্ছে না, গ্যাস পাচ্ছে না; তখন আর এগুলোর সমস্যা থাকবে না। তখন কেউ ভালো করছে হালকা প্রকৌশলে, কেউ আইটিতে, কেউ সেবা খাতে। তখন আমাদের সক্ষমতা বাড়বে, কম মূল্যে আমাদের উদ্যোক্তারা পণ্য তৈরি করতে পারবে। কাজটা হচ্ছে অবকাঠামো, ইফেক্টটা হচ্ছে এফডিআই ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি। এটা যদি হয়, তাহলে দেখবেন যে দেশের ভেতরে-বাইরে সবাই এসে বিনিয়োগ করবে।