ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপর প্রায় দশ বছর ‘ধর্মীয় স্বাধীনতার গুরুতর লঙ্ঘনের অভিযোগ’ এনে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। সেই নিষেধাজ্ঞা কেটে গেছে ৯ বছর আগেই, যখন তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হন। এরপর থেকে যেন নরেন্দ্র মোদি যুক্তরাষ্ট্রের খুব কাছেই অবস্থান করছেন।
বুধবার ২১ জুন সিএনএন জানায়, নিষেধাজ্ঞা কাটানোর পর নরেনদ্র মোদিকে ধীরে ধীরে বুকে টেনে নিতে শুরু করে ওয়াশিংটন। তবে বাইডেন আমলে সেই মোদিকে আরও ঘনিষ্ঠভাবে বুকে টেনে নেওয়া হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় সফরে এখন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন নরেন্দ্র মোদি। বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশটির নেতা এই রাষ্ট্রীয় সফরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে দেখা করবেন। এই সফরে দু’দেশের প্রতিরক্ষা, বাণিজ্য ও প্রযুক্তি সম্পর্ককে আরও জোরদার করা হবে এবং দুই দেশকে সংযুক্তকারী ‘পারিবারিক ও বন্ধুত্বের উষ্ণ বন্ধন’কে আরও দৃঢ় করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দফতরে আন্তর্জাতিক ইয়োগা দিবস উদযাপনেরও নেতৃত্ব দেবেন মোদি। পরের দিন তিনি কংগ্রেসে ভাষণ দেবেন। এটি যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্রদের জন্য সংরক্ষিত সম্মান। এ থেকে বুঝা যাচ্ছে একসময় যেই মোদির প্রবেশই নিষিদ্ধ ছিল, সেই মোদি এখন যুক্তরাষ্ট্রে কতটা কাছে অবস্থান করছে।
ইউনাইটেড স্টেটস ইনস্টিটিউট অফ পিস (ইউএসআইপি) এর দক্ষিণ এশিয়ার সিনিয়র উপদেষ্টা ড্যানিয়েল এস মার্কি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে প্রতিযোগিতার বিশ্ব ব্যবস্থায়’ ভারতকে একটি ‘কৌশলগত অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত রাষ্ট্র’ হিসেবে দেখছে ওয়াশিংটন। ভূ-রাজনীতিতে মানবাধিকার নিয়ে উদ্বেগকে ‘এখন পিছনের আসনে বসানো হয়েছে।’
গুজরাট দাঙ্গা সমর্থন দেয়ার অভিযোগে মোদির রাজনৈতিক ক্যারিয়ারকে মারাত্মকভাবে কালিমালিপ্ত করে। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্র তাকে ৯ বছর ভিসা দিতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। নিউইয়র্কের একটি আদালত নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গায় ভূমিকার জন্য সমন জারি করে। ২০০২ সালের দাঙ্গা থেকে বেঁচে যাওয়া দু’জন ভারতীয় নাগরিকও এই মামলার বাদী। গুজরাটের ঐ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত হন। এদের বেশিরভাগই ছিলেন মুসলিম। গুজরাট দাঙ্গার সময় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন নরেন্দ্র মোদি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল এই দাঙ্গা ঠেকাতে তিনি কোন ব্যবস্থা নেননি।
২০১৪ সালে ভারতের নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসার পর পরিস্থিতি পাল্টে যায়। একই বছর সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা মোদিকে হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানান। স্বাভাবিকভাবেই সেসময় মোদিকে ভিসার ছাড়পত্র দেওয়া হয়।