দেশের ১২টি সিটি কর্পোরেশন এলাকায় দৈনিক প্রায় ১৭ হাজার ৫৪ টন কঠিন বর্জ্য উৎপাদিত হয়। এ বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তর করার লক্ষ্য থেকেই বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
এছাড়াও সারাদেশে যে পরিমাণ বর্জ্য জমে, তার ৩০ শতাংশের বেশি হয় রাজধানীতে। ব্যস্ত এই শহরে প্রতিদিন গড়ে ৬৮১ টনের মত বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এই সকল বর্জ্যকে ঠিক ভাবে কাজে লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ প্রকল্পটি সম্পূর্ণভাবে পরিবেশবান্ধব এবং আধুনিক হওয়ায় এটি পরিবেশের কোন ক্ষতি করবে না। তাছাড়া পানি দূষণ, মাটি দূষণের মতো সংবেদনশীল ক্ষতি থেকে দেশকে রক্ষা করবে। একইসাথে পৃথিবীর অন্যতম দূষিত শহরের তকমা থেকেও নাম কাটাতে সক্ষম হবে ঢাকা।
ঢাকার আমিনবাজারে প্রায় ৮০ একর জমির উপর গড়ে উঠছে ডিএনসিসির ‘বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট’ প্রকল্প। প্রকল্পটির কাজ জানুয়ারি ২০২৪ থেকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এর আওতায় পুরোদমে শুরু হবে। এই প্রকল্পটির কাজ শেষ করতে সময় লাগবে দু’বছর । ২০২৬ সালের মধ্যে প্রকল্পটি থেকে শুরু হবে বিদ্যুৎ উৎপাদন। প্রতি ঘণ্টায় উৎপাদন হবে ৪২ দশমিক ৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। উৎপন্ন বিদ্যুৎ যুক্ত হবে জাতীয় গ্রিডে। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মাধ্যমে স্মার্ট দেশ গড়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে আরও একধাপ।
কয়েকটি ভাগে কর্ম সম্পাদন করা হবে এই প্রকল্পের। প্রথমে ৩০ একর ভূমিতে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ইনসেনারেশন প্ল্যান্ট স্থাপন হবে। এছাড়া পরবর্তীতে আরও ৫০ একর ভূমিতে মেডিক্যাল বর্জ্য, ই-বর্জ্য ও ধ্বংসাবশেষ ব্যবস্থাপনার জন্য পরিবেশবান্ধব ল্যান্ডফিল স্থাপন করা হবে। পুরো প্ল্যান্টে থাকবে মোট ৩টি টার্বাইন। এই টার্বাইনের মাধ্যমে প্ল্যান্টে প্রতিদিন ৩ হাজার টন বর্জ্য পুড়িয়ে ৪২ দশমিক ৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে। আর বর্জ্য পোড়ানোর ছাই সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হবে।
এই পুরো কাজটি তদারকি করছে উত্তর সিটি কর্পোরেশন। মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘অপচনশীল বর্জ্য, ক্ষতিকারক মেডিকেল এবং ই-বর্জ্যও এখানে ব্যবহৃত হবে যার ফলে প্রকৃতি এবং জলবায়ু রক্ষায় এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বর্জ্য পোড়ানোর পর আবার যে ছাই উৎপন্ন হবে তা সিমেন্ট কারখানাগুলোতে কাজে লাগানো হবে যা বাড়তি অর্থনৈতিক সুবিধা দিবে। সব মিলিয়ে বিষয়টা ঢাকাকে বাঁচাবে।’
উল্লেখ্য, বায়ুদূষণের তালিকায় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে ভারতের রাজধানী দিল্লি। অন্যদিকে, রাজধানী ঢাকা রয়েছে ষষ্ঠ অবস্থানে। মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) সকাল ৯টা ৫৪ মিনিটে বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সের (আইকিউএয়ার) সূচক থেকে জানা গেছে এসব তথ্য।
দূষণের শীর্ষে থাকা দিল্লির স্কোর ৩২১ অর্থাৎ সেখানকার বায়ু দুর্যোগপূর্ণ বা বিপজ্জনক পর্যায়ে রয়েছে। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে পাকিস্তানের লাহোর। দূষণ তালিকায় এই শহরের স্কোর ২৮০ অর্থাৎ সেখানকার বায়ু খুবই অস্বাস্থ্যকর পর্যায়ে রয়েছে। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে পাকিস্তানের আরেকটি শহর করাচি। এরপর চতুর্থ অবস্থানে ভিয়েতনামের হ্যানয় এবং পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে ভারতের কলকাতা শহর।