মোরশেদ আলম: চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে শিশু আদিল মোহাম্মদ সোহানের চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস হত্যা মামলার কিশোর অপরাধীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মূলত ভারতীয় টিভি সিরিজ সিআইডি দেখে শিশু আদিলকে হত্যা করেছে ১৭ বছর বয়সী আদিলের গৃহশিক্ষক আহাদ।
বুধবার দুপুরে চাঁদপুর জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এই মামলার ঘটনায় ব্যবহৃত আলামত উদ্ধার সংক্রান্তে প্রেস ব্রিফিং করেন পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ।
আটক কিশোর ফরিদগঞ্জ উপজেলার রুদ্রগাঁও তালুকদার বাড়ির শরীফ তালুকদারের ছেলে মো. আবদুল আহাদ (১৭)। সে শিশু আদিল মোহাম্মদ সোহানের গৃহশিক্ষক ছিল।
পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ জানান, পুলিশের সমন্বিত একটি টিম চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলাটির রহস্য উদঘাটনের লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছিল। প্রাথমিক তদন্তকালে তথ্য প্রযুক্তি ও প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ভিকটিমের গৃহ শিক্ষক মো. আবদুল আহাদকে (১৭ বছর ৬ মাস) গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে সে হত্যার কথা স্বীকার করে।
গৃহশিক্ষক আবদুল আহাদের পরিবার শিশু সোহানের পরিবারের কাছে ২৫ থেকে ২৬ হাজার টাকা জমিয়ে ছিল, আর এই বিষয়টি আহাদ জানতো। মূলত ভারতীয় টিভি সিরিজ সিআইডি দেখে মুক্তিপণের টাকার জন্য সোহানকে অজ্ঞান করে লুকিয়ে রাখে আহাদ। সে সিআইডিতে দেখেছে, কাউকে ৪০ সেকেন্ড নাক চেপে ধরে রাখলে মরবে না কিন্তু সে অজ্ঞান থাকবে। তবে দুর্ভাগ্যবশত টাইম কিংবা ধরতে সমস্যা হওয়ায় শিশু সোহান মারা যায়।
মিলন মাহমুদ আরও জানান, শিশু সোহানকে হত্যার পর সে নিজেও সবার সাথে খোঁজাখুঁজি করে। কিন্তু সে হত্যা করে যেখানে রেখে এসেছে, সেখানে না গিয়ে অন্যত্র খোঁজাখুঁজি করে। ১৯ মে যখন লাশ পাওয়া গেল তখনও সে কি হত্যা করতে পারে? এমন তথ্য আমাদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। খুন করার পর সোহানের মাকে ফোন করেছিল আহাদ। তার ছেলেকে পেতে হলে টাকা দিতে হবে। কিন্তু সেই ফোনটি বাড়িতে রেখে যায়। খোঁজাখুঁজি কারণে কলটি রিসিভ হয়নি এবং টাকা চাওয়ার বিষয়টি বলতে পারেনি।
পুলিশ সুপার আরও জানান, সোহানের লাশ মাটিতে পুঁতে রাখে গৃহ শিক্ষক আহাদ। তাকে গ্রেপ্তার করা হয়, আহাদের মায়ের ফোন ব্যবহার করে অন্য একটি সিম ব্যবহার করার মাধ্যমে। এছাড়া তার আচার-আচরণও সন্দেহজনক হয়েছিল। আমাদের প্রথম থেকেই ধারণা হয়েছিল, হত্যার পিছনে দূরের কোন ব্যক্তির হাত নেই। এখানে কাছের কেউ হত্যার সাথে জড়িত।
প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এ্যান্ড অপ্স) পলাশ কান্তি নাথ, ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল মান্নান, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি এএইচএম আহসান উল্লাহ প্রমুখ।
পুলিশ জানায়, গত ১৫ মে সন্ধ্যা অনুমানিক ৭টার সময় ভিকটিম আদিল মোহাম্মদ সোহান (৮) বাড়ির পাশের মসজিদ থেকে মাগরিবের নামাজ শেষে তার নিজ বাড়িতে ফেরার পথে নিখোঁজ হয়। পরে তার বাবা আনোয়ার হোসেন ফরিদগঞ্জ থানায় একটি নিখোঁজ জিডি করেন।
গত ১ মে সকাল সাড়ে ৯টায় বাদীর চাচি রেনু বেগম গরুর ঘাসের চাষকৃত নাল জমির পূর্ব পাশের কাঁচা গাব পাড়ার জন্য যায়। সেখানে দুর্গন্ধ ও মাছির উপদ্রব দেখতে পেয়ে সবাইকে জানান। পরে প্রতিবেশিসহ অন্যান্য লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে মাটির নিচে চাপা দেওয়া একটি শিশুর হাত দেখতে পান।
এমন সংবাদ পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এ্যান্ড অপ্স) পলাশ কান্তি নাথের নেতৃত্বে ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জসহ (ওসি) পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত হয়ে শিশুটির লাশ উদ্ধার করে। তখন নিখোঁজ শিশু আদিল মোহাম্মদ সোহনের বাবা-মা লাশটি তাদের সন্তানের বলে শনাক্ত করেন।