ঢাকা-১৭ আসনের উপ-নির্বাচনে হামলার শিকার স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম বলেছেন, আমি চেষ্টা করেছি, চেয়েছি সুষ্ঠু ভোট হোক, ভোটাররা ভোট দিতে আসুক। কিন্তু এর বিনিময়ে মার খেলাম। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে আর নির্বাচনে যাব না।
হামলাকারীদের শনাক্তে ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশ প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের সঙ্গে সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। বৃহস্পতিবার ২০ জুলাই বিকেল সাড়ে ৩টায় তিনি ডিবি কার্যালয়ে প্রবেশ করেন।
তিনি ডিবি কম্পাউন্ডে সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলাম। সেখানে ভোটের শেষ মুহূর্তে আমার ওপর হামলা হয়। হামলায় কারা কারা জড়িত ছিল তাদের শনাক্তের জন্য আমাকে ডাকা হয়েছিল। আমি ডিবির প্রতি কৃতজ্ঞ তারা দ্রুত হামলাকারীদের ধরেছে, যা ভাবতেও পারিনি। আমি ভেবেছিলাম হামলাকারীরা ক্ষমতাশালী দলের লোক। তাদের হয়তো ধরা হবে না।
হিরো আলম বলেন, এই নির্বাচনে হামলায় আমি মারাও যেতে পারতাম। নির্বাচন-নির্বাচন করে অনেক মায়ের কোল খালি হয়েছে। বউ স্বামী হারিয়েছে। অনেকে মারা গেছেন। যারা ক্ষমতাশালী দলের লোক তারা ঠিকই ক্ষমতা দেখায়, ক্ষমতা আদায় করে। নির্বাচন করতে এসে কোনো মায়ের যেন আর বুক খালি না হয়। যারা হামলা করেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
জড়িত হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে ডিবির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানালেও ঘটনার সময় বিজিবির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন হিরো আলম।
তিনি বলেন, আমাকে যখন মারছিল তখন আমি দৌড়ে বিজিবির গাড়ির কাছে গিয়েছিলাম। তারা কিন্তু গাড়ি থেকেই নামেনি। কেন্দ্রের ভেতরে থাকা পুলিশ সদস্যরা যখন জানলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলমকে মারা হচ্ছে, এটা শুনেও তারা কেন বের হননি? বরং তারা আমাকে মারার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছেন। এগুলোর তদন্ত হওয়া দরকার।
হামলার ঘটনায় জড়িতরা কারা? তাদের রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে জানতে চাইলে হিরো আলম বলেন, হামলাকারীদের গায়ে নৌকার সিল (ব্যাজ) দেখেছিলাম। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের কিছু লোকজন ছিল, কিছু ভাড়া করা লোক ছিল। কিছু আওয়ামী লীগের ব্যাজ পরা ছিল। প্রকৃত আওয়ামী লীগের কয়জন ছিল তা জানি না, তাদের ক’জন পদের লোকজন ছিল জানতাম।
‘হামলার ঘটনা সাজানো এমনও শোনা গেছে’ -এমন প্রশ্নের জবাবে হিরো আলম বলেন, হামলায় যদি আমার লোকই থাকে তবে তাদের আটক করতো। যাদের ধরে আনা হয়েছে তাদের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। রিমান্ডে তারা যদি বলে ওরা আমার লোক, তাহলে আমি যে শাস্তি দেন মাথা পেতে নেব।
পুলিশ কি সেদিন তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছিল জানতে চাইলে হিরো আলম বলেন, আমার ওপর যখন হামলা হয় তখন পুলিশ তাদের দায়িত্ব পালনে সত্যি ব্যর্থ হয়েছিল। পুলিশ ইচ্ছা করলে তাদের কর্তব্য পালন করতে পারতো। প্রথমে একটা ছেলে আমাকে ঘুসি মারে। আমি কিন্তু দৌড়ে গিয়ে তাকে বলেছি, এই ঘুসি মারলি কেন? আমি পুলিশকে বলছি, এই লোকটি আমাকে ঘুসি মেরেছে। পুলিশ কিন্তু তাকে ধরেনি। উল্টো আমাকে ধরে রেখেছিল। পুলিশের উচিত ছিল তাকে ধরা। তাহলে আর কেউ আমার ওপরে হাত দিতে পারত না। সেদিন ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশ সদস্য ও বিজিবি সদস্যরা কেন নিরবতা পালন করেছিল সেটি আমি জানতে চেয়েছি ডিবি প্রধান হারুন সাহেবের কাছে।
জাল ভোট সম্পর্কে তিনি বলেন, হ্যাঁ- সেদিন জাল ভোট পড়েছিল। আমার কাছে ভিডিও ফুটেজ আছে। ১০০০ করে টাকা ভোট কেন্দ্রে দেওয়া হয়েছে। একজন ৫০টাও ভোট দিয়েছে। ১২ বছর ১৩ বছরের ছেলে-মেয়েকে তারা সিল মারতে পাঠিয়েছে। তারা ভোটারও না ভোটার তালিকায় তাদের নামও নেই।
১৩টি অ্যাম্বাসি ও মিশন আপনার পাশে দাঁড়িয়েছে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া যাতে সফল হয় সেটিকে ত্বরান্বিত করার জন্য তারা আপনাকে সমর্থন জানিয়েছেন। বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখেন? জানতে চাইলে হিরো আলম বলেন, এটাকে আমি সমর্থন করি এবং খুবই ভালোভাবে দেখি। এই যে অন্যায় অত্যাচার হচ্ছে, মায়ের বুক খালি হচ্ছে, বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনার হয়তো চুপচাপ সহ্য করতে পারে, কিন্তু বাইরের দেশ সব সময় এক থাকবে না। একটা লোককে কুত্তার মতো পেটানো হয়েছে, ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে, সবাই তো আর এক না যে নিরবতা পালন করবে। তারা দেখছে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। তাই তারা (বিদেশিরা) কথাবার্তা বলছে।
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত হামলার ঘটনায় নয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে বনানী থানা পুলিশ।
হামলার ঘটনায় মঙ্গলবার ১৮ জুলাই হিরো আলমের ব্যক্তিগত সহকারী মো.সুজন রহমান শুভ বাদী হয়ে একটি মামলা (নং-১৭) করেন।
মামলায় বলা হয়, সোমবার ১৭ জুলাই বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটে ঢাকা-১৭ আসনের উপ- নির্বাচন চলাকালীন সময়ে বনানী থানাধীন রোড নং-২৪/এ, বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজের মেইন গেইটের সামনে রাস্তার উপর বেআইনি জনতাবদ্ধ হয়ে আমাদের গতিরোধ করে আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলমকে হত্যার উদ্দেশ্যে শ্বাসরোধ করার চেষ্টা, মারপিট করে জখম করে।
গত সোমবার ঢাকা-১৭ আসনের ভোট গ্রহণ চলাকালে বেলা সোয়া তিনটার দিকে বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে যান হিরো আলম। এ সময় নৌকা প্রতীকের কর্মী ও সমর্থকেরা পেছন থেকে তার উদ্দেশে গালাগাল করতে থাকেন এবং কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে কেন্দ্রটির দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা হিরো আলমকে ঘিরে রেখে স্কুলের ফটকের দিকে নিয়ে যান।
ভোটকেন্দ্রের ভেতর থেকে ধাওয়া দিয়ে বাইরে আনার পরে রাস্তায় ফেলে ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলমকে পেটান বিপক্ষ দলের প্রার্থীর সমর্থকেরা।