স্বেচ্ছাশ্রমে নিজ উদ্যোগ ও অর্থায়নে দেশ ও সমাজ উন্নয়নে কাজ করার স্বীকৃতিস্বরূপ ‘ফ্রেন্ডস অব হিউম্যানিটি অ্যাওয়ার্ড ২০২৩’ পেলেন গিরিধর দে। দেশব্যাপী ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংগ্রহ, চর্চা, গবেষণা, প্রচার ও সংরক্ষণের মাধ্যমে তথ্যসমৃদ্ধ দেশ ও আলোকিত সমাজ গঠণে অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরুপ এই পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
গত ১৭ নভেম্বর ২০২৩ শুক্রবার দুপুর ৩টায় ঢাকার কাঁটাবনস্থ ‘কবিতা ক্যাফে’ মিলনায়তনে ফ্রেন্ডস অব হিউম্যানিটি বাংলাদেশ আয়োজিত অষ্টম ‘ফ্রেন্ডস অব হিউম্যানিটি অ্যাওয়ার্ড ২০২৩’ এর এক জমকালো পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক বিকালে আয়োজন করা হয়।
এসময় বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য বিভাগে ‘ঐতিহ্য সংগ্রাহক’ ক্যাটেগরিতে গিরিধর দে এর হাতে পুরস্কার তুলে দেন অনুষ্ঠানের উদ্বোধক দেশ বরেণ্য কবি আসলাম সানী, কবি আলমগীর রেজা চৌধুরী, প্রধান অতিথি কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন, প্রধান আলোচক কবি শাহীন রেজা, বিশেষ অতিথি কামাল আহমেদ (উপ-মহাপরিচালক, বাংলাদেশ বেতার), কবি মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম চৌধুরী (যুগ্মসচিব, সমাজসেবা অধিদপ্তর), সারমিন আক্তার ময়না (চেয়ারম্যান, ফ্রেন্ডস অব হিউম্যানিটি বাংলাদেশ) এবং ফারজানা করিম (বরেণ্য মিডিয়াব্যক্তিত্ব)।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ফ্রেন্ডস অব হিউম্যানিটি বাংলাদেশ সংস্থার প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এর ডেপুটি কমিশনার কবি মো. মেহেবুব হক। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন কবি ও লেখক মেহবুবা হক রুমা।

এছাড়াও সংগঠনের কার্যক্রম নিয়ে কথা বলেন সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক জায়েদ হোসাইন লাকী। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা এবং দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে আগত ১২২ জন কবি, লেখক, সমাজসেবক, সংগঠক, কণ্ঠশিল্পী, আবৃত্তি শিল্পী, নাট্য শিল্পীসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল গুণীজনেরা।
গিরিধর দে একজন সংগ্রাহক, গবেষক ও সমাজ উন্নয়ন সংগঠক। জন্ম ১৯৯৫ সালের ২ ডিসেম্বর ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা উপজেলার চাঁদহাট গ্রামের এক বনেদী পরিবারে। পিতা স্বর্গীয় সুধীর কুমার দে এবং মাতা রীনা রানী দে। গিরিধর দে-এর পিতা ছিলেন একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী এবং মাতা গৃহিণী।
গিরিধর দে চাঁদহাট বাজার উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, মুকসুদপুর কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক আর হিসাববিজ্ঞান বিষয়ে সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
বিজ্ঞাপন
ইতিহাস, শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও মুক্তিযুদ্ধ গিরিধরের পছন্দের বিষয়। পিতা ছিলেন সৌখিন ও প্রচণ্ড ইতিহাসপ্রেমী একজন মানুষ। প্রযুক্তি ক্ষেত্রেও ছিল বেশ আগ্রহ। বাবার থেকে সৃষ্টি হওয়া আগ্রহ ছোটবেলা থেকেই গিরিধরকে ইতিহাস ও সংস্কৃতির চর্চায় আগ্রহী করে তোলে। পরে নিজ উদ্যোগ ও অর্থায়নে দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা, অবহেলায় নষ্ট হয়ে যাওয়া দেশীয় ইতিহাস, সংস্কৃতি সম্পর্কিত দুষ্প্রাপ্য দলিলাদি সংগ্রহ শুরু করেন গিরিধর।
তরুণ প্রজন্মের বই পড়ার প্রতি অনাগ্রহ ও অনলাইনে সময় কাটানোর প্রবনতাকে কাজে লাগিয়ে ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশের সর্ব বৃহৎ ইতিহাস চর্চা কেন্দ্রিক ডিজিটাল প্ল্যাল্টফর্ম, সংগ্রহ শালা ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠান ‘বাংলাদেশের দুষ্প্রাপ্য ছবি সমগ্র’। যেটি জন্ম লগ্ন থেকেই সারা দেশব্যাপী বাংলার আবহমান ইতিহাস, সংস্কৃতির দুষ্প্রাপ্য দলিলাদি সংগ্রহ, চর্চা, গবেষণা, প্রচার, তথ্যবিকৃতিরোধ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ডিজিটালভাবে সংরক্ষণের পাশাপাশি নানা মানবিক ও সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ড মাধ্যমে একটি তথ্য সমৃদ্ধ দেশ ও আলোকিত সমাজ গঠনে নিরলসভাবে কাজ করছে। তিনি এই প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক।
দেশীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতি নিয়ে বিগত প্রায় ১০ বছর যাবৎ কাজ করছেন তিনি। নিজ উদ্যোগে দেশব্যাপী সংগ্রহ করেন প্রায় ৮০ হাজার দুষ্প্রাপ্য দলিলাদি। যেগুলো পরবর্তীতে চর্চা, গবেষণা, প্রচার, তথ্যবিকৃতিরোধ ও ডিজিটালভাবে সংরক্ষণের পাশাপাশি দেশে সৃষ্টিশীল কাজ বৃদ্ধি করতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও অসংখ্য জনসাধারণকে দিয়েছেন বিনামূল্যে। তথ্য, ছবি-ভিডিও-দলিল-দস্তাবেজ-সংকলন-নথি-পত্রিকা সরবরাহ সেবা, গবেষকদের সহায়তা প্রদাণসহ নানা সেবা প্রদাণ করেন তিনি।
ভিন্ন ধর্মী উদ্যোগের মাধ্যমে দেশীয় ইতিহাস, সংস্কৃতি চর্চায় নানা উপায়ে আগ্রহী করে তুলেছেন অসংখ্য মানুষকে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয় নিয়ে সম্পন্ন করেছেন নানা ভিন্ন ধর্মী উদ্যোগ। তরুণ প্রজন্মসহ সকলকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আগ্রহী করে তুলতে ‘বাংলাদেশের দুষ্প্রাপ্য ছবি সমগ্র’-এর মাধ্যমে করেন নানা ধারাবাহিক আয়োজন, যার ভেতর ‘বুকের ভেতর যুদ্ধকথা’ অন্যতম।
এছাড়া ‘হারানো বন্ধুর খোঁজে’ নামক তার একটি জনপ্রিয় মানবিক উদ্যোগ রয়েছে, যেখানে এ পর্যন্ত শতাধিক হারানো বন্ধু, স্বজন দের খুঁজে পেতে সহায়তা প্রদান এবং পুনর্মিলনসহ তার উদ্যোগে রয়েছে এমন অসংখ্য মানবিক সেবা যা দেশ ও সমাজের কল্যাণে নিবেদিত।
শুধুমাত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই তার প্রতিষ্ঠানের সদস্য সংখ্যা প্রায় সারে ১৫ লাখ। সারা দেশে গড়ে তুলেছেন অসংখ্য স্বেচ্ছাসেবী ও পাঠক। প্রতি মাসে শুধুমাত্র অনলাইনেই তাদের কর্মকাণ্ডের রিচ/ পাঠক সংখ্যা প্রায় ১০ কোটি । ভবিষ্যতে একটি ডিজিটাল মিউজিয়াম করতে চান গিরিধর।
ফ্রেন্ডস অব হিউম্যানিটি অ্যাওয়ার্ড ছাড়াও তিনি অর্জন করেছেন: জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড ২০২১; নেপাল-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশীপ অ্যাওয়ার্ড ২০২৩; হিরো অ্যাওয়ার্ড ২০২২; অগ্রযাত্রা কর্মদীপ্ত পদক ২০২২সহ দেশ ও সমাজের কল্যাণে কাজের স্বীকৃতিস্বরুপ নানা সময়ে নানা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করেছেন তিনি।
বিজ্ঞাপন