চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

রোজায় স্বাস্থ্যকর খাবার নির্বাচন

রোজায় স্বাস্থ্যকর খাবার নির্বাচনে পুষ্টিবিদ  এ বি সিদ্দিক জানালেন-

স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ এবং নিয়মিত মানসিক ও শারীরিক অনুশীলন রমজান মাসে আমাদের শারীরিক ও আধ্যাত্মিক চাহিদাকে পূর্ণতা দিতে পারে। রোজা রাখার মাধ্যমে অনায়াসে খাদ্যাভ্যাসকে পরিবর্তন করতে পারি, সেই সঙ্গে পারি শরীরের জমানো টক্সিনগুলোকে ভেঙে শরীর থেকে বের করে দিতে।

রমজান মাসের খাবারদাবার অন্যান্য মাসের স্বাভাবিক খাবারদাবার থেকে খুব বেশি ভিন্ন হওয়াটা ঠিক নয়। তবে খাদ্য গ্রহণের সময় আর পরিমাণে পরিবর্তন প্রয়োজন। উচিত যতটা সম্ভব সাধারণ খাবার খাওয়া। যাতে শরীরের ওজন খুব বেশি বেড়ে না যায় আবার একেবারে কমেও না যায়। সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজন সুষম খাবার। দরকার পরিমাণমতো শস্যজাতীয় খাবার, শাকসবজি, ফলমূল, দুধসহ মাছ, মাংস বা ডিম। রমজান মাসেও এর ব্যতিক্রম নয়। তবে সারা দিন রোজা রাখার পর খাবার নির্বাচন ও গ্রহণের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় খেয়াল রাখা দরকার। দ্রুত হজম হয় এমন খাবারের পরিবর্তে বেছে নেয়া দরকার এমন খাবার, যা হজম হতে বেশি সময় লাগে। অর্থাৎ এমন সব খাবার গ্রহণ করা, যা হজম হতে আট ঘণ্টার মতো সময় লাগে। এ রকম খাবারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো লাল চাল, লাল আটা, ওটস, বার্লি, নানা রকমের ডাল, শিমের বিচি ইত্যাদি।

খাবার নির্বাচনে দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে খাদ্য আঁশের উপস্থিতি। মূলত যেসব খাবারে খাদ্য আঁশ বেশি থাকে সেসব খাবারই হজম হতে বেশি সময় লাগে। শস্যজাতীয় খাবার ছাড়াও শাকসবজি, খোসাসহ ফল, শুকনা ফল, বাদাম ইত্যাদি খাদ্য আঁশসমৃদ্ধ খাবারগুলোর মধ্যে অন্যতম।

তৃতীয় বিষয়টি হলো, অধিক ভাজাপোড়া ও চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করা। কারণ এ ধরনের খাবারে বদহজম, বুক জ্বালাপোড়াসহ শারীরিক ওজন বৃদ্ধিজনিত সমস্যা হতে পারে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পানি। প্রতিদিন কমপক্ষে আট গ্লাস বিশুদ্ধ পানি পান করা প্রত্যেকের জন্য জরুরি। একসঙ্গে বেশি পরিমাণ পানি পান না করে ইফতার ও সেহরির মধ্যবর্তী সময়ে অল্প অল্প করে বারবার পানি পান করা ভালো।

সেহরির খাবার
সেহরির খাবার যেন কোনোভাবেই বাদ না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। যদিও সারা দিনের ক্ষুধা সেহরির মাধ্যমে নিবারণ করা সম্ভব নয়, কিন্তু আমরা যদি খাবার নির্বাচনের ক্ষেত্রে একটু খেয়াল রাখি, তাহলে অনায়াসেই ক্ষুধাকে বিলম্বিত করতে পারি। সেহরির খাবার নির্বাচনে নজর দিতে হবে আমিষ, জটিল শর্করা ও খাদ্য আঁশের প্রতি। এ সময় খেতে পারেন লাল চালের ভাত এক থেকে দেড় কাপ, মিক্সড সবজি, মাছ বা মুরগি, ডাল, দই অথবা ননিবিহীন
দুধ ১ কাপ।

ইফতার
সারাদিন রোজা রাখার পর স্বাভাবিকভাবেই রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমে যায়। সে জন্য ইফতারের শুরুটা হওয়া দরকার কিছুটা দ্রুত হজম হয় এমন ধরনের শর্করাজাতীয় খাবার দিয়ে। সেই সঙ্গে দরকার পর্যাপ্ত পরিমাণ পানির। ইফতারের সময়কার খাবারকে দুই ভাগে ভাগ করে খাওয়া স্বাস্থ্যসম্মত। প্রথম ভাগ মাগরিবের নামাজের আগে। এ সময় খেতে পারেন খেজুর ৩-৪টা, হালকা গরম ভেজিটেবল/চিকেন স্যুপ, ছোলা সিদ্ধ আধা বাটি, যেকোনো ফলের জুস/লাবাং। আর দ্বিতীয় ভাগ মাগরিবের নামাজের পর। এ সময় খেতে পারেন পায়েস/দই/চিঁড়া/ওটস, কলা বা আপেল।

রাতের খাবার
রোজার মাসে রাতের খাবার কিছুটা হালকা হলে ভালো। সব রকমের ফুড গ্রুপ থেকে কিছু কিছু খাবার রাখা দরকার। রাতের খাবার হতে পারে ভাত, মাছ/মুরগি ১ টুকরা, সবজি, সালাদ।

শারীরিক জটিলতা যদি দেখা দেয়
রোজার মাসে শারীরিক কিছু কিছু জটিলতা দেখা দিতে পারে। খাদ্যাভ্যাসের কিছুটা পরিবর্তনের মাধ্যমে এই জটিলতাগুলো থেকে অনেকটা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।

কোষ্ঠকাঠিন্য
খাবারে খুব বেশি রিফাইনড ফুডস, অপর্যাপ্ত খাদ্য আঁশ এবং পানিস্বল্পতা থাকলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। সে জন্য অতিরিক্ত রিফাইনড খাবার বর্জন করতে হবে, পানি খাওয়ার পরিমাণ বাড়াতে হবে। সেই সঙ্গে খেতে হবে আঁশ সমৃদ্ধ খাবার। ইচ্ছা করলে ইসবগুলের ভুসি খেতে পারেন।

বদহজম ও পেটফাঁপা
অতিরিক্ত খাওয়ার কারণে সাধারণত বদহজম ও পেটফাঁপা হয়। এ ছাড়া ভাজাপোড়া খাবার, অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবারের কারণেও বদহজম হতে পারে। ডিম, বাঁধাকপি, মসুর ডাল, কোমল পানীয় পেটে গ্যাস তৈরির জন্য দায়ী। তাই বেশি অসুবিধা হলে এ খাবারগুলো গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন। বেশি খাবেন না। কোমল পানির পরিবর্তে ফলের রস বা নিরাপদ পানি পান করুন। ভাজাপোড় খাবার পরিহার করুন।

নিম্ন রক্তচাপ
সাধারণত বিকেলের দিকে রক্তচাপ কিছুটা কমে যেতে পারে এবং শরীর দুর্বল ও ক্লান্ত হয়ে পড়তে পারে। শরীরে লবণ ও পানির অভাবে এমনটা হয়। সে জন্য তরল খাবারের পরিমাণ বাড়িয়ে দিন, নিজেকে শান্ত রাখুন এবং খাবারে কিছুটা লবণ যুক্ত করুন।

মাথাব্যথা
যাদের ধূমপান বা কফি খাওয়ার অভ্যাস আছে তাদের সাধারণত রোজার শুরুর কয়েক দিন বেশ মাথাব্যথা হতে পারে। সে জন্য রোজা শুরু হওয়ার দিনকয়েক আগে থেকে কফি ও সিগারেট খাওয়া আস্তে আস্তে কমিয়ে দেওয়া উচিত। হারবাল টি অথবা গ্রিন টিতে অভ্যস্ত হতে পারেন। নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমান।

খিঁচুনি
রোজার মাসে অনেকের মাংসপেশিতে খিঁচুনি আসতে পারে। মূলত ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাসিয়ামযুক্ত খাবারের অপর্যাপ্ততার জন্যই এমনটি হয়। শাকসবজি, ফল, দুধ, মাংস এবং খেজুর খাওয়ার মাধ্যমে উল্লিখিত মিনারেলসগুলোর চাহিদা পূরণ করতে পারেন।

গ্যাস্ট্রিক আলসার বুকজ্বালা
যাঁদের এ ধরনের সমস্যা আছে তাঁরা একসঙ্গে বেশি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। দিনের খাবারকে তিন ভাগে ভাগ করে এক ভাগ ইফতারে, এক ভাগ রাতের খাবারে, আরেক ভাগ সেহরির সময় খান। খাবার ভালোভাবে চিবিয়ে খান এবং দ্রুত খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। চর্বিজাতীয় খাবার খাওয়া কমিয়ে দিন। খুব গরম ও খুব বেশি ঠাণ্ডা খাবার খাবেন না। ধূমপান থেকে বিরত থাকুন। পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমান। ভাজাপোড়া ও অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার পরিহার করুন। চা-কফি খাওয়া বাদ দিন। অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার গ্রহণ করবেন না। গ্যাস ফর্ম করে এমন খাবার যেমন রসুন, পেঁয়াজ, মসুর ডাল, কোমল পানীয়, বাঁধাকপি, বাদাম খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

ডায়াবেটিস
ডায়াবেটিক রোগীরা রোজার শুরুতে ডাক্তারের পরামর্শ নিন এবং পুষ্টিবিদের কাছে আপনার উপযোগী ডায়েট চার্ট করে নিন। সাধারণভাবে ইফতার, রাতের খাবার, ও সেহরিতে সমপরিমাণ খাবার খান। ইফতার এবং সেহরির সঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করবেন। রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়মিত পরিমাপ করুন।

ব্যায়াম
রমজানে সুস্থতা নিশ্চিত করতে ইফতারের দুই ঘণ্টা পর ১৫-২০ মিনিট হাঁটা ভালো।