সরকারি চাকরিতে থাকা অবস্থায় চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলায় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. হাদী জিয়াউদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে বেসরকারি হাসপাতাল চালানোর অভিযোগ, রোগী ভাগিয়ে নেয়ার অভিযোগ তাকেই করা হয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখার সহকারী পরিচালক। অর্থাৎ অবৈধ হাসপাতাল চালানো ব্যক্তিই এখন দেবে অন্য ক্লিনিকের লাইসেন্স। এ যেন ভক্ষককে দেওয়া হলো রক্ষকের দায়িত্ব!
গত সোমবার (৪ মার্চ) মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের (পার-২) অধিশাখার যুগ্মসচিব মো. মুঞ্জুরুল হাফিজ স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে ৭৩ জন বিসিএস স্বাস্থ্য কর্মকর্তার পদন্নতির মধ্যে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলায় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. হাদী জিয়াউদ্দিন আহমেদের নাম রয়েছে। তাকে মহাখালির স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ( মেডিকেল বোর্ড ও প্রাইভেট ক্লিনিক) করা হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলায় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. হাদী জিয়াউদ্দিন আহমেদ নিজেই খুলে বসেছিলেন অবৈধ ক্লিনিক। আর তাকেই সেখানে সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগীদের ভাগিয়ে আনা হতো। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি যাদের চিকিৎসা করেন, বেশিরভাগ রোগীকেই পাঠানো হয় আরেকটি ক্লিনিকে। যা তার নিজের।
অনিয়মে চালানো অবৈধ এ ক্লিনিকটি পুরো জেলায় সবচেয়ে বড়। আলমডাঙ্গার বাইরে অন্যান্য উপজেলার রোগীদেরও চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা হয় এখানে। এই নাম সর্বস্ব ক্লিনিকে যারা ভর্তি হন, তারা মূলত সরকারি হাসপাতাল ঘুরে আসা। যে চিকিৎসা সরকারিতে হয় না, তা এখানে ঠিকই হয়। যার জন্য, গুণতে হয় বাড়তি টাকা।
গত ১০ ফেব্রুয়ারি নিবন্ধন না থাকায় চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় ডক্টরস কেয়ার এন্ড স্পেশালাইজড হাসপাতাল বন্ধ ঘোষণা করে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। পরিচালনার নিবন্ধন না থাকায় ক্লিনিক ও অপারেশন থিয়েটার বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
আলমডাঙ্গা উপজেলা শহরের ডক্টরস কেয়ার অ্যান্ড স্পেশালাইজড হাসপাতালটি পরিচালনা করতেন আলমডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. হাদী জিয়াউদ্দিন আহমেদ। স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নিজেই অবৈধভাবে বেসরকারি ক্লিনিকটির কার্যক্রম পরিচালনা করেন বলে অভিযোগের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান চালায় স্বাস্থ্য বিভাগ।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. হাদী তার নিজের ক্লিনিক থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, সেখানে তিনি মাঝে মাঝে রোগী দেখতে বসেন। তবে সেটির মালিকানা তার নয়।
ভুক্তভোগী রোগীরা বলছেন, উপজেলা সরকারি হাসপাতালে ওষুধ দেয়া হয় না তেমন। কেবলমাত্র প্রাথমিক চিকিৎসা শেষেই তাদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় বাইরের ক্লিনিকে।
জানা যায়, ক্লিনিকটা ডা. হাদী জিয়াউদ্দিন আহমেদের। যা স্বীকার করেন ক্লিনিকটির কর্মরতরাও। ক্লিনিক বলা হলেও এটি আসলে একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার। পরীক্ষা-নিরীক্ষার অনুমোদন নিয়ে এখানে করা হচ্ছে রোগী ভর্তি। যা রীতিমত আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
সে সময় অভিযান শেষে ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. আওলিয়ার রহমান বলেন, প্রতিষ্ঠানটিতে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অনুমোদন আছে। কিন্তু ক্লিনিক বা অপারেশন থিয়েটারের নিবন্ধন ছিল না। অভিযানে সত্যতা মেলায় ক্লিনিক ও অপারেশন থিয়েটার বিভাগ বন্ধ করা হয়েছে। পরবর্তীতে ক্লিনিকের নিবন্ধন পেলে তা চালু করা হবে। এছাড়া বর্তমানে ওই ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন রোগীদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্থানান্তরের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন ডা. মো. সাদাৎ হাসান বলেন, একজন সরকারি কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও লাইসেন্স প্রাপ্ত না হয়ে ‘ডক্টরস কেয়ার এন্ড স্পেশালাইজড হসপিটাল নামে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছেন যা বাংলাদেশ মেডিকেল প্র্যাকটিস এবং বেসরকারি ক্লিনিক ও ল্যাবরেটরি অধ্যাদেশ- ১৯৮২ এর পরিপন্থী এবং দণ্ডনীয় অপরাধ।