চট্টগ্রাম থেকে: বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) নবম আসরের চট্টগ্রাম পর্ব শেষের পথে। টি-টুয়েন্টির ধরনটা স্থানীয় ব্যাটাররা ধরে ফেলায় তৃপ্ত নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন। জাতীয় দলের পাশাপাশি কয়েকজন তরুণও ভালো করছেন এবার। যাদের মধ্যে অন্যতম সিলেট স্ট্রাইকার্সের তৌহিদ হৃদয়। আরও কিছু ইতিবাচক বিষয়ও নজরে এসেছে নির্বাচকের।
চ্যানেল আই অনলাইনকে দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে হাবিবুল বাশার কথা বলেছেন ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপসহ নানা প্রসঙ্গে।
চট্টগ্রাম পর্ব শেষ হয়ে আসছে। আর দুই দিন খেলা আছে। কেমন মনে হচ্ছে এবারের বিপিএল?
হাবিবুল: সবচেয়ে বেশি ইতিবাচক বিষয় উইকেট খুব ভালো পাচ্ছি আমরা। এই সময়টায় সাধারণত আমরা ভালো উইকেট পাই না। মিরপুরে খুব ভালো উইকেটে খেলা হয়েছে প্রথম পর্বে। যেটি প্রথম শর্ত ভালো ক্রিকেটের জন্য। চট্টগ্রামে আরেকটু ভালো উইকেটের আশা করেছিলাম। কেননা সবসময় আমরা এখানকার উইকেট ভালো পাই। একটু অস্বাভাবিক আচরণ করেছে যেটি অপ্রত্যাশিত ছিল। তারপরও অনেক খারাপ বলব না। সবমিলিয়ে কিছু পজিটিভ ইনিংস দেখতে পেরেছি। কিছু খেলোয়াড়ের ভালো খেলা চোখে পড়েছে। এখন পর্যন্ত বিপিএলটা ভালোই দেখছি আমরা।
নির্বাচকের চোখে বিপিএলে কোনো খেলোয়াড়কে দেখেছেন কিনা?
হাবিবুল: কিছু খেলোয়াড় তো অবশ্যই পেয়েছি, যেটা ভালো লেগেছে। যদি আমাকে নির্বাচকের চোখে দেখতে বলেন, অনেকেই ব্যাটিং করছেন টি-টুয়েন্টি ফরম্যাটে যেভাবে ব্যাটিং করা দরকার। রান করাটাই তো শুধু ব্যাপার না। টি-টুয়েন্টি ফরম্যাটে যে ধরনের ব্যাটিং দেখতে চাই এবারের বিপিএলে সে ধরনের কিছু খেলোয়াড়ের সে ধরনের ব্যাটিং চোখে পড়েছে। যেটি খুব আশাব্যঞ্জক।
যেটি বলা হচ্ছে, এটি দিয়ে শুরু হল ২০২৪ টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের একটা মিশন। খেলোয়াড় বাছাই থেকে শুরু করে। এবার ইনটেন্ট দেখা যাচ্ছে অনেকের ১৪০ প্লাস স্ট্রাইক রেট। সেই জায়গা থেকে তৌহিদ হৃদয়ের প্রসঙ্গ তো এসেই যায়।
হাবিবুল: দুর্ভাগ্য যে চোটে পড়ে গেছে। আশা করছিলাম পুরো বিপিএলটায় ওর ব্যাটিং দেখতে পারব। যে তিনটা ম্যাচ দেখেছি ওর, যে ব্যাটিংটা করেছে টি-টুয়েন্টিতে ঠিক এই ধরনের ব্যাটিং আমরা দেখতে চাই। আমাদের হাই-পারফরম্যান্স (এইচপি) খেলোয়াড় সে, তার আগে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলে এসেছিল। তার ব্যাটিং দেখতে খুব ভালো লাগছে। টি-টুয়েন্টিতে যে ধরনের ব্যাটিং করা দরকার সে ধরনের ব্যাটিংটাই ওর কাছ থেকে পেয়েছি। যেটি নিঃসন্দেহে আমাদের ভবিষ্যতে চিন্তার খোরাক তো অবশ্যই দেবে। আরও কিছু পারফরম্যান্স আশা করছি। দেখা যাক, আরও কয়েকটি পর্ব বাকি আছে। সেখানে চাইব যে আরও দুই-একজন রান করুক এবং অবশ্যই টি-টুয়েন্টি ফরম্যাটে যে ধরনের ব্যাটিং চাই সে ধরনের করুক। কিছুটা হলেও বিপিএলে আমরা সে ধরনের ব্যাটিং দেখতে পাচ্ছি।
তৌহিদ হৃদয় বলছিল সেভাবে প্রমাণ করতে না পারার পরও আপনারা সুযোগ দিয়েছেন বিভিন্ন ক্যাম্পে। সে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে মিডিয়ায়। ওর প্রতি এমন আস্থা ছিল নাকি আপনারাও চমকে গেছেন ওর এখনকার ব্যাটিং দেখে?
হাবিবুল: ওর বিপিএলের ব্যাটিংটা সবার চোখে পড়েছে। কিন্তু সে ধারাবাহিকভাবে রান করছে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে। গত বিসিএলে দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছে। প্রথম শ্রেণিতেই ওর ব্যাটিংটা বেশি চোখে পড়েছিল। তবে টি-টুয়েন্টি ফরম্যাটে এমন ব্যাটিং আগে ওকে করতে দেখিনি। এরআগেও বিপিএল খেলেছে, সেখানে সুযোগটা একটু কম পেয়েছিল। এবার ওর ফ্র্যাঞ্চাইজি ওকে সুযোগ দিয়েছে উপরের দিকে ব্যাটিং করার, স্বাধীনতা দিয়েছে। যার জন্য এই ধরনের ব্যাটিংটা দেখতে পেয়েছি। সত্যি কথা বলতে এভাবে ওকে ব্যাটিং করতে খুব কম দেখেছি। এটা নির্ভর করে ব্যক্তির উপর। কে তার খেলাটা কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন। সুযোগ সবাই কম-বেশি পায়। কিন্তু ব্যক্তির উপর নির্ভর করে আপনি আপনার খেলাটা কোথায় নিয়ে যাবেন। আমি খুব খুশি। সাহায্য তো সবাই পায়। প্র্যাকটিসে সুযোগ সবাই পায়। কিন্তু সে সুবিধা কে কতখানি কাজে লাগাচ্ছে সেটি তার উপরই নির্ভর করে। আমার মনে হয় তৌহিদ হৃদয় সে সুযোগ ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছে। আমাদের যে এইচপির প্রোগ্রামগুলো হয়েছে সবাই প্র্যাকটিস করেছে। ও হয়ত নিজের যে প্র্যাকটিসটা করা দরকার সেটি বেশি করতে পেরেছে। সেটি হয়ত কাজে লেগেছে।
তরুণরা ভালো করার পর অতীতে জাতীয় দলে সুযোগ দিয়েছেন খুব ইতিবাচকভাবে। আফিফ-জাকিরসহ একসঙ্গে টি-টুয়েন্টিতে চার ক্রিকেটারের অভিষেকও হয়েছিল ২০১৮ সালে। এবারও কি সেরকম কিছু হতে পারে?
হাবিবুল: আমরা একটা জিনিস সবসময় মনে রাখি, সহজে কাউকে সুযোগ দিতে চাই না, সহজে কাউকে বাদও দিতে চাই না। যাকেই দলে আনি তাকে পর্যাপ্ত সুযোগ দিতে চাই। আর চাই সবাই নিজেকে একটু প্রস্তুত করেই আসুক। কারণ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কাউকে প্রস্তুত করার সময়-সুযোগ কোনটিই পাওয়া যায় না। যখন জাতীয় দল খেলে, ফল না এলে খুব মুশকিল হয় কাউকে বেশিদিন ধরে রাখা। তরুণদের প্রতি আমাদের নজর অবশ্যই আছে। কারণ আমাদের সিনিয়র যারা আছেন তারা তো সবসময় পারফর্ম করেন, তাদের সাথে তরুণরা যদি এগিয়ে আসেন তাহলে পারফরম্যান্সটা ধারাবাহিক হবে।
২০২৩-এর বাংলাদেশকে কেমন দেখতে চান। দলের গুরুত্বপূর্ণ অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা মেহেদী হাসান মিরাজ সাক্ষাৎকারে খুব আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলেছেন, বছরটা খুব ভালো যাবে। এ বছরের শেষের দিকের ওয়ানডে বিশ্বকাপ নিয়েও খুব আশাবাদী।
হাবিবুল: আমিও তাই আশা করছি। পরের বিশ্বকাপে (২০২৭) হয়ত আমরা আমাদের সব অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের নাও পেতে পারি। এই বিশ্বকাপে আশা করছি সবাইকেই পাবো। পাশাপাশি তরুণরা যদি ভালো করে নিঃসন্দেহে বছরটা ভালো যাওয়া উচিত। সবসময় বিশ্বাস করি যখন একজন সিনিয়র ও জুনিয়রের ভালো মিশ্রণ থাকে ওই দলটা সাধারণত ভালো খেলে থাকে। আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং ২০২৩। কেননা প্রত্যাশা অনেক বেশি থাকবে এবছর। কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিরিজ আছে। আমরা সিরিজ বাই সিরিজ এগোতে চাই। তবে পরিশ্রম অনেক করতে হবে। আমাদের উন্নতির অনেক জায়গা আছে। অনেক জায়গায় কাজও করতে হবে। আমি আশাবাদী এই বছরটা আমাদের ভালো যাবে।
নির্বাচক হিসেবে বিশ্বকাপ ঘিরে প্রত্যাশা কী?
হাবিবুল: আমি চাই সবাই যেন ইনজুরিমুক্ত থাকে। কারণ ইনজুরির কারণে অনেক সময় অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিরিজে অনেককে পাই না। আশা করি যে সবাই সুস্থ থাকবে। সবাইকে এভেইলেবল পাবো। ম্যাচে খেলার জন্য ফিট পাবো। ২০২৩ বিশ্বকাপ পর্যন্ত দলটা যেন একসাথে থাকতে পারে। ফর্মটা নিয়ে যেন আমরা বিশ্বকাপে যেতে পারি। এই বিশ্বকাপ যেহেতু উপমহাদেশে হচ্ছে, আর আমাদের দলটা ভালো করছে, প্রত্যাশা বেশি থাকবে। প্রত্যাশার চাপটাও থাকবে। তবে নির্বাচক হিসেবে কিংবা একজন সাবেক ক্রিকেটার হিসেবে অবশ্যই চাইব, এই যে ভালো সময়টা তা যেন সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারি।
মিরাজকে দেখা গেল ভারত সিরিজে পাক্কা অলরাউন্ডার হিসেবে। বিপিএলেও ভালো করছেন। ওপেনিংয়ে ১৪২ স্ট্রাইক রেট। আপনি কেমন দেখছেন?
হাবিবুল: ১৪২ স্ট্রাইক রেট! খুব গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু। রানটা খুব বেশি না হলেও দল যেমন চাচ্ছে সেভাবে ব্যাটিং করছে। আমার কাছে মনে হয় মিরাজ সবসময় একজন টিম গেম খেলোয়াড়। দল যেমন চায় ও সেভাবে খেলতে চায়। যেটি খুব ভালো একটা বিষয় মিরাজের। ওর কাছ থেকেও প্রত্যাশা অনেকবেশি থাকবে এ বছরটায়। এখন কিন্তু দলকে পারফরম্যান্স দিয়ে লিড দেয়ারই কথা, অনেকদিন ধরে খেলছে। এখন ওর সেরাটা আমরা দেখতে পাচ্ছি। আগেও ছিল তবে সামর্থ্যের সেরা প্রয়োগটা ও এখন করছে। ব্যাটিং বোলিং ফিল্ডিং, দলের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ একজন সদস্য। দল যা চায় ও সেটাই করে থাকে। হোল হার্টেড ক্রিকেটার। খেলাটা খুব উপভোগ করে, দৃঢ় প্রতিজ্ঞ থাকে। দলের জন্য সম্পদ বলতে পারেন।