বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে দেশ বিদেশের ৭৬টি নৃত্যদলের অংশগ্রহণে ৬ দিনব্যাপী চলা ‘গণজাগরণের নৃত্য উৎসব’ এর সমাপনী অনুষ্ঠিত হয়েছে শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) রাতে। একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে এদিন সন্ধ্যায় জাকজমকর্পূণ সমাপনী আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়েছে ১৬ টি নৃত্যদলের মনোমুগ্ধকর শৈল্পিক পরিবেশনা দিয়ে।
সমাপনী অনুষ্ঠানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। তিনি বলেন ‘গণজাগরণ তৈরী করা, শুধু আমার দেশে নয় সারা বিশ্বে। বঙ্গবন্ধু বলেছেন- শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বে যে জাতি যেখানে নির্যাতিত হবে তার পাশে দাঁড়াবে বাংলাদেশ’।
মহাপরিচালক আরো বলেন– ‘গণজাগরণের এই শিল্প আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। পৃথিবী যখন বিপদে পড়বে তার পাশে আর কেউ না দাঁড়াক বাংলাদেশ দাঁড়াবে। আমরা গণতন্ত্র চাই। বঙ্গবন্ধু বলেছেন, শোষিতের গণতন্ত্র, সাধারণের গণতন্ত্র, দিনমজুরের গণতন্ত্র, কৃষকের গণতন্ত্র। যে গণতন্ত্র আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্য সংস্কৃতি নষ্ট করবে সেই গণতন্ত্র আমরা চাইনা’।
আগামী বছর ১৯ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষ্যে বছরব্যাপী অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেন লিয়াকত আলী লাকী। তিনি বলেন- ‘আমরা দুটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছি, একটি ‘উন্নয়নের বাংলাদেশ, নান্দনিক বাংলাদেশ’ জাতীয় আলোকচিত্র প্রতিযোগিতা। যেখানে দেশের উন্নয়নের যে কোন ছবি মোবাইলেও তুলে পাঠাতে পারেন অন্যটি উন্নয়ন অগ্রগতিতে ৫ মিনিটের চলচ্চিত্র প্রতিযোগিতা ও উৎসব।”
৬ দিনব্যাপী চলা ‘গণজাগরণের নৃত্য উৎসব’ এ অংশগ্রহণকারী দলগুলোর নৃত্য পরিচালক ও শিল্পীরা এসময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। বরাবরের মতই বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনকে সাধুবাদ জানিয়েছেন তারা।
সমাপনী দিনের আয়োজনে শুরুতেই নৃত্য পরিবেশন করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নৃত্যদল। ‘মিশ্র ছন্দের রাগ মালিকা’ শিরোনামে পরিবেশিত হয় নৃত্যালেখ্য। এর নৃত্য পরিচালনা করেছেন সাজু আহমেদ, মূল ভাবনা ও পরিকল্পনায় ছিলেন লিয়াকত আলী লাকী। এরপর ‘ধন্য সেই পুরুষ’ শিরোনামে নৃত্য পরিবেশন করে নৃত্যদল- ভাবনা, নৃত্য পরিচালনা করেছেন সামিনা হোসেন প্রেমা। ‘প্রকৃতি নিজের কথা বলে’ শিরোনামে পরিবেশিত হয় নৃত্যালেখ্য। ‘প্রচণ্ড গর্জন’ খণ্ডনৃত্য পরিবেশন করে নৃত্যদল কাথ্যাকিয়া- দ্য সেন্টার অফ আর্টস, নৃত্য পরিচালনা করেছেন এস এম হাসান ইশতিয়াক। ‘সোহাগপুরের স্মৃতিকথা’ শিরোনামে নৃত্য পরিবেশন করে নৃত্যদল – দীক্ষা। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে আক্রান্ত হয় গারো পাহাড়ের কোল ঘেষা নিভৃত গ্রাম সোহাগপুর। মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অবলম্বনে সোহাগপুর গ্রামের উপর রচিত নৃত্যনাট্য পরিচালনা করেছেন সুইটি দাস চৌধুরী, গ্রন্থনা ও রচনায় মামুন উর রশিদ এবং সংগীত রচনা রোকন ইমন।
এরপর পরিবেশন করে পল্লবী ডান্স থিয়েটার, নৃত্য পরিচালনা করেছেন মিনু হক। এরপর পরিবেশিত হয় নৃত্যালেখ্য ‘নারীর মুক্তিযুদ্ধ’ পরিবেশন করে কত্থক নৃত্য সম্প্রদায়। পরিবেশনাটির নৃত্য পরিচালনা করেছেন সাজু আহমেদ। ‘অন্তর্দেশ’ নৃত্যালেখ্য পরিবেশন করে কায়া আশ্রম নৃত্যদল, নৃত্য পরিচালনা করেছেন অমিত চৌধুরী। এরপর নৃত্যদল- ধৃতি নর্তনালয় পরিবেশন করে নৃত্যালেখ্য ‘জয়ের আলোকবর্তিকা’ নৃত্য পরিচালনা করেছেন – ওয়ার্দা রিহাব। ‘প্রকৃতির বন্দনা’ শিরোনামে নৃত্য পরিবেশন করে নৃত্যদল- ত্রিশূল, নৃত্য পরিচালনা করেছেন তৃণা মজুমদার। এরপর পরিবেশিত হয় ‘ছিয়ানব্বই-৯৬’ নৃত্যালেখ্য পরিবেশন করে নৃত্যদল – ‘তুরঙ্গমী রেপার্টরি ডান্স থিয়েটার’ নৃত্য পরিচালনায় পূজা সেন গুপ্ত। ‘আমি বনফুল গো’ শিরোনামে নৃত্য পরিবেশন করে নৃত্যদল- আভিনায়া, নৃত্য পরিচালনা করেছেন হেনা হোসেন। গল্প-পৌরাণিক কাহিনী অবলম্বনে ‘কথাকলি আট্টআকথা, উত্তরা স্বয়মবরম’ শিরোনামে নৃত্য পরিবেশন করে নৃত্যদল ‘স্বপ্নচূড়া কালচারাল একাডেমি’ । নৃত্য পরিচালনা করেছেন – আফরিনা আফরোজ চৌধুরী। এরপর নৃত্যালেখ্য পরিবেশন করে নৃত্যদল – জাগো আর্ট সেন্টার, নৃত্য পরিচালনা করেছেন বেলায়েত হোসেন খান। ‘সূর্যদয়ের পথে’ শিরোনামে নৃত্যপরিবেশন করে নৃত্যদল- স্পন্দন, নৃত্য পরিচালনা করেছেন অনিক বোস। ‘নারী শক্তি’ শিরোনামে নৃত্য পরিবেশন করে পুষ্পাঞ্জলী নৃত্যকলা কেন্দ্র। তাদের নৃত্য পরিচালনা করেছেন কস্তুরী মুখার্জী। সবশেষে পরিবেশিত হয় ‘রুদ্রাণী’ পরিবেশন করে কল্যাণী নৃত্যাঙ্গন, নৃত্য পরিচালনা করেছেন দীপা সরকার।