চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

শেষ ছয়মাসে যে কারণে হয়নি বড় বাজেটের ছবি

করোনা পরবর্তী সময়ে গেল ঈদুল ফিতর থেকেই দেশের সিনেমা অঙ্গনে কিছুটা স্বস্তি ফিরতে শুরু করে। ওটিটিতে অভ্যস্ত হওয়ার এই সময়ে ‘বড় পর্দার দিন শেষ’- বলে যারা আশঙ্কা করছিলেন, সেই অনিশ্চয়তা দূর করে বড় পর্দায় চূড়ান্ত সাফল্য দেখা যায় ঈদুল আযহাতে!

পরাণ এর মতো কম বাজেটে নির্মিত সিনেমা দেখতে হলে হলে দর্শকদের ঢল নামে। হয় সুপারহিট। তার কিছুদিনের মধ্যেই বড় পর্দার সেই সাফল্যকে অন্যমাত্রায় পৌঁছে দেয় মেজবাউর রহমান সুমন পরিচালিত ‘হাওয়া’! সিনেমাটি কাঙ্ক্ষিত সাফল্য ছাড়িয়ে যায়।

‘পরাণ’ ও ‘হাওয়া’র দুর্দান্ত সাফল্যে  রীতিমত গা ঝাড়া দিয়ে উঠেন প্রযোজক পরিচালকরা। চলচ্চিত্র ব্যবসায়ীরা মনে করেছিলেন, চলচ্চিত্র বোধহয় ঘুরে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু বাস্তব চিত্রটা অনেকটাই গুড়ে বালি! ‘পরাণ’, ‘হাওয়া’ পরবর্তী অন্য কোনো সিনেমা প্রেক্ষাগৃহ থেকে ব্যবসায়িক সাফল্যের মুখ দেখেনি!

তবে আলোচনা সৃষ্টি করে ‘অপারেশন সুন্দরবন’, ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ছবি ‘দামাল’। বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে সিনেমা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকলেও নিয়মিত প্রয়োজকরা শেষ ছয়মাসে বড় আয়োজনের নতুন ছবির শুটিং করেননি।

সিঙ্গেল স্ক্রিনের মালিকরা বলছেন, দর্শকদের হলমুখী রাখতে মানসম্মত বাণিজ্যিক সিনেমার বিকল্প নেই। অনেকেই বলছেন, বড় আয়োজনের ছবি হলে দর্শক উপভোগ করে। মূলধারার ছবির ‘প্রাণভোমরা’ শাকিব খান নতুন ছবির শুটিং থেকে দূরে আছেন। তার ‘লিডার’ এবং ‘অন্তরাত্মা’ নামে দুটি বড় আয়োজনের ছবির শুটিং শেষ হলেও প্রযোজকরা মুক্তি দিচ্ছেন না। হলমালিক নেতারা বলছেন, এই সময়ের শাকিব খানের সিনেমা মুক্তি খুব দরকার!

আরেক নামী প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার আবদুল আজিজ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, জাজ কাজ শুরু করবে ২০২৩ সালে।

তিনি আরও বলেন, আসলে এখন সিনেমা হল থেকে সেভাবে টাকা আসে না। তাই কেউ বড় বাজেটের সিনেমা করছে না। অনেকেই বলছেন, বিশ্বমন্দার শঙ্কায় অনেক দেশের ব্যবসায়ী সিনেমা বানাচ্ছেন না। প্রযোজক আজিজ বিষয়টির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বলেন, এমনটা নয়।

তবে ‘পরাণ’ ও ‘হাওয়া’ হল থেকে কয়েক কোটি টাকা ব্যবসা প্রসঙ্গে প্রযোজক আজিজ বলেন, এটা সচরাচর ঘটে না। মাঝেমধ্যে হঠাৎ হয়ে যায়।

‘পরাণ’ ছবির প্রযোজক ইয়াসির আরাফাত বলেন, প্রযোজক যে পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে সেটা ঠিকভাবে রিটার্ন আসে না বিধায় বড় সিনেমা নির্মিত হচ্ছে না। এর অন্যতম মূল কারণ দেশে সিনেমা হল সংকট। যে হলগুলো আছে সেগুলোর অবস্থাও ভালো না। ‘পরাণ’ দিয়ে অনেক সিনেমা হল ভালো ব্যবসা করেছে। তারা হলের পরিবেশ উন্নত করবে। এতে আগামীতে সিনেমা হলগুলোতে চেঞ্জ আসবে, ফলে সামনের দিনগুলো ভালো যাবে।

তিনি আরও বলেন, সামনে লাইভ টেকনোলজিস থেকে সিনেমা নির্মিত হবে। ভালো কাজের প্রস্তুতি নিতে সময় লাগে। সংবাদ সম্মেলন করে জানাবো।

‘হাওয়া’র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সান মোশন পিকচারের পক্ষে প্রযোজক অজয় কুণ্ডু বলেন, আমরা অ্যামেচার প্রডিউসার। ৩০ বছরে ছয়-সাতটি সিনেমা করেছি। নিয়মিত প্রযোজক হলে বছরে দু-একটি সিনেমা থাকতো। যে কাজগুলো করি সময় নিয়ে করি। অনেকের সঙ্গে কাজ নিয়ে কথা হচ্ছে, চূড়ান্ত হয়নি। ‘হাওয়া’র সাফল্যের রেশ এখনও কাটেনি। এই ছবির সাফল্যের পরে আমরা আরও বেশি সচেতন হয়েছি। তাই নতুন কাজে আরও সময় লাগছে।

‘মিশন এক্সট্রিম’ ছবির পরিচালক সানী সানোয়ার বলেন, এ বছর পরাণ, হাওয়া ব্যবসায়িক সাফল্য পাওয়ায় চলচ্চিত্রের দর্শক থেকে শুরু করে ওভারঅল মার্কেটে ভালো প্রভাব ফেলেছে। নতুন অনেকেই ছবি নির্মাণে উৎসাহী হয়েছেন। তারা ভিতরে ভিতরে প্রস্তুত হচ্ছেন। সামনে শুরু করবেন। এজন্য সময় লাগছে। অনেকেই ভেবেছিলেন, সিনেমা হয়তো আর ঘুরে দাঁড়াবে না! কিন্তু করোনা পরবর্তী এই দুটি ছবি সেই ধারণা ভুল প্রমাণ করেছে।

চলতি বছরের অন্যতম আলোচিত ছবি ‘শান’ বানিয়ে প্রশংসা কুড়ান এম রাহিম। ইন্ডাস্ট্রির জন্য বড় আয়োজনের নাকি ভিন্ন ধারার ছবি, কোনটা দরকার? জানতে চাইলে তিনি বলেন, নির্দিষ্ট ঘরানায় সীমাবদ্ধ না থেকে ইন্ডাস্ট্রিতে সব ধরনের ছবি দরকার। এক ধরনের ছবি হিট হলে অনেকেই সেই ধাঁচে কাজ করতে চায়। আমি মনে করি এটা ঠিক না। আবার বড় বাজেটের বাণিজ্যিক ছবি না হলে মার্কেট বাড়বে না, দর্শক টানবে না।

আগামীতে বড় বাজেটে নির্মিত ‘মাসুদ রানা’ আনছেন পরিচালক সৈকত নাসির। তিনি বলেন, হলগুলোতে পপুলার কনটেন্ট দরকার। আমাদের এখানে দিন দিন ‘লো বাজেট’-এ মানহীন সিনেমা বানিয়ে মার্কেট নষ্ট করা হচ্ছে। ‘হাওয়া’ যারা দেখেছে তারা বুঝবে সিনেমায় বাজেট অবশ্যই ফ্যাক্ট। এর পাশাপাশি সেন্সরবোর্ড থেকে যেসব নিয়ম দেয়া হচ্ছে এতে স্বাধীনভাবে স্ক্রিনে সবকিছু দেখানো যায় না। এটাও ভালো সিনেমা নির্মাণের অন্তরায়।