দেশের বিভিন্ন জায়গায় নদ-নদীর পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এর ফলে নদী ভাঙনের কবলে পড়ার পাশাপাশি ফসলের ক্ষতি, বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকটসহ নানাবিধ সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
গাইবান্ধা
গাইবান্ধার সবগুলো নদ নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ঘাঘট নদীর পানি শহর পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্রের পানি ফুলছড়ি পয়েন্টে ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছ। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে তিস্তা, যমুনা ও করতোয়া নদীতে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে জেলার গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলার ১৫ ইউনিয়নের প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ।
কুড়িগ্রাম
কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি বিপদসীমার ওপর স্থিতিশীল থাকায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। পানি স্থায়ী হওয়ায় দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে বানভাসীদের। এ অবস্থায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলে প্লাবিত হয়ে পড়া ঘর-বাড়ি ও নৌকায় অবস্থান করা মানুষজন। বিশুদ্ধ খাবার পানি ও শুকনো খাবারের সংকটে পড়েছেন তারা। বন্যা কবলিত এলাকায় তীব্র হয়ে উঠছে গবাদি পশুর খাদ্য সংকটও।
এদিকে সরকারী-বেসরকারী ভাবে ত্রাণ তৎপরতা শুরু হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। ত্রাণ সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ করছেন অনেকই।
স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, উজানের ঢল অব্যাহত থাকায় জেলার নদ-নদীর পানি স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে।
লালমনিরহাট
তিস্তা, ধরলা, সানিয়াজান, রত্নাই সতীসহ নদ-নদীর পানি বাড়ায় লালমনিরহাটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। পানিতে জেলার ৫টি উপজেলার ৩০টি গ্রামের ৫০হাজার মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। বাড়ীঘরে পানি প্রবেশ করায় দুর্ভোগে পড়েছেন বন্যার্তরা। বন্যা প্রবণ এলাকাগুলোতে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকট। সবকিছু তলিয়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে গো খাদ্যের চরম সংকট। পানিতে তলিয়ে রয়েছে ১২শ হেক্টর জমির ধান,বীজতলা,ভূট্টা খেতসহ বিভিন্ন ফসল। এদিকে বন্যার পানি প্রবেশ করায় ২০টি বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
শেরপুর
উজানের পানি নামার ফলে শেরপুর জেলার সদর উপজেলার চরপক্ষিমারী ইউনিয়নের ব্রীজ পয়েন্টে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ২১ জুন মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় প্রায় ২৭ সেন্টিমিটার বেড়েছে। এর ফলে ওই ইউনিয়নের কুলুরচর-বেপারিপাড়ার ব্রহ্মপুত্র নদের চরে বসবাসকারি পরিবারগুলোর শতাধিক ঘর-বাড়ীতে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। ঘরে পানি উঠায় অনেকেই পাশ্ববর্তী উঁচু স্থানে ও জামালপুর শহরের আত্মীয়-স্বজনের বাড়ীতে আশ্রয় নিয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আকবর আলী।
এদিকে, নালিতাবাড়ি, ঝিনাইগাতি ও শ্রীবর্দী উপজেলার মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি সুমেশ্বরী, মাহারশি, ভোগাই ও চেল্লাখালি নদীর পানি অনেক কমে যাওয়ায় উজানে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হয়েছে। তবে ভাটি অঞ্চলের বিভিন্ন গ্রামে এখনও পানি থাকলেও তা নামছে ধীরে ধীরে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, প্রথম দফায় ৬০ মেট্রিক টন চাল, নগদ ৩ লাখ টাকা ও ১ হাজার ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার পাওয়া গিয়েছিলো। সেগুলো বন্যা দুর্গত এলাকায় বিতরণ করা হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে দুর্য়োগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রনালয় থেকে বন্যার্তদের জন্য আরো ১০ লাখ টাকা এবং ১ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ পাওয়া গেছে।