ফ্রান্সের সর্বোচ্চ আদালত ম্যাচে মেয়েদের হিজাব পরা অবস্থায় খেলার উপর নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখেছেন। বৃহস্পতিবার দেয়া রায়টির প্রেক্ষিতে তৈরি হয়েছে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সীমিত করার শঙ্কা। আগামী বছর প্যারিস অলিম্পিকের জন্য এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে কিনা সেটিও স্পষ্ট নয়।
আদালতের রায় ধর্মনিরপেক্ষতার উপর দেশটির দীর্ঘস্থায়ী বিতর্ককে পুনরুজ্জীবিত করতে পারে। ১৯০৫ সালে ফ্রান্সে গির্জা এবং রাষ্ট্রের বিচ্ছেদ সংক্রান্ত আইন পাশ হয়। আইনটি ফরাসি প্রজাতন্ত্রের একটি নীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। শতবছর পেরিয়ে গেলেও ধর্ম নিরপেক্ষতা ইস্যুতে ইউরোপের দেশটিতে অস্থিরতা দূর হয়নি।
ফ্রেঞ্চ ফুটবল ফেডারেশন খেলোয়াড়দের অফিসিয়াল ম্যাচের পাশাপাশি সব প্রতিযোগিতায় হিজাব এবং অন্যান্য ধর্মীয় প্রতীক পরা নিষিদ্ধ করেছে। যদিও এটি ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফার সুপারিশের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। কারণ খেলোয়াড়দের হিজাব পরে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিযোগিতা করার অনুমতি দেয় ফিফা।
সর্বোচ্চ আদালতের রায় নিয়ে ফ্রেঞ্চ ফুটবল ফেডারেশন বলেছে, রায়টি প্রজাতন্ত্রের নাগরিক মূল্যবোধগুলোকে পুনঃনিশ্চিতের সুযোগ দিয়েছে, যা ফুটবলকে ভিত্তি করে এবং সবরকম বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই ও লিঙ্গ সমতার প্রচারে প্রতিশ্রুতি দেয়।
আদালত বলেছেন, ক্রীড়া ফেডারেশনগুলো প্রতিযোগিতা এবং ইভেন্টগুলোর সময় খেলোয়াড়দের নিরপেক্ষ পোশাক পরার বাধ্যবাধকতা আরোপ করতে পারবে। যাতে ম্যাচগুলো সুষ্ঠুভাবে চালানো এবং সংঘর্ষ বা সংঘাত রোধ করা যায়। এই বিবেচনায় ফ্রেঞ্চ ফুটবল ফেডারেশনের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা যথার্থ এবং সমানুপাতিক।
একইসঙ্গে ফেডারেশনগুলো পোশাক এবং সরঞ্জামের ক্ষেত্রে তাদের ইভেন্টগুলোতে অংশগ্রহণের নিয়ম নির্ধারণে স্বাধীন বলেও আদালত স্মরণ করিয়ে দেন।
পাবলিক প্রসিকিউটরের জমা দেয়া প্রতিবেদনের সুপারিশগুলো অবশ্য আমলে নেননি আদালত। সুপারিশে বলা হয়েছিল, ফেডারেশনের ১ ধারা বাতিল করা উচিৎ। পাবলিক প্রসিকিউটরের যুক্তি ছিল, ফুটবলে ধর্মীয় প্রতীকগুলো বিদ্যমান ছিল এবং খেলোয়াড়রা মাঠে প্রবেশের আগে তা ব্যবহার করেছেন।
ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরার্ড দারমানিন চলতি সপ্তাহে সাক্ষাৎকারে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার সময় হিজাব ব্যবহারের বিরোধী বলে জানিয়েছিলেন। তার ভাষ্য ছিল, যখন খেলাধুলা করবেন, তখন ধর্মীয় পোশাক পরবেন না। যখন ফুটবল খেলবেন, তখন আপনার সামনে থাকা ব্যক্তির ধর্ম জানার দরকার নেই।
দেশটির সিনেটররা আগে মসজিদ, বিদ্যালয় এবং স্পোর্টস ক্লাবের তত্ত্বাবধান জোরদার করার জন্য একটি বিল অনুমোদন করেছিলেন। যাতে ফ্রান্সকে উগ্র ইসলামপন্থীদের থেকে রক্ষা করা যায় এবং ফরাসি মূল্যবোধের প্রতি সম্মানের বিষয়টি প্রচার করা যায়।