ওলফা হামরৌনি তার আট বছরের নাতনি ফাতমা সম্পর্কে বেশি কিছু জানেন না। তার প্রিয় খেলনা বা খাবার কোনটি তাও জানেন না। মনে প্রশ্ন জাগে সে কি পাস্তা পছন্দ করে? তার মায়ের পছন্দের খাবার ছিল পাস্তা। নাকি অন্য কিছু? নাতনির জন্য মন টানলেও তৎক্ষণাৎ নিজের মনকে শক্ত করেন হামরৌনি। বলেন, ‘জেনে কী হবে? জানতে চাই না কিছু। শুধু শুধু মনের কষ্ট আরও বাড়বে।’
হামরৌনির চার মেয়ে। দুই মেয়ে পরিবারকে না জানিয়ে ইসলামিক স্টেটস-এ যোগ দিয়েছেন। সেখানে এক মেয়ের ঘরে জন্ম নিয়েছে ফাতমা। ফাতমা ও তার মা বর্তমানে লিবিয়ার কারাগারে আছে।
হামরৌনি এবং তার সন্তানদের বাস্তব জীবনের গল্প ‘ফোর ডটারস’। এই বছরের অস্কারে সেরা ডকুমেন্টারি ফিচার বিভাগে মনোনীত হয়েছে এটি।
কাউথার বেন হানিয়ার এই ডকুমেন্টারি ফিচারটিতে বেশ অনেকগুলো স্তর রয়েছে। দুই কিশোরীর বেড়ে উঠা, উগ্রপন্থী হওয়া, বিশৃঙ্খল পারিবারিক জীবনের গল্প ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এতে। কিন্তু বাস্তব গল্পটা আরও করুণ, শুধু একটি পরিবারের গল্পেই সীমাবদ্ধ নয়।
নাম পরিবর্তিত হয়, বিশদ পরিবর্তিত হয়, কিন্তু এই দুঃস্বপ্নটি তিউনিসিয়ার অন্যদের কাছে পরিচিত। যেখানে এক পর্যায়ে অনেকে ইসলামিক স্টেট সহ জঙ্গি গোষ্ঠীতে যোগ দিতে চলে যায়, সংঘাত পূর্ণ অঞ্চলে। তিউনিসিয়া জঙ্গিদের লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়। হামরৌনির মতো পরিবারগুলি সেই জটিল উত্তরাধিকারের অমীমাংসিত সমস্যা নিয়ে প্রশ্নের উত্তর খুঁজে ফেরে বছরের পর বছর ধরে।
‘ফোর ডটারস’-এ হামরৌনির চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিউনিশিয়ান অভিনেত্রী হেন্দ সাবরি। তিনি বলেন, ‘এটি আমাদের দেশের একটি ক্ষত। আমরা এটা নিয়ে কথা না বললে এই ক্ষত সারবে না।’
হামরৌনি আশা করেন যে অস্কারের মাধ্যমে ছবিটি বিশ্বনেতাদের নজরে পড়বে এবং এতে তার নাতনি ফাতমাকে লিবিয়ার কারাগার থেকে তিউনিসিয়ায় নিয়ে আসার উপায় বের করা সম্ভব হবে। যদিও তিউনিসিয়া এই বন্দীদের লিবিয়া থেকে ফেরাতে চায় না নিরাপত্তার খাতিরে। ফাতমা প্রসঙ্গে হামরৌনি বলেন, এতে তার কি দোষ? সে তো তার বাবা বা মাকে বেছে নেয়নি!’
সিনেমাটির গল্প লিখেছেন এবং নির্মাণ করেছেন বেন হানিয়া। তিনি এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা তিউনিসিয়ার সরকারকে চাপ প্রয়োগের চেষ্টা করছি। নাগরিকদের দায়িত্ব তো দেশেরই নেয়া উচিত।’
সিনেমায় দেখানো হয় ছোট একটি বাড়িতে অভাবের সংসারে বড় হয়ে উঠতে থাকে হামরৌনির চার মেয়ে। বাবা বাড়িতে থাকে না বললেই চলে। বেশিরভাগ সময়েই মদ্যপ অবস্থায় থাকে। পরিবারের দায় নিতে নিতে ক্লান্ত মা। খিটখিটে ও রক্ষণশীল আচরণ তার সন্তানদের প্রতি। গায়ে হাত তুলতেও দ্বিধা করেন না। বাবা-মায়ের সাথে মানসিক দূরত্ব বেড়ে যায় মেয়েদের। মৌলিক ধর্মীয় শিক্ষা নিয়ে বেড়ে উঠা দুই মেয়ে ধীরে ধীরে উগ্রপন্থী হয়ে উঠে। ঘর ছাড়া হয়ে যোগ দেয় ইসলামিক স্টেটস-এ।
তিউনিসিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান তিউনিসিয়া প্রধান মোস্তফা আবদেলকেবির বলেন, ‘শিশুদের জন্য স্বাভাবিক জায়গা হল পরিবার, স্কুল। কারাগার এবং শিবিরে বেড়ে ওঠা শিশুরা সমাজের জন্য সুফল বয়ে আনবে না। এক একটা বোমায় পরিণত হবে তারা।’
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস