ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ম্যাচের আগে সমর্থকদের মধ্যে মারামারি ও পুলিশের লাঠিপেটার উত্তাল ঘটনার পর এলো মারাত্মক এক খবর। বিশ্বকাপ বাছাইয়ের লাতিন অঞ্চলের খেলার পর পেরুর সরকারের বিরুদ্ধে ভেনেজুয়েলা জাতীয় ফুটবল দলকে অপহরণের অভিযোগ আনা হয়েছে।
পেরুর রাজধানী লিমায় গত মঙ্গলবার স্বাগতিকদের বিপক্ষে ১-১ গোলের ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়ে ভেনেজুয়েলা। খেলা শেষে দেশে ফেরার জন্য ভেনেজুয়েলার ফুটবলারদের বহনকারী উড়োজাহাজকে জ্বালানি নেয়ার অনুমতি দিতে অস্বীকার করে। এ ঘটনাকে অপহরণ হিসেবে চিহ্নিত করে ভেনেজুয়েলা সরকার।
ম্যাচের পরই মূলত ভেনেজুয়েলা ও পেরুর মধ্যে শুরু হয় কূটনৈতিক দ্বন্দ্ব। খেলা শেষে অতিথি দলের খেলোয়াড়রা ভক্তদের শুভেচ্ছা জানাতে গিয়েছিলেন। এ সময় পেরুর পুলিশ তাদের মারধর করেছে বলে ফুটবলাররা অভিযোগ তোলেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভেনেজুয়েলার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইভান গিল লিখেছেন, ‘পেরুর সরকার ভেনেজুয়েলানদের বিরুদ্ধে আরেকটি স্বেচ্ছাচারী কাজ করেছে। উড়োজাহাজকে জ্বালানী নিতে না দিয়ে দেশে ফিরতে আনতে বাধা দিয়েছে। এটা আমাদের দলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য অপহরণ করা হয়েছে, যারা একটি অসাধারণ ম্যাচ খেলেছে।’
পেরুর সরকার জানায়, তারা উড়োজাহাজে জ্বালানী না দেয়ার জন্য কোনো ব্যবস্থার নেয়ার আদেশ দেয়নি। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই পরিস্থিতি সমাধানের জন্য পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
লিমার জর্জ শ্যাভেজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পরিচালনাকারী সংস্থাটি বলেছে, ফ্লাইট বিলম্বের ঘটনা জ্বালানি সরবরাহ সম্পর্কিত প্রশাসনিক কারণে ঘটেছে।
পরবর্তীতে নির্ধারিত সময়ের প্রায় চার ঘন্টা পরে রুটাকা এয়ারলাইন উড়োজাহাজটি স্থানীয় সময় রাত ২টা ৫৩ মিনিটে যাত্রা শুরু করে। পেরুর সরকার জ্বালানি সরবরাহের আদেশ দেয়ার পরে ফুটবল দলটি নিরাপদভাবে কারাকাসে ফিরে আসছে বলে ভেনেজুয়েলার পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশ্চিত করেন।
এদিকে, ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, ‘পেরুর সেই বর্ণবাদী অভিজাততন্ত্রের জেনোফোবিয়া আমাদের মহান দলের বিরুদ্ধে প্রকাশ করেছে। ভেনেজুয়েলা জেনোফোবিয়া, সহিংসতা এবং আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে তার আওয়াজ তুলেছে।’
ভেনেজুয়েলার ফুটবল ফেডারেশন ফুটবল দল এবং তাদের সমর্থকদেরদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক আচরণ এবং জেনোফোবিয়ার নিন্দা জানিয়েছে।
খেলা শেষের পর ভেনেজুয়েলার ফুটবলার নাহুয়েল ফেরারেসি তার ডান হাতে ব্যান্ডেজ দেখিয়ে বলেছিলেন, ‘আমাকে মারধর করেছে। এমন হওয়াটা মোটেও উচিৎ নয়। ম্যাচ শেষে হয়ে গিয়েছিল এবং আমরা আমাদের ভেনেজুয়েলা সমর্থকদের ধন্যবাদ জানাতে গিয়েছিলাম।’
‘অন্য একজন খেলোয়াড় তার জার্সিটি ভক্তদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন এবং পুলিশ তাকে বাধা দিলে তিনি তার জার্সিটি ভিড়ের মাঝে দিতে যাচ্ছিলেন। তারপর অন্যরা রেগে গেল, আমি জানি না কি হয়েছে, এবং পুলিশ আমাদের মারতে তাদের লাঠিসোটা নিয়েছিল। তারা আমাকে দুবার আঘাত করেছিল। যদিও আঘাত গুরুতর নয়।’
পেরুর পুলিশের ভেনেজুয়েলার খেলোয়াড়দের লাঠিপেটার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এ ঘটনার পর দুই দেশ কূটনৈতিক বিরোধে জড়িয়ে পড়ে।ম্যাচের আগে পেরুর পুলিশ ভেনেজুয়েলার সমর্থকদেরকে তাদের লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছিল বলে অভিযোগ আনা হয়।
বিদেশিদের বহিষ্কারের জন্য পেরুর সরকার এক সপ্তাহ আগে একটি বিতর্কিত ডিক্রি কার্যকর করেছে। দেশটিতে প্রায় ১৫ লাখ ভেনেজুয়েলার অভিবাসীর আবাসস্থল। যাদের মধ্যে অনেকেই ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট থেকে বাঁচতে নিজ দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন।