চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Nagod

চায়ের মূল্যে আইডিয়া বিনিময় করতে ফ্লাক্স হাতে টিএসসিতে রনি

বাংলাদেশ রেলওয়ের অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে আলোচনায় আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি তিন মাস যাবৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) চা বিক্রি করছেন। তিনি বলছেন: কোন কাজই ছোট নয়, সব কাজই গুরুত্বপূর্ণ ও সম্মানের। চায়ের মূল্যে আইডিয়া ক্রয়-বিক্রয়ের পাশাপাশি স্বপ্ন পূরণে সোনার হরিণের জন্য অপেক্ষা না করে অল্প অল্প করে এগিয়ে যাওয়ার বার্তা ছড়িয়ে দিতে চান তিনি।

মঙ্গলবার টিএসসিতে চা খেতে খেতে কথা হচ্ছিলো মহিউদ্দিন রনি’র সঙ্গে। তার পাশে বোর্ডে লেখা আছে, ‘এখানে চা-মূল্যে চিন্তা ক্রয়-বিক্রয় করা হয়।’

Bkash July

বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার এন্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজের এই শিক্ষার্থীর কাছে শুরুতেই জানতে চাওয়া হয়েছিলো এমন ট্যাগ লাইন কেন? তিনি জানান: কোন কাজের ছোট নয়, সব কাজই গুরুত্বপূর্ণ ও সম্মানের। একজন চা ওয়ালাকে যেমন সম্মান দেওয়া উচিত, ঠিক তেমনই একজন রিক্সাওয়ালা যে এই সোসাইটিতে কন্ট্রিবিউট করছে তারও সম্মান দেওয়া উচিত। তার চেয়ে বড় কথা এখানে যারাই আসেন- তারা কোন না কোন সমস্যা নিয়ে আসেন।

ক্রেতার সঙ্গে তার কী ধরণের চিন্তার বিনিময় হয় জানিয়ে তিনি বলেন: এই যেমন ধরেন- ভাই কী করবো, এই সমস্যা ওই সমস্যা; ব্যবসা করার পুঁজি নাই, সংসারে এই ক্রাইসিস, ভাই ব্যক্তি জীবনে এই সমস্যা চলছে; আবার ওই দপ্তরে একটা ফাইল আটকে আছে, অনেকের অনেক ধরনের সমস্যা আছে। তারা কীভাবে এটা সমাধান করবে, বুঝে উঠতে পারে না। আগে তো এমনি এমনি বসতাম। এখন চা নিয়ে বসে আছি। চা খেতে খেতে কথা বলি। তাদের সকলকে বলি আপনাদের কি এমন কোন প্রবলেম আছে যেটার সলিউশন জানা এবং পুরোপুরি রোড ম্যাপটাও আপনার জানা আছে? যে সলিউশনটা বাংলাদেশসহ পুরো বিশ্বে একটা ইমপ্যাক্ট তৈরি করতে পারবে। এমন কোন সলিউশন থাকলে কিংবা আইডিয়া থাকলে আমার কাছে সেল করতে পারেন। সেটা চায়ের বিনিময়ে বা চায়ের মূল্যে। অনেক সময় আমি তাদের ক্যাশেও পেমেন্ট করি। যদি সুন্দর এবং ডিমান্ডটেবল আইডিয়া হয়।

Reneta June

নিজের জীবনে চা বিক্রির প্রভাব জানাতে গিয়ে রনি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: চা বিক্রির মাধ্যমে আমি আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছি। অনেকটা ঋণগ্রস্ত ছিলাম, ঋণগুলো শোধ করতে পারছি। মনের মত সুন্দর জীবন যাপন করতে পারছি। চা বানানো আমার পছন্দের কাজ, আমি সেটা করতে পারছি।

কাজের ক্ষেত্রে লোক কথা কানে না তোলার পরামর্শ তার। বলেন: অনেকে চা বিক্রিকে ছোট করে দেখতে পারে। কিন্তু আমি দেখেছি চা বিক্রির ফলে আমার ধৈর্য্য বাড়ছে। আগে অনেক রেগে যেতাম, কার সাথে কীভাবে কমিউনিকেট করবো বুঝতে পারতাম না; সেগুলো বুঝে উঠতে পারছি। সেগুলো চর্চা করছি, শিক্ষার মধ্যেই আছি। একদম প্রান্তিক জনগণের সঙ্গে মেশার সুযোগ হচ্ছে, নিঃস্বার্থ ভালোবাসা পাচ্ছি। আমাদের জীবনের দৈন্যতা আসে আমাদের চিন্তার মধ্যদিয়ে। অনেকে বলে এই কাজটা করো না, এটা ছোট কাজ; এটা বড় কাজ, ওইখানে যাও! কিন্তু ওইখানে যেতে যেতে আপনার জীবনের যে সময়টা চলে যাবে, সেটা তো আর কখনো ফেরত আসবে না। সোনার হরিণের পেছনে না উড়ে মাটিতে আসুন, ছোট কাজ থেকে শুরু করুন। জাম্প দেওয়া শুরু করুন, এই জাম্প দিতে দিতে এক সময় আকাশে উড়ে যাবেন, সোনার হরিণকে ধরতে পারবেন।

নিজ জীবনের উদাহরণ তুলে ধরে রনি বলেন: আমি তিন মাস যাবত এখানে চা বিক্রি করছি। আগে লুকিয়ে করতাম, মাস্ক পরেও চা বিক্রি করেছি; কাস্টমারকে চা দিচ্ছি-আবার লজ্জাও করতো। অনেকে বলতো, আরে রনি ভাই আপনি চা বিক্রি করছেন! এটা আপনার সঙ্গে যায় না, আপনি কেন এটা করবেন। এই কথাগুলো বুকে লাগে। কিন্তু যারা এই কথাগুলো বলে আমি আপনি যখন বিপদে পড়বেন বা ঋণগ্রস্থ হবেন তখন কিন্তু তারা আপনার পাশে এসে দাঁড়াবে এর গ্যারান্টি কেউ দিতে পারে না। স্রষ্টা দিলে দিতে পারে কিন্তু স্রষ্টার কাছে যেতে যেতে জীবন পার হয়ে যাবে।

এসব চিন্তা থেকে ৮ জানুয়ারি থেকে স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে ফ্লাক্স নিয়ে চা বিক্রি করতে রাস্তায় নেমে পড়েন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী।

এসময় ঋণ পরিশোধের পাশাপাশি নিজের স্বপ্ন পূরণে তার চায়ের ক্রেতাদের সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানান মহিউদ্দিন রনি।

ISCREEN
BSH
Bellow Post-Green View