প্রিয়জনকে ভালোবাসা প্রকাশের প্রথম উপহার ফুল। সেজন্যই ফুলপ্রেমী মানুষেরা প্রিয়জনদের ফুল দিতে পছন্দ করে সবসময়। তবে কখনও কি ভেবেছেন প্রেমিকাকে ভালোবেসে খোপায় যে ফুল গুঁজে দিচ্ছেন, সেই ফুলগুলো কোত্থেকে আসছে? দেশজুড়ে ফুলের অনেক দোকান থাকলেও রাজধানীর শাহবাগে রাস্তা দিয়ে যাতায়াতের সময় সেখানকার ফুলের দোকানগুলোতে চোখ আটকাবে না এমন ঘটনা বিরল।
মধ্যরাত থেকে এই দোকানগুলো কিছুটা ভিন্নরূপে সাজে। মালবাহী গাড়িতে করে দেশে বিভিন্ন জায়গা থেকে ফুল আসতে শুরু করে শাহবাগের চত্বরে, পরের দিনব্যাপী যা কেনাবেচা চলে। তবে ফুল ব্যবসায়ীদের মৌসুম হিসেবে পরিচিত ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস।
১৮ বছর ধরে শাহবাগে ব্যবসা পরিচালনা করা ফুল ব্যবসায়ী মো. রেজাউল করিম বলেন, শাহবাগে সবচেয়ে বেশি ফুল আসে চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ এবং যশোর থেকে। সারা বছর খুব একটা কেনাবেচা না হয়েও ফেব্রুয়ারি মাসের ১৪ তারিখ ভালোবাসা দিবস এবং ২১ তারিখ মাতৃভাষা দিবসকে কেন্দ্র করে ব্যবসা জমে ওঠে।
ফুলের এই স্নিগ্ধতা ছড়াতে শাহবাগে রয়েছে প্রায় ১৩০টিরও বেশি ফুলের দোকান। তবে ফুলের গন্ধে স্নিগ্ধতা ছড়ানোর জন্য শাহবাগে ফুলের সমাগম থাকলেও ফুল ব্যবসায়ীদের বর্তমান ব্যবসা নষ্ট করছে কৃত্রিম প্লাস্টিকের ফুল। শুধু বর্তমান বাজারই নয় ব্যবসায়ীদের দাবি, প্লাস্টিকের ফুল পরিবেশের ভারসাম্যতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
বাজারে প্লাস্টিকের ফুলের উপস্থিতিতে ব্যবসায় লোকসানে থাকা মেজবাহ উদ্দিন জানান, আগে আমরা যেখানে ব্যবসার সিজনে প্রতি গোলাপ ১৪ টাকা করে বিক্রি করতাম সেখানে প্লাস্টিকের ফুল ব্যবহারে এখন সেটা ৭ টাকা লসে বিক্রি করতে হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, শুধু যে আমাদের বাণিজ্য নষ্ট হচ্ছে তা না, প্লাস্টিক ব্যবহারে মাটি, পানিও দূষিত হচ্ছে যার একটা প্রভাব দেশের ওপর পড়ে।
ডিসেম্বর মাসে বিজয় দিবস, নতুন বর্ষবরণ, ফেব্রুয়ারি মাসে মাতৃভাষা দিবস, বসন্ত উৎসব এবং ভ্যালেন্টাইন উইককে কেন্দ্র করে শাহবাগে ফুল বাণিজ্য হয় প্রায় ১০০ থেকে দেড়শ’ কোটি টাকার। ফুল ব্যবসায়ের এই মৌসুমে পাইকারি বাজারের ফুল ভেদে প্রতি পিস কম মূল্যে বিক্রি হলেও খুচরা বাজারে তার দাম বৃদ্ধি পায় প্রায় দ্বিগুণ।
তবে এখন পর্যন্ত এই দাম স্থিতিশীল আছে উল্লেখ করে ফুল বিক্রেতা গিয়াস উদ্দিন বলেন, প্রতিদিন মার্কেটে যে দাম বেঁধে দেয়া হয় আমরা সেই দামেই ফুল বিক্রি করি। দেখা যায় ফেব্রুয়ারি মাসে ফুলের চাহিদা বেশি থাকে তখন ফুলের জাত অনুযায়ী প্রতি পিস ফুলে ১০ থেকে ১৫ টাকা বা অনেক সময় তার বেশি দাম বাড়ে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এমন দাম বাড়েনি।
অন্যদিকে ফুল কিনতে এসে কিছুটা বাড়তি দামের সম্মুখীন হলেও বর্তমান বাজারে তুলনায় দাম স্থিতিশীল আছে বলে জানিয়ে ফুল কিনতে আসা সাইফুল ইসলাম বলেন, বাজেট করে এসেছিলাম ফুল কিনতে। কিন্তু এখন বাজেট একটু ছাড়িয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, ফেব্রুয়ারি মাস আগে থেকেই জানা ছিল যে ফুলের দাম কিছুটা বাড়তি থাকবে, যেহেতু ভালোবাসা দিবস এবং মাতৃভাষা দিবস সামনে। কিন্তু দাম কিছুটা বাড়তি থাকলেও অস্বাভাবিক বেশি না। বাজারের তুলনায় দাম ঠিক আছে।
সরেজমিনে দেখা গেল, শতবছর থেকে ঐতিহ্য বহন করে আসা শাহবাগের এই ফুল বাজারে ক্রেতাদের আনাগোনায় ফিরছে প্রাণ। চলতি মাসে ফুল কেন্দ্রিক উৎসবকে কেন্দ্র করে জমে উঠতে শুরু করেছে শাহবাগের ফুল চত্বর।