উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর ভারী বর্ষণের কারণে তিস্তা নদী তীরবর্তী রংপুর বিভাগের জেলাগুলোতে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। পনিবন্দী হয়ে পড়েছেন হাজারো মানুষ। এছাড়া রোববার থেকে ব্রহ্মপুত্র-সুরমা ও সোমবার থেকে যমুনা নদী তীরবর্তী জেলা গুলোতে বন্যার প্রবল আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তিস্তা নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আজ সকাল ৬টায় তিস্তার ডালিয়া ব্যারাজ পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ১০ ও রংপুরের কাউনিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৩ সেন্টিন্টমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ভয়াবহ বন্যার শঙ্কায় দেখা দিয়েছে। এদিকে পানি নিয়ন্ত্রণে ব্যারেজে ৪৪টি গেট খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানিয়েছেন: ভারতের উজানে পানি বৃদ্ধির কারণে গজলডোবা ব্যারেজের সবগুলো গেট খুলে দিয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে প্রবল বেগে পানি প্রবেশ করতে শুরু করে। ফলে বাংলাদেশ অংশে তিস্তা নদীর পানি মারাত্মক বেড়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি গেটের সবগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে।
এরপর থেকে তিস্তা পাড়ের বহু মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। বসতবাড়িতে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। বহু মানুষ তাদের গবাদি পশু নিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে।
এদিকে, লালমনিরহাটের তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদী তীরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কমপক্ষে ৫ হাজার পরিবার। কুড়িগ্রামেও নদ-নদীর পানি বেড়ে নিম্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ জানিয়েছেন: গত বুধবার থেকে রংপুর বিভাগের জেলাগুলো ও পূর্ব ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কুচবিহার, আলিপুর-দুয়ার জেলা, আসাম, সিকিম ও মেঘালয় রাজ্যসহ পূর্ব ভারতীয় অন্যান্য রাজ্যগুলোর উপর মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার পঞ্চগড় জেলার ওপারে থাকা ভারতের শিলিগুড়ির মাটিগাডা নামক স্থানে ২৭০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে আজ শনিবার সকাল পর্যন্ত রংপুর বিভাগের বেশিভাগ জেলার উপরে ১০০ মিলিমিটারের উপরে বৃষ্টিপাত হয়েছে।
গত ৩ দিনের ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে গতকাল শুক্রবার নীলফামারী জেলার জলঢাকা উপজেলায় তিস্তা নদীর ডালিয়া গয়েন্টে ও লালমনিরহাট জেলার সদর উপজেলার কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আশংকা করা যাচ্ছে আজ সারাদিনে তিস্তা নদীর পানির উচ্চতা আরও বৃদ্ধি পাবে। আজ থেকে কুড়িগ্রাম জেলার দুধকুমার নদীর পানিও বন্যা বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়া শুরু আশংকা করা যাচ্ছে। নেত্রকোনা জেলার সোমেম্বরই নদীর পানিও আজ শনিবার থেকে বন্যা বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়া শুরু আশংকা করা যাচ্ছে। যেহেতু গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে সরারাত ভারি বৃষ্টিপাত হয়েছে।
‘সেই সাথে নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, রংপুর, গাইবান্ধা, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল জেলার নদী তীরবর্তী এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হওয়ার আশংকা করা যাচ্ছে।’
তিনি আরও জানান: সেপ্টেম্বর মাসের ৯ তারিখ পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের রংপুর, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোর উপরে ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর-পূর্ব দিকের জেলাগুলো (দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কুচবিহার, আলিপুর-দূয়ার জেলা), সিকিম, আসাম ও মেঘালয় রাজ্যের উপর ৫০০ মিলিমিটারের উপরে বৃষ্টির সম্তাবনা রয়েছে।কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত চিত্র, আবহাওয়া সম্পর্কিত বিভিন্ন সূচক ও আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেলগুলো হতে পূর্বাভাস সঠিক হলে তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা ও সুরমা নদীর উপকূলবর্তী সকল জেলায় বন্যা শুরু হওয়ার আশংকা করা যাচ্ছে।