করমুক্ত আয়ের সীমা আগের মতো রেখেই আজ ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী। তিনি অবশ্য চমক রাখছেন পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার ঘোষণা দিয়ে। ২০২৩ সালের ৩০ শে জুন পর্যন্ত এই বিশেষ সুবিধা পাবেন প্রবাসীরা।
রপ্তানীকারকদের জন্য উৎসে করহার শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১% করার প্রস্তাব করছেন অর্থমন্ত্রী। বকেয়া রাজস্ব দেননা এমন উদ্যোক্তাদের গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানিসহ অন্য সেবা সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কথাও বলা হচ্ছে বাজেট বক্তৃতায়।
নিজের চতুর্থ বাজেট পেশের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে সাধ এবং সাধ্যের টানাপোড়নে বাজেট দিতে হচ্ছে একাধিকবার স্বীকার করেছেন তিনি। পরের বছর নির্বাচন, কাজেই অজনপ্রিয় কোনো পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়েও সচেতন থাকতে হয়েছে তাকে।
বাজেট বক্তৃতা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে রাজস্ব আহরণে অনেক বিচক্ষণতা দেখিয়েছেন তিনি। সমালোচনা হবে জেনেও পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে আয়কর অধ্যাদেশে নতুন বিধান যুক্ত করার প্রস্তাব করছেন অর্থমন্ত্রী। এমনকি বিদেশে থাকা কোনো সম্পদের উপর কর পরিশোধ করা হলে আয়কর কর্তৃপক্ষসহ সরকারের কেউ এ বিষয়ে কোন প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারবে না।
বিদেশে অর্জিত স্থাবর সম্পত্তি দেশে আনা না হলে এর উপর ১৫%, অস্থাবর সম্পত্তির ক্ষেত্রে ১০% এবং নগদ অর্থের উপর ৭% কর বসানোর সুপারিশ করেছেন অর্থমন্ত্রী। ২০২২ সালের ১লা জুলাই থেকে ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এই সুবিধা দেবে সরকার।
শেয়ার বাজার চাঙ্গা করতে যথেষ্ট উদ্যোগ দেখা গেছে বাজেট বক্তৃতায়। পুঁজিবাজার উন্নয়নে পরিশোধিত মূলধনের ১০% এর অধিক শেয়ার আইপিও এর মাধ্যমে হস্তান্তর হলে তালিকাভুক্ত কোম্পানীর কর হার ২২.৫% থেকে কমিয়ে ২০% করা হচ্ছে। পাবলিকলি ট্রেডেড হয় না এমন কোম্পানীর করহার ৩০% থেকে কমিয়ে ২৭.৫% করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। মার্চেন্ট ব্যাংক ব্যতীত পাবলিকলি ট্রেডেড ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করহার ৩৭.৫% থাকছে। ১২ লাখ টাকার অতিরিক্ত ব্যয় ও বিনিয়োগ ব্যাংকের মাধ্যমে হয় এমন নন-লিস্টেড কোম্পানীর করহার ৩০% থেকে কমিয়ে ২৭.৫% করা হচ্ছে।
এক ব্যক্তি কোম্পানীর করহার ২৫% থেকে কমিয়ে ২২.৫% করার প্রস্তাাব করেছেন আ হ ম মুস্তফা কামাল। পাবলিকলি ট্রেডেড নয় এমন ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করহার ৪০% থাকছে। মার্চেন্ট ব্যাংকের করহার ৩৭.৫% থাকছে সিগারেট, বিড়ি, জর্দা, গুলসহ সব তামাকজাত পণ্য প্রস্তুতকারী কোম্পানীর ক্ষত্রে চলতি অর্থবছরের মতোই কর্পোরেট কর ৪৫% এবং আরো ২.৫% সারচার্জ আরোপ বহাল রাখা হয়েছে।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত মোবাইল ফোন কোম্পানীকে কর দিতে হবে ৪০% হারে। কিন্তু তালিকাভুক্ত নয় এমন এমন মোবাইল ফোন কোম্পানীকে ৪৫% হারে কর দিতে হবে। ব্যক্তিসংঘের কর হার ৩০% থেকে কমিয়ে ২৭.৫% করা হয়েছে। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ, ডেন্টাল কলেজ, প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বা কেবলমাত্র তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ে শিক্ষাদান করে এমন সব প্রতিষ্ঠানকে কর দিতে হবে ১৫% হারে।
আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধিতে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস ব্যবসার সার্ভিস চার্জকে উৎসে আয়করের আওতা বহির্ভূত রাখা হয়েছে। অবকাঠামো নির্মাণ ব্যয় যাতে না বাড়ে সেজন্য স্টীলজাত পণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত এইচ আর কয়েল এবং জিংক এলয় জাতীয় কাঁচামাল আমদানিতে করহার ৫% থেকে কমিয়ে ৩% করা হয়েছে। স্বর্ণ আমদানিতে অগ্রীম কর উঠিয়ে নেয়ার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।
হাঁস-মুরগীর খামার এবং সব হ্যাচারী ও মাছ চাষ হতে প্রাপ্ত আয়ের উপর অভিন্ন কর হার আরোপের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। করজাল বৃদ্ধিতে হোটেল, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার এবং ট্রান্সপোর্ট এজেন্সিকে উৎসে কর কর্তনকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে ধরা হয়েছে। ব্যাংকের সুদের উৎসে করহার কোম্পানী করদাতার জন্য ১০% থেকে বাড়িয়ে ২০% করার প্রস্তাব করছেন তিনি।
দেশীয় উদ্যোক্তাদের জন্য বেশ কিছ সুখবর দিচ্ছেন অর্থমন্ত্রী। টেক্সটাইল শিল্পের বিদ্যমান ১৫% করহার সংক্রান্ত এসআরও এর মেয়াদ ৩০ জুন ২০২৫ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হচ্ছে। গার্মেন্টস উদ্যোক্তাদের মত সব ধরনের রপ্তানিকারকদের করহার ১২% এবং পরিবেশ-বান্ধব গ্রীন শিল্পের জন্য এই হার ১০% করার প্রস্তাব করছেন অর্থমন্ত্রী। রপ্তানীকারকদের জন্য উৎসে করহার ০.৫% থেকে বাড়িয়ে ১% করা হচ্ছে। তবে রাজস্ব দাবী পরিশোধে ব্যর্থ উদ্যোক্তাদের গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানিসহ অন্য সেবা সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কথা বলছেন অর্থমন্ত্রী।