আজকের লেখাটি কোনো বিশ্লেষণ নয়। শুধু অবাক হয়ে বিশ্বকাপের গতরাতটি দেখে যাওয়ার বিবরণ।
কাতার বিশ্বকাপে এবারের রোলারকোস্টার গ্রুপ ই’র চিত্রটি একটু দেখি। এই গ্রুপে খেলার পরিস্থিতি এমনটাই হয়েছিল যে, মনে হচ্ছিল সবগুলো দলই হয়তো নকআউট পর্বে চলে যেতে পারে। মূলত স্পেন, জাপান এবং কোস্টারিকার উপর সব নির্ভর করছিল।
জার্মানির জেতা ছাড়া আর কোনো লক্ষ্য ছিল না। জার্মানি তাকিয়েছিল স্পেনের দিকে যাতে স্পেন জেতে। স্পেন জার্মানির দিকে যেন জার্মানি না হারে। হারলে স্পেনও যে বাদ পড়তো প্রথম পর্বেই। জাপান শুধুই নিজেদের দিকে মনোযোগী ছিল, যেন তারা জেতে। আর কোস্টারিকাও নিজেদের দিকে খেয়াল রেখেছিল, শুধু জয়ের জন্য।
অবশেষে জাপান জিতল ২-১ গোলে স্পেনের বিপক্ষে। গ্রুপ ই-তে সব খেলা শেষে যা দাঁড়াল তা হল, দুই সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়নকে, অর্থাৎ জার্মানি আর স্পেনকে পেছনে ফেলে জাপান গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে উঠে গেল রাউন্ড অব সিক্সটিনে। আর স্পেন গোল পার্থক্যে জার্মানিকে পেছনে ফেলে পা বাড়াল দ্বিতীয় রাউন্ডে।
কোস্টারিকার বিপক্ষে তাদের ৭ গোল আশীর্বাদ হয়ে এলো গত রাতে। কোস্টারিকা ২-১ গোলের লিড নিয়েও খেলা শেষে ৪-২ গোলে হারল জার্মানির কাছে। গ্রুপ ই-তে বাদ পড়লো চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মানি এবং কোস্টারিকা। একই রাতে বেলজিয়াম গ্রুপ এফ-এ ক্রোয়েশিয়ার সাথে গোলশূন্য ড্র করে নকআউটে যেতে পারলো না।
বেলজিয়ামের গোল্ডেন জেনারেশন এবারও কোনো সোনালী অর্জন দেখাতে পারলো না। গ্রুপ এফ-এ গত বিশ্বকাপের ফাইনালিস্ট ক্রোয়েশিয়া এবং সেমিফাইনালিস্ট বেলজিয়ামকে পেছনে রেখে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে নকআউটে চলে গেল মরক্কো। অবশ্য ক্রোয়েশিয়াও উত্তীর্ণ হল দ্বিতীয় পর্বে খেলার জন্য।
২০২২ বিশ্বকাপের সবচেয়ে স্মরণীয় এবং ঘটনাবহুল রাত হয়তো গতকালই ছিল। আর সার্বিক চিত্রটি একবার দেখুন কেমন হল: স্পেন আর জার্মানিকে পেছনে ফেলে গ্রুপ ই চ্যাম্পিয়ন জাপান। অন্যদিকে, ক্রোয়েশিয়া আর বেলজিয়ামকে পেছনে রেখে গ্রুপ এফ চ্যাম্পিয়ন মরক্কো। একেই বলে বিশ্বকাপ। সবাই যেখানে তার পুরোটা উজাড় করে দেয় প্রতিটি সেকেন্ডে। এজন্যই ফুটবল বিশ্বকাপ হচ্ছে গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ।
জার্মানির জন্য দুঃখগাঁথা হয়ে থাকবে পরপর দু’বারের বিশ্বকাপে প্রথম পর্ব টপকাতে না পারা, আর স্পেনের বিপক্ষে জাপানের দ্বিতীয় জয়সূচক গোলটি যা নিয়ে বিতর্ক চলবে পুরো বিশ্বে। কেউ বলবে গোলটি হয়েছে, কেউ বলবে না হয়নি। পক্ষে-বিপক্ষে বহু যুক্তি দেখবো আর শুনবো আমরা।
জাপানের অদম্য দ্বিতীয়ার্ধ তাদের জয় এনে দিয়েছে। স্পেনকে বেশ কয়েকবার ভঙ্গুর হতে দেখেছি। তবে এক পর্যায়ে তারা শুধুই চেয়েছে দ্বিতীয় রাউন্ডে কোয়ালিফাই করতে। বাড়তি কোনো ঝুঁকি নেয়নি। সে অর্থে তারা সফল।
কোস্টারিকা মাথা উঁচু করেই বিশ্বকাপ থেকে ফিরছে দেশে। জার্মানিকে এমন ঘাম ঝরানো ম্যাচ তারা উপহার দেবে তা হয়তো স্বপ্নেও কেউ ভাবেনি। অন্তত যেভাবে কোস্টারিকা বিশ্বকাপ শুরু করেছিল স্পেনের কাছে ৭ গোল খেয়ে, সেখান থেকে তাদের উত্থান প্রশংসনীয়, যদিও রাউন্ড অব সিক্সটিনে তাদের আমরা দেখবো না।
থমাস মুলারের শেষ বিশ্বকাপে তার জায়গায় হাভার্টজ যখন এলেন, তখনই করলেন দুই গোল। কিন্তু যা ক্ষতি করার তা তো জাপান করেই ফেলেছে। যে দলটি এই বিশ্বকাপের অন্যতম ডার্কহর্স।
৫ ডিসেম্বর ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে দ্বিতীয় রাউন্ডের খেলায় নামবে জাপান। আর ৬ ডিসেম্বর স্পেনের বিপক্ষে নামবে মরক্কো। এই দুটো ম্যাচের দিকে তাকিয়ে থাকবে পুরো বিশ্ব। আপাতদৃষ্টিতে বলছি এই বিশ্বকাপে অঘটনের রাত আরও আসবে।
জার্মানি যেদিন জাপানের কাছে হেরে বসলো সেদিন যা লিখেছিলাম হুবহু তা-ই লিখে শেষ করছি আজকের এই লেখাটি: নিরাপত্তা দিতে পারে শুধুই ভালো খেলা আর সময় অনুযায়ী যে খেলা প্রয়োজন, তা-ই খেলে যাওয়া। যারা সেই কাজটি করতে পারবে, তার হাতেই উঠবে বিশ্বকাপ, আবারও বলছি তা যে দলই হোক না কেনো।