কাতার বিশ্বকাপে খারাপ পারফর্মের অনেক আগে থেকেই চলছে আলোচনাটা, তবে কি শেষের পথে বেলজিয়ামের ‘সোনালী প্রজন্ম’? উত্তরে ‘হ্যাঁ’ বলতে খাতা-কলমের হিসেব কষতে হবে না। নেহাত মনগড়া কথা নয়, তারকাবহুল দলটির শেষ দেখে ফেলেছেন রেড ডেভিলদের মিডফিল্ড সামলানো তারকা কেভিন ডি ব্রুইন। শূন্য থেকে যে রাজকীয় উত্থান, তা যেন শূন্যেই মিলিয়ে যাচ্ছে। রেখে যাচ্ছে সাফল্য, থাকছে বিশ্বকাপ তুলে ধরতে না পারার বড় আক্ষেপ।
কাতার বিশ্বকাপেও কি দেখা যাবে সোনালী প্রজন্মের বেলজিয়ামকে, এমন প্রশ্নে আগেই ব্রুইনা বলেছিলেন, ‘কোনো সুযোগ নাই।’ ইউরোপ কাঁপানো তারকা নিজেদের ‘বৃদ্ধ’ উপমা দিয়ে বলেছেন, ‘অনেক বয়স হয়ে গেছে আমাদের। ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, আমাদের সর্বোচ্চ সুযোগ ছিল ২০১৮ সালের বিশ্বকাপে। আমাদের একটি ভালো দল ছিল, কিন্তু এখনকারটা বার্ধক্য।’
রবের্তো মার্টিনেজের দলের রক্ষণ সামলানো জ্যান ভেরটনঘেনও বলেছেন একই সুরে। কাতার বিশ্বকাপে বাজে শুরুর পর মরক্কোর বিপক্ষে ২-০ গোলে হারের কারণ জানাতে গিয়ে বলেছেন, ‘আমরা খুব বাজে ডিফেন্সও করেছি, খুব বৃদ্ধ তাই না?’ বুড়িয়ে যাওয়া কোর্ত্তয়া, হ্যাজার্ড, ডি ব্রুইন, লুকাকুরা সেখানে সফল হবেন, এমন বাজি লাগার মানুষ নেহায়েতই অল্প।
বিংশ শতাব্দি তো আছেই, একবিংশ শতাব্দির শুরুর দিকেও পুরোনো ধারার ফুটবলে ধুঁকছিল বেলজিয়াম। চিরাচরিত আলসেমি আর জড়তাপূর্ণ ফুটবলে বিশ্ব তো দূরের, ইউরোপেও ছিল ছন্নছাড়া। শূন্য থেকে সেই দলটিকে শীর্ষে তুলে দিয়েছেন দলটির তৎকালীন টেকনিক্যাল ডিরেক্টর মিশেল স্যাবলন। খেলোয়াড়দের উন্নতির পাশাপাশি ফুটবল সিস্টেমে আনলেন আমূল বদল। শুরু হল বেলজিয়াম ফুটবলের সোনালী প্রজন্ম।
ইউরোপজুড়ে বিভিন্ন ক্লাবে খেলা তারকা খেলোয়াড়দের নিয়ে গড়া দলটি ফিফা র্যাংঙ্কিংয়ে শীর্ষে উঠল। ক্লাব ফুটবল কিংবা জাতীয় দলের হয়েও দাপিয়ে বেড়াল। কিন্তু বিশ্বকাপের শিরোপা জেতা হল না। সবশেষ রাশিয়া বিশ্বকাপে ফ্রান্সের কাছে সেমিতে সোনালী ট্রফি ছোঁয়ার স্বপ্নভঙ্গ হয় বেলজিয়ামের সোনালী প্রজন্মের। নতুন ধারার ফুটবলে আসার পর এটিই তাদের সর্বোচ্চ বিশ্বকাপ সাফল্য।
চলতি বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বেই ধুঁকছে বেলজিয়াম। চোটাক্রান্ত লুকাকু, হ্যাজার্ডসহ ব্রুইন, কোর্ত্তোয়ারাও আছে শেষের পথে। ত্রিশে পা দেওয়া এসব তারকা নিয়ে গড়া দলটি ২ ম্যাচে ৩ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ এফের তালিকায় আছেন তিন নম্বর অবস্থানে। শেষ ম্যাচে গত বিশ্বকাপের রানার্স আপ ক্রোয়েশিয়াকে হারাতে না পারলে গ্রুপ পর্বেই থামতে পারে বিশ্বকাপ যাত্রা। পুরোনো সোনালী প্রজন্ম তো শেষের পথে অথবা শেষ, থোরগান-ইউরি-জেরেমিদের নিয়ে আরেক সোনালী প্রজন্মের আশা দেখতে পারে বেলজিয়াম!