বিশ্বের ফুটবল অনুরাগীদের চোখ এখন লন্ডনে। আর মাত্র কয়েকঘণ্টা, শহরটিতে বসবে তারার হাট। প্রস্তুত ‘ফিফা দ্য বেস্ট-২০২৩’ পুরস্কারের মঞ্চ। রোমাঞ্চ ও কৌতূহল নিয়ে প্রশ্ন, কার হাতে উঠতে চলেছে সেরা ফুটবলারের পুরস্কার?
সোমবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে, তথা বাংলাদেশ সময় রাত ১টা ৩০ মিনিট শুরু হবে জমকালো অনুষ্ঠানটি। ফুটবলারদের মিলনমেলায় ‘ফিফা দ্য বেস্ট’র অষ্টম আয়োজনে দর্শকসারি ভরে উঠবে। পুরস্কার বিজয়ীদের খুঁজে নেয়ার জন্য ব্যাপক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া প্রয়োগ করা হয়েছে। ভোটিং পদ্ধতি স্বাধীন পর্যবেক্ষকদের দ্বারা তত্ত্বাবধান, পর্যবেক্ষণ এবং পর্যালোচনা করা হয়েছে।
গতবছরের ডিসেম্বরে ছেলেদের ক্যাটাগরিতে সেরা তিন মনোনীত খেলোয়াড়ের নাম জানায় ফিফা। বর্ষসেরা নির্বাচনে ছেলেদের ক্ষেত্রে ১৯ ডিসেম্বর ২০২২ থেকে ২০ আগস্ট ২০২৩ সাল পর্যন্ত সময়কাল বিবেচনা নেয়া হয়েছে। তালিকায় সেরা তিনে জায়গা করে নিয়েছেন আর্জেন্টিনার বিশ্বজয়ী মহাতারকা লিওনেল মেসি। আগের বছর পুরস্কারটি জেতা এলএম টেনের অন্য দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ফ্রান্সের কাইলিয়ান এমবাপে ও নরওয়ের আর্লিং হালান্ড।
আর্লিং হালান্ড
ম্যানচেস্টার সিটির গোলমেশিন কেবল অপ্রতিরোধ্যই ছিলেন না, ঘরোয়া ও ইউরোপীয় প্রতিযোগিতায় প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারদের জন্য হয়ে ওঠেন আতঙ্ক। পেপ গার্দিওলার দল চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, প্রিমিয়ার লিগ এবং এফএ কাপ ট্রফি জিতে ক্লাবের প্রথম ট্রেবল ঘরে তুলেছিল।
পারফরম্যান্স বিবেচনাকালীন সময়ে ৩৩ ম্যাচে হালান্ড করেছেন ২৮ গোল। তার গতি, শক্তি এবং ফিনিশিং ক্ষমতার সমন্বয় বিশ্বের সেরা ডিফেন্ডারদের বিপক্ষে বারবার প্রমাণিত হয়েছে। ঠাণ্ডা মাথায় গোল করার দক্ষতা ২৩ বর্ষী নরওয়েজিয়ান তারকাকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
হালান্ড ইতিমধ্যে ইউরোপিয়ান গোল্ডেন শ্যু, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ গোল্ডেন বুট, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের সেরা খেলোয়াড় ও মৌসুমের সেরা উদীয়মান খেলোয়াড়ের পুরস্কার পেয়েছেন। তার বাবা আলফি হালান্ডও ম্যানচেস্টার সিটি ও নরওয়ে জাতীয় দলের ফুটবলার ছিলেন। মা গ্রি মারিটা ব্রাউত দুর্দান্ত অ্যাথলেট হিসেবে পরিচিত। ১৯৯০-এর দশকে হেপ্টাথলনে নিজ দেশের জাতীয় প্রতিযোগিতায় শিরোপা জিতেছিলেন। মেয়ে ক্রীড়াবিদদের জন্য ১০০ মিটার হার্ডল রেস, হাই জাম্প, শট পুট, ২০০ মিটার ড্যাশ, লং জাম্প, জ্যাভলিন থ্রো এবং ৮০০ মিটার দৌড় নিয়ে গঠিত যৌগিক প্রতিযোগিতাকে বল হয় হেপ্টাথলন।
কাইলিয়ান এমবাপে
২০২২ বিশ্বকাপে জিতেছিলেন গোল্ডেন বুট। ঘরোয়া ফুটবলে ফিরেও ফর্মটা ধরে রাখেন। ৯০তম মিনিটে পেনাল্টি কিকে গোল করে পিএসজিকে লিগ ওয়ানে স্ট্রাসবার্গের বিপক্ষে জয়ে সহায়তা করেছিলেন।
লিগের ২০ খেলায় ১৭ বার লক্ষ্যভেদ করেছেন পুরস্কারের সময়কালীনে। এরমাঝে ছয় ম্যাচে নয় গোলের একটি অসাধারণ স্পেল ছিল। তারকা ফরোয়ার্ড লিগ ওয়ানের বর্ষসেরা খেলোয়াড়ও হয়েছেন, একইসঙ্গে ছিলেন আসরের সর্বাধিক গোলদাতা।
বিশ্বকাপ ইতিহাসের সর্বাধিক গোলদাতা মিরোস্লাভ ক্লোসার চেয়ে মাত্র চার গোল পিছিয়ে এমবাপে। সাবেক জার্মান ফুটবলার চারটি বিশ্বকাপে ২৪ ম্যাচে করেছিলেন ১৬ গোল। ২৪ বর্ষী ফ্রেঞ্চ এমবাপে ইতিমধ্যে দুই বিশ্বকাপে ১৪ ম্যাচে ১২টি গোল পেয়েছেন।
লিওনেল মেসি
আন্তর্জাতিক ও ঘরোয়া লিগে অসামান্য সব কীর্তির পাশাপাশি ব্যক্তিগত অর্জনে যার ক্যারিয়ার ভরপুর, সেই ফুটবলারকে নিয়ে নতুন করে আর কী বলার থাকতে পারে। ৩৬ বর্ষী মহাতারকা বিশ্বব্যাপী দর্শকদের পায়ের জাদুতে মন্ত্রমুগ্ধ করে চলেছেন।
আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জেতানো মেসি ছিলেন আসরের সেরা খেলোয়াড়। গতবছর তার হাতে উঠেছিল ফিফা দ্য বেস্ট পুরস্কার। প্রথমবার তিনি পুরস্কারটি ২০১৮ সালে হাতে তুলেছিলেন। গত মৌসুমে পিএসজিকে লিগ ওয়ান শিরোপা জেতাতে রেখেছেন ভূমিকা। লিগ ওয়ানে তো বটেই, গত মৌসুমে মেসির পা থেকেই এসেছিল সবচেয়ে বেশি অ্যাসিস্ট।
জাতীয় দল জার্সিতে শতাধিক গোলের মালিক গতবছরের জুলাইতে নেন নতুন চ্যালেঞ্জ। শীর্ষ পাঁচটি ইউরোপীয় লিগে সর্বকালের সর্বোচ্চ স্কোরার মেসি যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকারের ক্লাব ইন্টার মিয়ামিতে যোগ দেন।
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো এবং মেসিই কেবল পাঁচটি বিশ্বকাপে গোল করেছেন। তাদের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন পেলে, গ্রজেগর্জ লাটো, ডিয়েগো ম্যারাডোনা এবং ডেভিড বেকহ্যাম, যারা তিনটি বিশ্বকাপে গোলের দেখা পেয়েছেন।
ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েদের ক্যাটাগরিতে বর্ষসেরার জন্য মনোনীত সেরা তিনের নামও জানিয়েছিল ফিফা। বর্ষসেরা নির্বাচনে মেয়েদের ক্ষেত্রে ১ আগস্ট ২০২২ থেকে ২০ আগস্ট ২০২৩ সাল পর্যন্ত সময়কাল বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। তালিকায় আছেন স্পেন ও বার্সেলোনার আইতানা বোনমাতি, কলম্বিয়া ও রিয়াল মাদ্রিদের লিন্দা কাইসেদো এবং স্পেন ও পাচুকার ফরোয়ার্ড জেনিফার হারমাসো।
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ শেষে ছেলে ও মেয়েদের ক্যাটাগরিতে সেরা খেলোয়াড়, কোচ, গোলরক্ষক, ভক্ত, গোল এবং ফেয়ার প্লে পুরস্কার দেয়া হবে। বিজয়ী নির্ধারণে গঠন করা হয়েছে চারটি জুরি বোর্ড। ফিফার সদস্য দেশগুলোর দলের কোচ, অধিনায়ক, মনোনীত সাংবাদিক এবং অনলাইনে ভক্তদের ভোটে প্রতিটি বিভাগে বিজয়ী নির্বাচিত হবে। অধিনায়ক, কোচ ও সাংবাদিকরা কাকে ভোট দিয়েছেন, সেটি পুরস্কার বিতরণীর পর প্রকাশ করা হয়।
এরআগে, ফুটবলের নীতিনির্ধারকদের সহযোগিতায় পুরস্কারের জন্য খেলোয়াড়দের মনোনয়ন সংকলন করা হয়। পরে ছেলে ও মেয়েদের ফুটবল বিশেষজ্ঞদের দুটি পৃথক প্যানেল সংক্ষিপ্ত তালিকা নির্ধারণ করে। প্যানেলে সম্মানিত সাবেক খেলোয়াড় এবং কোচরা ছিলেন। তাদেরও খেলোয়াড় মনোনীত করার অধিকার দেয়া হয়।
প্রত্যেক জুরি সদস্যকে মেধার ক্রমানুসারে তিনজন খেলোয়াড়, তিনজন কোচ এবং তিনজন গোলরক্ষককে মনোনীত করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল। যাদের তারা নিজ নিজ বিভাগে পুরস্কার পাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে যোগ্য বলে মনে করেছিলেন। প্রত্যেক জুরি সদস্য কর্তৃক মনোনীত তিনজন খেলোয়াড়, কোচ এবং গোলরক্ষকরা যথাক্রমে ৫ , ৩ ও ১ পয়েন্ট পাবেন।
ছেলেদের প্যানেলে থাকা জুরি বোর্ডের সদস্যরা ছেলে ফুটবলারদেরই ভোট দেন। একইভাবে মেয়ে ফুটবলারদের ভোট দেন মেয়েদের প্যানেলে থাকা জুরি বোর্ডের সদস্যরা।
জাতীয় দলের অধিনায়ক ও কোচরা নিজ দেশের প্রতিনিধিত্ব করা যেকাউকে ভোট দিতে পারেন। তবে মনোনীত অধিনায়ক এবং কোচদের নিজেদের ভোট দেয়ার অনুমতি নেই। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, মেসি নিজ দেশের অধিনায়ক হওয়ায় মনোনীত হওয়া সত্ত্বেও নিজেকে ভোট দিতে পারবেন না।
এক নজরে এবারের ফিফা বর্ষসেরার মনোনীত যারা
ছেলেদের বর্ষসেরা ফুটবলার: আর্লিং হালান্ড (ম্যানচেস্টার সিটি/নরওয়ে), কাইলিয়ান এমবাপে (পিএসজি/ফ্রান্স), লিওনেল মেসি (পিএসজি/ইন্টার মিয়ামি/আর্জেন্টিনা)।
ছেলেদের বর্ষসেরা গোলরক্ষক: ইয়াসিন বোনো (সেভিয়া/আল হিলাল/মরক্কো), থিবো কোর্ত্তয়া (রিয়াল মাদ্রিদ/বেলজিয়াম), এডেরসন (ম্যানচেস্টার সিটি/ব্রাজিল)।
ছেলেদের বর্ষসেরা কোচ: পেপ গার্দিওলা (ম্যানচেস্টার সিটি), সিমোন ইনজাঘি (ইন্টার মিলান), লুসিয়ানো স্পালেত্তি (নাপোলি/ইতালি)।
মেয়েদের বর্ষসেরা ফুটবলার: আইতানা বনমাতি (বার্সেলোনা/স্পেন), লিন্দা কাইসেদো (দেপোর্তিভো ক্যালি/রিয়াল মাদ্রিদ/কলম্বিয়া), জেনিফার হারমাসো (পাচুকা/স্পেন)।
মেয়েদের বর্ষসেরা গোলরক্ষক: ম্যাকেঞ্জি আর্নল্ড (ওয়েস্ট হ্যাম ইউনাইটেড/অস্ট্রেলিয়া), ক্যাটা কল (বার্সেলোনা/স্পেন), মেরি ইয়ারপস (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড/ইংল্যান্ড)।
মেয়েদের বর্ষসেরা কোচ: জোনাটান গিরাল্ডেজ (বার্সেলোনা), এমা হেইস (চেলসি), সারিনা উইগম্যান (ইংল্যান্ড)।
পুসকাস পুরস্কার: জুলিও এনসিসো (ব্রাইটন বনাম ম্যানচেস্টার সিটি ম্যাচ), গুইলহার্মে মাদ্রুগা (বোটাফোগো-এসপি বনাম নভোরিজোন্টিনো ম্যাচ)।